সুনামগঞ্জে ফের বন্যার পদধ্বনি, সিরাজগঞ্জে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে আনুমানিক ২০ দিন পর ফের বন্যার পদধ্বনির আশঙ্কা রয়েছে। জেলার অনেক জায়গাতেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বিঘি্নত হচ্ছে। বাড়ি ঘর মসজিদে পানি প্রবেশ করার ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এদিকে পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ৭৯ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকার নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট, ফতেহপুর মুক্তি খলাসহ অন্য এলাকার গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ার ফলে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার ১০০ মিটার সাব মারসিবল সড়ক প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজারে পানি ওঠেছে। বাজারের মসজিদের ভেতর পানি প্রবেশ করার ফলে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে বিঘœ ঘটছে। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের বালিজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘গত দুই দিনের বৃষ্টিপাতে হাওরসহ সব জায়গায় পানি বেড়েছে। আজ সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি অফিসসহ সব ক্লাসরুমে হাঁটু পানি। শিক্ষার্থীরা পানির ভেতরে ক্লাস করতে পারবে না। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরিয়া, বড়পাড়া, উত্তর আরপিননগর, জেল রোড, মাছ বাজার সবজি বাজার, নবীনগর, সুলতানপুর, প্লাবিত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় খাসিয়ামারা নদীর পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত করেছে। পানির কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের নিচু এলাকা নোয়াগাঁও, রণভূমিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।’ তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলার আনোয়াপুরবাজার এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়েছে।

গত বন্যায় হাওরে পানিতে ভরপুর থাকায় আজকে ঢলের পানি এসেই মানুষের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষদের শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান আবার পানি বৃদ্ধির ফলে আউশ ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান ইতোমধ্যেই সব ইউএনও দের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক চাল, শুকনো খাবার বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ওপর একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান ইতোমধ্যেই ২২০ মেট্রিক টন চাল প্রদান করেছেন।

যমুনার ভাঙনে বিলীন ঐতিহ্যবাহী তারকা মসজিদ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবার বিলীন হল ঐতিহ্যবাহী তারকা মসজিদ। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মনগ্রামের এই নান্দনিক মসজিদটি নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৫টি বসত ভিটা চলে যায় যমুনার গর্ভে। চোখের সামনে নামাজের ঘর বিলীন হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করেছেন, ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্টরা সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

পাউবো সূত্র জানিয়েছে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল ভোর থেকে হঠাৎ করে যমুনা নদীতে স্রোত ও ঘূর্ণাবর্ত্যরে সৃষ্টি হয়। দেখতে দেখতে নদী পাড়ে শুরু হয় ভাঙন। বিলীন হয়ে যায় তারকা জামে মসজিদের পূর্বাংশের প্রধান ফটক। এছাড়া মসজিদের বারান্দাসহ অর্ধেকের বেশি। এতে মুহূর্তের মধ্যে নদীর পাড়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। মসজিদের পাশে প্রায় ৪৫ মিটার এলাকায় এখন ভাঙন চলছে।

তবে এখনও ভাঙন ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পাউবো বলেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আক্ষেপ করেছেন। মসজিদের ইমাম হাফেজ জহুরুল ইসলাম জানান, গতকাল ফজরের নামাজ পড়েছি। হঠাৎ করে ভোর বেলা থেকে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী তারকা জামে মসজিদ। এতে ব্রাহ্মনগ্রামের মুসুল্লিদের হৃদয়ে প্রচ- রক্তক্ষরণ হয়েছে। নদীর পাড়ে প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে মসজিদটি দেখার জন্য মানুষরা নিয়মিত আসতো।

ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এদিকে খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া জানান, ব্রাহ্মনগ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ শুরু হয়েছে। তারপরও কেন এই ভাঙন। কাজের অগ্রগতি ও সঠিক তদারকির অভাবেই বারবার নদী পাড়ে ভাঙন। তারকা মসজিদসহ ব্রাহ্মনগ্রামের প্রায় অর্ধশত বসত ভিটা নদীতে চলে গেছে। এলাকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, চৌহালি উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকার ভাঙন আছে। তবে যে সব এলকায় বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে সেই এলাকায় ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভাঙনরোধে ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। তিনি আরও জানান চৌহালি নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে এটি পাস হলেই আগামী শুষ্ক মৌসুমে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।

মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ ১৪ জিলকদ ১৪৪৩

সুনামগঞ্জে ফের বন্যার পদধ্বনি, সিরাজগঞ্জে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

লতিফুর রহমান রাজু, (সুনামগঞ্জ)

image

সিরাজগঞ্জ : গতকাল এনায়েতপুর ব্রাহ্মনগ্রামের এই নান্দনিক মসজিদটি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে -সংবাদ

সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে আনুমানিক ২০ দিন পর ফের বন্যার পদধ্বনির আশঙ্কা রয়েছে। জেলার অনেক জায়গাতেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঠদান বিঘি্নত হচ্ছে। বাড়ি ঘর মসজিদে পানি প্রবেশ করার ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। এদিকে পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ৭৯ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকার নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট, ফতেহপুর মুক্তি খলাসহ অন্য এলাকার গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ার ফলে মানুষের কষ্ট বাড়ছে। সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার ১০০ মিটার সাব মারসিবল সড়ক প্লাবিত হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজারে পানি ওঠেছে। বাজারের মসজিদের ভেতর পানি প্রবেশ করার ফলে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে বিঘœ ঘটছে। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের বালিজুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘গত দুই দিনের বৃষ্টিপাতে হাওরসহ সব জায়গায় পানি বেড়েছে। আজ সকালে বিদ্যালয়ে এসে দেখি অফিসসহ সব ক্লাসরুমে হাঁটু পানি। শিক্ষার্থীরা পানির ভেতরে ক্লাস করতে পারবে না। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছি।’

সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার তেঘরিয়া, বড়পাড়া, উত্তর আরপিননগর, জেল রোড, মাছ বাজার সবজি বাজার, নবীনগর, সুলতানপুর, প্লাবিত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় খাসিয়ামারা নদীর পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত করেছে। পানির কারণে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের নিচু এলাকা নোয়াগাঁও, রণভূমিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এই মুহূর্তে তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।’ তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলের পানি ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলার আনোয়াপুরবাজার এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়েছে।

গত বন্যায় হাওরে পানিতে ভরপুর থাকায় আজকে ঢলের পানি এসেই মানুষের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষদের শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান আবার পানি বৃদ্ধির ফলে আউশ ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান ইতোমধ্যেই সব ইউএনও দের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক চাল, শুকনো খাবার বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ওপর একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান ইতোমধ্যেই ২২০ মেট্রিক টন চাল প্রদান করেছেন।

যমুনার ভাঙনে বিলীন ঐতিহ্যবাহী তারকা মসজিদ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবার বিলীন হল ঐতিহ্যবাহী তারকা মসজিদ। গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মনগ্রামের এই নান্দনিক মসজিদটি নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৫টি বসত ভিটা চলে যায় যমুনার গর্ভে। চোখের সামনে নামাজের ঘর বিলীন হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে এলাকাবাসী। তারা অভিযোগ করেছেন, ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্টরা সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

পাউবো সূত্র জানিয়েছে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল ভোর থেকে হঠাৎ করে যমুনা নদীতে স্রোত ও ঘূর্ণাবর্ত্যরে সৃষ্টি হয়। দেখতে দেখতে নদী পাড়ে শুরু হয় ভাঙন। বিলীন হয়ে যায় তারকা জামে মসজিদের পূর্বাংশের প্রধান ফটক। এছাড়া মসজিদের বারান্দাসহ অর্ধেকের বেশি। এতে মুহূর্তের মধ্যে নদীর পাড়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে যায়। মসজিদের পাশে প্রায় ৪৫ মিটার এলাকায় এখন ভাঙন চলছে।

তবে এখনও ভাঙন ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পাউবো বলেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আক্ষেপ করেছেন। মসজিদের ইমাম হাফেজ জহুরুল ইসলাম জানান, গতকাল ফজরের নামাজ পড়েছি। হঠাৎ করে ভোর বেলা থেকে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী তারকা জামে মসজিদ। এতে ব্রাহ্মনগ্রামের মুসুল্লিদের হৃদয়ে প্রচ- রক্তক্ষরণ হয়েছে। নদীর পাড়ে প্রায় বেশ কয়েক বছর ধরে মসজিদটি দেখার জন্য মানুষরা নিয়মিত আসতো।

ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এদিকে খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া জানান, ব্রাহ্মনগ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ শুরু হয়েছে। তারপরও কেন এই ভাঙন। কাজের অগ্রগতি ও সঠিক তদারকির অভাবেই বারবার নদী পাড়ে ভাঙন। তারকা মসজিদসহ ব্রাহ্মনগ্রামের প্রায় অর্ধশত বসত ভিটা নদীতে চলে গেছে। এলাকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, চৌহালি উপজেলার যমুনা তীরবর্তী এলাকার ভাঙন আছে। তবে যে সব এলকায় বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে সেই এলাকায় ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভাঙনরোধে ৪০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। তিনি আরও জানান চৌহালি নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য ৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে এটি পাস হলেই আগামী শুষ্ক মৌসুমে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।