পদ্মা সেতু ও গুজব

শুরু থেকেই পদ্মা সেতু তৈরি নিয়ে দেশে নানান রাজনৈতিক বির্তক তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ বলতো, এমন সেতু তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আবার কেউ কেউ দাবি করেন ‘এই সেতু হবে না, টিকবে না।’ আবার এমনো কথা শোনা গেছে, ‘জোড়াতালি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কেউ এই সেতুতে উঠতে যাবে না। কারণ, অনেক ঝুঁকি আছে।’ এক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, পদ্মা সেতু তৈরিতে ‘মানুষের মাথা লাগবে’। সেই কারণে ছেলে ধরা সন্দেহে কয়েকজন গণপিটুনিতে মারা যায়।

জানা গেছে, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ২০১৫ সালের ১ মার্চ নদীতে পশুর রক্ত ঢেলে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন। সেই সময় চীনা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপনের সময় নদীতে গরু ও খাসির রক্ত ঢালতে দেখা যায়। সঙ্গে ভাসিয়ে দেয়া হয় কয়েকটি মুরগিও। চীনাদের বিশ্বাস- বড় কাজের শুরুতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, এড়ানো যায় বড় দুর্ঘটনা। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের রক্তের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে একটি মহল মানুষের রক্তের ছবি বলে চালাতে থাকে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়, পদ্মা সেতু তৈরিতে ‘মানুষের মাথা’ লাগবে।

দেশব্যাপী চলা গুজবের মধ্যে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই নেত্রকোনায় এক যুবকের ব্যাগ থেকে একটি শিশুর মাথা পাওয়া যায়। সে সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়, ‘পদ্মা সেতুতে বলি দেয়ার জন্য ওই যুবক কাটা মাথা সংগ্রহ করছিল।’ পরে গণপিটুনিতে ওই যুবক নিহত হয়। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বড় আকারে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা হয় খোদ রাজধানীতে। ওই বছরের ২০ জুলাই সকালে উত্তর বাড্ডা এলাকায় তাসলিমা বেগম রেনু নামের এক নারী মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে গিয়েছিলেন। পথে তাকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। একইদিনে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। ওই জেলায় আরেক স্থানে পিটুনির শিকার হন এক নারী। টাঙ্গাইলের কালিহাতীর সয়াহাটে মিনু মিয়া নামে এক ব্যাক্তি মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়ে জনতার পিটুনিতে নিহত হন।

সারাদেশে এসব গুজবের ডাল-পালা যখন প্রসারিত হয় তখন এমন গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপপ্রচার চালালে আইনে শাস্তির বিধান থাকার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয় পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ। সে সময় ওই প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোন সত্যতা নেই।’ তিনি এমন অপপ্রচার আইনত দ-নীয় অপরাধ বলে জানান। সেই সঙ্গে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করেন।

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ , ১১ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

পদ্মা সেতু ও গুজব

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুরু থেকেই পদ্মা সেতু তৈরি নিয়ে দেশে নানান রাজনৈতিক বির্তক তৈরি হয়েছিল। কেউ কেউ বলতো, এমন সেতু তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আবার কেউ কেউ দাবি করেন ‘এই সেতু হবে না, টিকবে না।’ আবার এমনো কথা শোনা গেছে, ‘জোড়াতালি দিয়ে তাড়াহুড়ো করে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। কেউ এই সেতুতে উঠতে যাবে না। কারণ, অনেক ঝুঁকি আছে।’ এক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়, পদ্মা সেতু তৈরিতে ‘মানুষের মাথা লাগবে’। সেই কারণে ছেলে ধরা সন্দেহে কয়েকজন গণপিটুনিতে মারা যায়।

জানা গেছে, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ২০১৫ সালের ১ মার্চ নদীতে পশুর রক্ত ঢেলে পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন। সেই সময় চীনা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপনের সময় নদীতে গরু ও খাসির রক্ত ঢালতে দেখা যায়। সঙ্গে ভাসিয়ে দেয়া হয় কয়েকটি মুরগিও। চীনাদের বিশ্বাস- বড় কাজের শুরুতে পশু উৎসর্গের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, এড়ানো যায় বড় দুর্ঘটনা। এ নিয়ে গণমাধ্যমেও সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের রক্তের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে একটি মহল মানুষের রক্তের ছবি বলে চালাতে থাকে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়, পদ্মা সেতু তৈরিতে ‘মানুষের মাথা’ লাগবে।

দেশব্যাপী চলা গুজবের মধ্যে ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই নেত্রকোনায় এক যুবকের ব্যাগ থেকে একটি শিশুর মাথা পাওয়া যায়। সে সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়, ‘পদ্মা সেতুতে বলি দেয়ার জন্য ওই যুবক কাটা মাথা সংগ্রহ করছিল।’ পরে গণপিটুনিতে ওই যুবক নিহত হয়। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বড় আকারে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা হয় খোদ রাজধানীতে। ওই বছরের ২০ জুলাই সকালে উত্তর বাড্ডা এলাকায় তাসলিমা বেগম রেনু নামের এক নারী মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে গিয়েছিলেন। পথে তাকে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। একইদিনে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এক ব্যক্তি নিহত হন। ওই জেলায় আরেক স্থানে পিটুনির শিকার হন এক নারী। টাঙ্গাইলের কালিহাতীর সয়াহাটে মিনু মিয়া নামে এক ব্যাক্তি মাছ ধরার জাল কিনতে গিয়ে জনতার পিটুনিতে নিহত হন।

সারাদেশে এসব গুজবের ডাল-পালা যখন প্রসারিত হয় তখন এমন গুজব ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এ ধরনের অপপ্রচার চালালে আইনে শাস্তির বিধান থাকার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয় পদ্মা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষ। সে সময় ওই প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ পরিচালনায় মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি কুচক্রী মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এটি একটি গুজব। এর কোন সত্যতা নেই।’ তিনি এমন অপপ্রচার আইনত দ-নীয় অপরাধ বলে জানান। সেই সঙ্গে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ করেন।