সংক্রমণ, চতুর্থ ঢেউয়ের পথে

চতুর্থ ঢেউয়ের পথে করোনা সংক্রমণ। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সংক্রমণ হার এক থেকে ১৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মৃত্যুও বাড়ছে। সংক্রমণ বাড়লেও পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ও মাস্ক না পরলে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন তারা।

গত মাসের শেষের দিকে দেশে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশের কম ছিল। চলতি মাসের প্রথমদিকেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ। দীর্ঘদিন ধরেই করোনায় কারোর মৃত্যু খবন দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। গত কিছুদিন ধরে এক-দুইজন করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, মাস্ক না পরলে এবং যাদের করোনার উপসর্গ আছে তারা নমুনা পরীক্ষা না করালে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’

অনেকে জ¦র-সর্দিকে সাধারণ অসুখ মনে করে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা কম হওয়াতে সংক্রমণ আরও বাড়ছে।’

সবাইকে করোনা টিকার দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘টিকা করোনা ঠেকায় না; স্বাস্থ্য জটিলতা কমায়। কাজেই যারা এখনও দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ নেয়নি তাদের অবশ্যই তা নেয়া উচিত।’

এখন দৈনিক দু’তিনজনের মৃত্যু হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত বাড়তে থাকলে মৃত্যুও বাড়বে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত করোনা সংক্রান্ত বুলেটিনে বলা হয়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ৬৮০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এক হাজার ২৮০ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।

একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীর মধ্যে এক হাজার ৫১৩ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এদিন দেশের ৩৪ জেলায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জনে। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ১৪০ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনাক্ত রোগীর মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬৯ জন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ লাখ ছয় হাজার ৬৮৮ জন। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) প্রাদুর্ভাবে চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে রোগী শনাক্ত। এক পর্যায়ে দৈনিক শনাক্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতেই কমতে থাকে সংক্রমণ হার। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দৈনিক শনাক্ত হাজারের নিচে নেমে আসে। গত ৫ মে মাত্র চারজনের দেহে করোনা শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। শনাক্তের হারও এক শতাংশের কম ছিল। এরপর বেশ কিছুদিন কারো মৃত্যুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

সংক্রমণ, চতুর্থ ঢেউয়ের পথে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চতুর্থ ঢেউয়ের পথে করোনা সংক্রমণ। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সংক্রমণ হার এক থেকে ১৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মৃত্যুও বাড়ছে। সংক্রমণ বাড়লেও পরিস্থিতি খুব বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন না জনস্বাস্থ্যবিদরা। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ও মাস্ক না পরলে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন তারা।

গত মাসের শেষের দিকে দেশে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা শনাক্তের হার এক শতাংশের কম ছিল। চলতি মাসের প্রথমদিকেই বাড়তে থাকে সংক্রমণ। দীর্ঘদিন ধরেই করোনায় কারোর মৃত্যু খবন দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। গত কিছুদিন ধরে এক-দুইজন করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, মাস্ক না পরলে এবং যাদের করোনার উপসর্গ আছে তারা নমুনা পরীক্ষা না করালে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।’

অনেকে জ¦র-সর্দিকে সাধারণ অসুখ মনে করে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষা কম হওয়াতে সংক্রমণ আরও বাড়ছে।’

সবাইকে করোনা টিকার দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘টিকা করোনা ঠেকায় না; স্বাস্থ্য জটিলতা কমায়। কাজেই যারা এখনও দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজ নেয়নি তাদের অবশ্যই তা নেয়া উচিত।’

এখন দৈনিক দু’তিনজনের মৃত্যু হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত বাড়তে থাকলে মৃত্যুও বাড়বে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত করোনা সংক্রান্ত বুলেটিনে বলা হয়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ৬৮০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে করোনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এক হাজার ২৮০ জনের শরীরে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।

একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীর মধ্যে এক হাজার ৫১৩ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এদিন দেশের ৩৪ জেলায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। একদিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জনে। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ১৪০ জন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনাক্ত রোগীর মধ্যে একদিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৬৯ জন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ লাখ ছয় হাজার ৬৮৮ জন। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) প্রাদুর্ভাবে চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে রোগী শনাক্ত। এক পর্যায়ে দৈনিক শনাক্ত ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ফেব্রুয়ারিতেই কমতে থাকে সংক্রমণ হার। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দৈনিক শনাক্ত হাজারের নিচে নেমে আসে। গত ৫ মে মাত্র চারজনের দেহে করোনা শনাক্তের তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। শনাক্তের হারও এক শতাংশের কম ছিল। এরপর বেশ কিছুদিন কারো মৃত্যুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ।

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।