সামনে ঈদুল আজহা, চলছে পশুর হাটের প্রস্তুতি

ঈদুল আজহার আর বেশি দিন নেই। এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই জমে ওঠে কোরবানির পশুর হাট। ঈদের ১০-১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয় স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি। রাজধানীর প্রধান ও স্থায়ী গাবতলীর পশুর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মাঝে পশু কেনার কথা মাথায় নেই। কিন্ত এবার রমজানের পর থেকে গরুর দাম বাড়তি। কোরবানির হাটেও সেই প্রভাব থাকবে। পাশাপাশি সিলেট-সুনামগঞ্জ আর উত্তরাঞ্চলের বন্যার প্রভাবও পড়বে পশুর হাটে। অর্থাৎ গরুর দাম এবার বেশি হতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট সাজানো হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন নতুন অস্থায়ী শেড। আকর্ষণীয় ডিজাইনে সাজানো হচ্ছে প্রধান ফটক। বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য বুথ তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল ছাউনি। হাটের ভেতরের রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় কাদামাটি অপসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গণশৌচাগারের আশপাশে মাটি ফেলে তা ব্যবহার উপযোগী করার কাজও চলছে।

ভারতীয় গরু চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়ে গাবতলী হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী বাঘা জাফর বলেন, ২০ বছর ধরে এ হাটেই আছি। কিছু সময় গেছে, সে বছর হয়ত মূলধনের টাকাও তুলতে পারিনি। আবার কোন ঈদ গেছে দুই ঈদের আয় এক হাটেই করেছি। এবার ভালো দামের আশা করছি। তিনি বলেন, সিলেট থেকে গরু ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। জামালপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে দেশি ছোট সাইজের গরু কিনি। সেখানেও বন্যা। এবার গরুর চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই কম। তাই মহিষের দাম বাড়বে। সীমান্তে যদি গরু চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হয় তবে এবার ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাবেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রোর স্বাত্তাধিকারী মো. ইমরান হোসাইন সংবাদকে বলেন, ‘গতনুগতিক। এখন পর্যন্ত বেচা-কেনা ভালোই।’ পশুর দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় নাই কেউ পশুর দামের জন্য ঘুরে গেছে। আমার কাছে মনে হইছে ওভারওল মানুষ এখনও গরু কেনার কথাই মাথায় নেয় নাই।’

‘গত বছর এসময় আমাদের খামারে-খামারে যে পরিমাণ বেচা-কেনা হইছে এ বছর আমরা সে পরিমাণ কাক্সিক্ষত সেল এখনও পাই নাই বা দেখি নাই।’ বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে পশু বিক্রির ওপর প্রভাব পড়ে নাই। এবার বেচা-কেনা বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে কারণ সিলেটের ওই অঞ্চলের লোকজন ল-নে বসবাস করে। সেজন্য সেখানে একটা ল-ন থেকে ফান্ড আসার সম্ভবনা আছে। তা আসলে পশুর চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছি।’

গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোরবানির হাট নিয়ে কোন বিষয়েই গাফিলতির সুযোগ নেই। হাটে ব্যবসায়ীদের টাকা জমা দেয়ার ভোগান্তি কমাতে এবার কমপক্ষে ৫০টি হাসিল কাউন্টার তৈরি করা হবে। এছাড়া হাটে দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। গত কোরবানিতে হাসিল ছিল শতকরা সাড়ে তিন শতাংশ। তবে ঈদের পাঁচ দিন পাঁচ শতাংশ হাসিল আদায় করা হয়। একইভাবে এবারও হাসিল আদায় করা হবে।’

উল্লেখ্য, এ বছর রাজধানীতে মোট ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে দুটি হলো স্থায়ী হাট, যেগুলোতে বছরের অন্য সময়ও পশু বিক্রি হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে গাবতলী স্থায়ী হাট আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে সারুলিয়া স্থায়ী হাট। এই হাট দুটি ছাড়া ১৭টি অস্থায়ী হাট বসানো হবে।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

সামনে ঈদুল আজহা, চলছে পশুর হাটের প্রস্তুতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঈদুল আজহার আর বেশি দিন নেই। এই ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরই জমে ওঠে কোরবানির পশুর হাট। ঈদের ১০-১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয় স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলোর প্রস্তুতি। রাজধানীর প্রধান ও স্থায়ী গাবতলীর পশুর হাটে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মাঝে পশু কেনার কথা মাথায় নেই। কিন্ত এবার রমজানের পর থেকে গরুর দাম বাড়তি। কোরবানির হাটেও সেই প্রভাব থাকবে। পাশাপাশি সিলেট-সুনামগঞ্জ আর উত্তরাঞ্চলের বন্যার প্রভাবও পড়বে পশুর হাটে। অর্থাৎ গরুর দাম এবার বেশি হতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট সাজানো হচ্ছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন নতুন অস্থায়ী শেড। আকর্ষণীয় ডিজাইনে সাজানো হচ্ছে প্রধান ফটক। বসানো হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য বুথ তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশাল ছাউনি। হাটের ভেতরের রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় কাদামাটি অপসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে গণশৌচাগারের আশপাশে মাটি ফেলে তা ব্যবহার উপযোগী করার কাজও চলছে।

ভারতীয় গরু চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়ে গাবতলী হাটে আসা গরু ব্যবসায়ী বাঘা জাফর বলেন, ২০ বছর ধরে এ হাটেই আছি। কিছু সময় গেছে, সে বছর হয়ত মূলধনের টাকাও তুলতে পারিনি। আবার কোন ঈদ গেছে দুই ঈদের আয় এক হাটেই করেছি। এবার ভালো দামের আশা করছি। তিনি বলেন, সিলেট থেকে গরু ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। জামালপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে দেশি ছোট সাইজের গরু কিনি। সেখানেও বন্যা। এবার গরুর চাহিদা অনুযায়ী সাপ্লাই কম। তাই মহিষের দাম বাড়বে। সীমান্তে যদি গরু চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হয় তবে এবার ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাবেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রোর স্বাত্তাধিকারী মো. ইমরান হোসাইন সংবাদকে বলেন, ‘গতনুগতিক। এখন পর্যন্ত বেচা-কেনা ভালোই।’ পশুর দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় নাই কেউ পশুর দামের জন্য ঘুরে গেছে। আমার কাছে মনে হইছে ওভারওল মানুষ এখনও গরু কেনার কথাই মাথায় নেয় নাই।’

‘গত বছর এসময় আমাদের খামারে-খামারে যে পরিমাণ বেচা-কেনা হইছে এ বছর আমরা সে পরিমাণ কাক্সিক্ষত সেল এখনও পাই নাই বা দেখি নাই।’ বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘বন্যার কারণে পশু বিক্রির ওপর প্রভাব পড়ে নাই। এবার বেচা-কেনা বেশিও হতে পারে আবার কমও হতে পারে কারণ সিলেটের ওই অঞ্চলের লোকজন ল-নে বসবাস করে। সেজন্য সেখানে একটা ল-ন থেকে ফান্ড আসার সম্ভবনা আছে। তা আসলে পশুর চাহিদা বাড়বে বলে আশা করছি।’

গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোরবানির হাট নিয়ে কোন বিষয়েই গাফিলতির সুযোগ নেই। হাটে ব্যবসায়ীদের টাকা জমা দেয়ার ভোগান্তি কমাতে এবার কমপক্ষে ৫০টি হাসিল কাউন্টার তৈরি করা হবে। এছাড়া হাটে দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। গত কোরবানিতে হাসিল ছিল শতকরা সাড়ে তিন শতাংশ। তবে ঈদের পাঁচ দিন পাঁচ শতাংশ হাসিল আদায় করা হয়। একইভাবে এবারও হাসিল আদায় করা হবে।’

উল্লেখ্য, এ বছর রাজধানীতে মোট ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে দুটি হলো স্থায়ী হাট, যেগুলোতে বছরের অন্য সময়ও পশু বিক্রি হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে গাবতলী স্থায়ী হাট আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে সারুলিয়া স্থায়ী হাট। এই হাট দুটি ছাড়া ১৭টি অস্থায়ী হাট বসানো হবে।