মাদকের থাবা, শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও

‘মামলা-গ্রেপ্তার অভিযানে’ যখন মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না তখন বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান বহু ‘তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি’। একটি গবেষণা তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযান শুরুর পর চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত ৬০৬ মাদক কারবারি নিহত হয়। কিন্তু বিশেষ অভিযানও শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি বরং দেশে এখন নতুন নতুন মাদক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে এর আমদানিও বেড়েছে। ইয়াবা ফেনসিডিল, হেরোইনের বাজারের চেয়ে আইস, খাত, ক্রিস্টাল ম্যাথসহ নতুন নতুন মাদকের কারবার বেড়ে গেছে। শহর ছাড়িয়ে মাদক এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দখলে রেখেছে। এত অনুসন্ধানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান মতে, দেশে ৭.৫ থেকে ৮ মিলিয়ন মাদকাসক্ত রয়েছে। যার ৪৮ শতাংশই শিক্ষিত।

মাদকের ব্যবহার ও বিক্রির বিরুদ্ধে সোচ্ছার বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবছর নতুন নতুন প্রতিপাদ্য বিষয় সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে মাদকের ব্যবহার, পাচার এখন ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। আগে শহরকেন্দ্রিক মাদকের কারবার থাকলেও এখন নতুন নতুন কৌশলে মাদকের বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েই চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো থেকে মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও কার্যকরভাবে চাহিদা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এমন দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি বরং যেসব সংস্থা মাদক নির্মূলে কাজ করবে তারাই এখন মাদকের ব্যবসা ও সেবনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা বিভিন্ন অভিযানে দেখেছেন দেশের উচ্চবিত্তদের একটি বড় অংশ সরাসরি মাদক কারবারে জড়িত। তারা নিজেদের প্রয়োজনে এখন মাদক ব্যবসাকে নানাভাবে শেল্টার দিচ্ছেন। উচ্চবিত্তের যেসব ছেলে-মেয়ে বিদেশে যাচ্ছে পড়াশোনার জন্য সেখানে তারা নতুন নতুন মাদকে আসক্ত হয়ে সেগুলো আবার দেশে নিজেদের বন্ধু-বান্ধবের জন্য নিয়ে আসছেন। পাড়া-মহল্লায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মাদকের আখড়া গড়ে তোলা হচ্ছে। যেহেতু মাদকের ব্যাপক একটি চাহিদা রয়েছে তাই অল্প সময়ে বিপুল অর্থ রোজগারের জন্য এটিকে এখন পেশাদার ব্যবহায়ী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। এমপি, মন্ত্রী, সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ছেলে মেয়েরা নানাভাবে মাদক ব্যবসায় শেল্টার দিচ্ছেন, অর্থ বিনিয়োগ করছেন।

বেসরকারি গবেষণা বলছে, প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটির বেশি অর্থ মাদকের বেচাকেনায় লেনদেন হচ্ছে। দেশে আড়াই হাজারের বেশি মাদকের কারবারি সক্রিয় রয়েছে। ৭০ লাখেরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। তবে এটি সরকারি কোন হিসাব নয়। আর এ বিষয়ে সরকারি কোন গবেষণাও নেই। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলেও সেটি হঠাৎ থমকে গেছে বলেছে মাদকবিরোধী জোটগুলো। আর করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে মাদকের হোম ডেলিভারি বেড়ে গেছে বলেও বলছেন গবেষকরা। মাদকের বিস্তার ঠেকাতে ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযান শুরুর পর চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬০৬ সন্দেহভাজন মাদক কারবারি মারা যায়।

মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বলছে, গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ একাধিক সংস্থা মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন। ২০২০ সালে ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। একাধিক অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মারা যান শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। কিন্তু মাদকের অবাইদ চোরাচালান বন্ধ হয়নি বরং মাদক চোরাচালানে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন মাদক কারবারিরা। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মাদকের আসক্তি থাকলেও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, রাজনিতিতে যুক্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবখানে মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এমনকি বাসাবাড়িতে মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকে উঠতি বয়সীদের মধ্যে আসক্তি বেশি দেখা গেছে গবেষণায়। চিকিৎসক, আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে মাদক সেবনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী ও শিশুদের মধ্যে মাদকের বিস্তার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মাদকের জেরে পারিবারিক কলহ, খুন, ধর্ষণ, ডাকতি, ছিনতাইসহ অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। একাধিক গবেষণায় অপরাধের জন্য মাদককে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাদকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলেও সেটি অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে মাদকের বিস্তার ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এখন মাদক কারবারিরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মাদকের বেচাকেনা করছে। এমনকি তারা মাদকের হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে। এটি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। ‘বাংলাদেশে মাদকের অবাধ বিস্তার, মাদকসেবীদের সঠিক পরিসংখ্যান, মাদক ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত, কি কারণে মাদকের বিস্তার বাড়ছে এসব নিয়ে সরকারি কোন গবেষণা নেই। কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা গবেষণা করলেও সেখানে প্রকৃত চিত্র আসছে না।

ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি দেখা গেছে, গত ২ বছরে করোনায় দেশে মাদকের বিস্তার বেড়েছে। অথাৎ স্কুল, কলেজ বন্ধ। খেলাধুলা, সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। ছেলে-মেয়েরা বাসায় গৃহবন্দী থেকে সারাদিন মোবাইলে সময় কাটাচ্ছেন। এসব কারণে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন

গতকাল ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২০২১ সালে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্ধ করে ২১ হাজার ৯৯২ জনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার ৫৯২টি মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাদকের চাহিদা কমাতে পরিচালিত মাদকবিরোধী গতানুগতিক প্রচার কার্যক্রমের পরিবর্তে অধিদপ্তর সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

মায়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য আসছে, সেখানে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইয়াবা ও আইস নামে একটি ভয়ংকর মাদক মায়ানমার থেকে এসেছে। মায়ানমারকে আমরা বহু অনুরোধ করেছি, তারা অনেক কথা বলে কিন্তু কোনটাই তারা কার্যকর করে না। প্রতিশ্রুতি অনেক কিছুই দেন কিন্তু কোনটাই কার্যকর করে না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকেই মায়নমার থেকে ইয়াবা আনছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ইয়াবা আনার চেষ্টা করছে।

সোমবার, ২৭ জুন ২০২২ , ১৩ আষাড় ১৪২৮ ২৫ জিলকদ ১৪৪৩

মাদকের থাবা, শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘মামলা-গ্রেপ্তার অভিযানে’ যখন মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না তখন বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান বহু ‘তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি’। একটি গবেষণা তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযান শুরুর পর চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত ৬০৬ মাদক কারবারি নিহত হয়। কিন্তু বিশেষ অভিযানও শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি বরং দেশে এখন নতুন নতুন মাদক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে এর আমদানিও বেড়েছে। ইয়াবা ফেনসিডিল, হেরোইনের বাজারের চেয়ে আইস, খাত, ক্রিস্টাল ম্যাথসহ নতুন নতুন মাদকের কারবার বেড়ে গেছে। শহর ছাড়িয়ে মাদক এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল দখলে রেখেছে। এত অনুসন্ধানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান মতে, দেশে ৭.৫ থেকে ৮ মিলিয়ন মাদকাসক্ত রয়েছে। যার ৪৮ শতাংশই শিক্ষিত।

মাদকের ব্যবহার ও বিক্রির বিরুদ্ধে সোচ্ছার বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিবছর নতুন নতুন প্রতিপাদ্য বিষয় সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে মাদকের ব্যবহার, পাচার এখন ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। আগে শহরকেন্দ্রিক মাদকের কারবার থাকলেও এখন নতুন নতুন কৌশলে মাদকের বিক্রি ও ব্যবহার বেড়েই চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলো থেকে মাদকের চাহিদা কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও কার্যকরভাবে চাহিদা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এমন দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি বরং যেসব সংস্থা মাদক নির্মূলে কাজ করবে তারাই এখন মাদকের ব্যবসা ও সেবনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা বিভিন্ন অভিযানে দেখেছেন দেশের উচ্চবিত্তদের একটি বড় অংশ সরাসরি মাদক কারবারে জড়িত। তারা নিজেদের প্রয়োজনে এখন মাদক ব্যবসাকে নানাভাবে শেল্টার দিচ্ছেন। উচ্চবিত্তের যেসব ছেলে-মেয়ে বিদেশে যাচ্ছে পড়াশোনার জন্য সেখানে তারা নতুন নতুন মাদকে আসক্ত হয়ে সেগুলো আবার দেশে নিজেদের বন্ধু-বান্ধবের জন্য নিয়ে আসছেন। পাড়া-মহল্লায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মাদকের আখড়া গড়ে তোলা হচ্ছে। যেহেতু মাদকের ব্যাপক একটি চাহিদা রয়েছে তাই অল্প সময়ে বিপুল অর্থ রোজগারের জন্য এটিকে এখন পেশাদার ব্যবহায়ী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। এমপি, মন্ত্রী, সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ছেলে মেয়েরা নানাভাবে মাদক ব্যবসায় শেল্টার দিচ্ছেন, অর্থ বিনিয়োগ করছেন।

বেসরকারি গবেষণা বলছে, প্রতিবছর ৫০ হাজার কোটির বেশি অর্থ মাদকের বেচাকেনায় লেনদেন হচ্ছে। দেশে আড়াই হাজারের বেশি মাদকের কারবারি সক্রিয় রয়েছে। ৭০ লাখেরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে। তবে এটি সরকারি কোন হিসাব নয়। আর এ বিষয়ে সরকারি কোন গবেষণাও নেই। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলেও সেটি হঠাৎ থমকে গেছে বলেছে মাদকবিরোধী জোটগুলো। আর করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে মাদকের হোম ডেলিভারি বেড়ে গেছে বলেও বলছেন গবেষকরা। মাদকের বিস্তার ঠেকাতে ২০১৮ সালে বিশেষ অভিযান শুরুর পর চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৬০৬ সন্দেহভাজন মাদক কারবারি মারা যায়।

মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বলছে, গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ একাধিক সংস্থা মাদকবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন। ২০২০ সালে ইয়াবার বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু করে র‌্যাব। একাধিক অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় মারা যান শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। কিন্তু মাদকের অবাইদ চোরাচালান বন্ধ হয়নি বরং মাদক চোরাচালানে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন মাদক কারবারিরা। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে মাদকের আসক্তি থাকলেও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, রাজনিতিতে যুক্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সবখানে মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস এমনকি বাসাবাড়িতে মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকে উঠতি বয়সীদের মধ্যে আসক্তি বেশি দেখা গেছে গবেষণায়। চিকিৎসক, আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে মাদক সেবনের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী ও শিশুদের মধ্যে মাদকের বিস্তার প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মাদকের জেরে পারিবারিক কলহ, খুন, ধর্ষণ, ডাকতি, ছিনতাইসহ অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। একাধিক গবেষণায় অপরাধের জন্য মাদককে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মাদকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলেও সেটি অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে মাদকের বিস্তার ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এখন মাদক কারবারিরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মাদকের বেচাকেনা করছে। এমনকি তারা মাদকের হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করেছে। এটি নিয়ন্ত্রণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়াতে হবে। ‘বাংলাদেশে মাদকের অবাধ বিস্তার, মাদকসেবীদের সঠিক পরিসংখ্যান, মাদক ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত, কি কারণে মাদকের বিস্তার বাড়ছে এসব নিয়ে সরকারি কোন গবেষণা নেই। কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা গবেষণা করলেও সেখানে প্রকৃত চিত্র আসছে না।

ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি দেখা গেছে, গত ২ বছরে করোনায় দেশে মাদকের বিস্তার বেড়েছে। অথাৎ স্কুল, কলেজ বন্ধ। খেলাধুলা, সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। ছেলে-মেয়েরা বাসায় গৃহবন্দী থেকে সারাদিন মোবাইলে সময় কাটাচ্ছেন। এসব কারণে মাদকের ব্যবহার বেড়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বললেন

গতকাল ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ২০২১ সালে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্ধ করে ২১ হাজার ৯৯২ জনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার ৫৯২টি মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাদকের চাহিদা কমাতে পরিচালিত মাদকবিরোধী গতানুগতিক প্রচার কার্যক্রমের পরিবর্তে অধিদপ্তর সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছে ।

মায়ানমার থেকে মাদকদ্রব্য আসছে, সেখানে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইয়াবা ও আইস নামে একটি ভয়ংকর মাদক মায়ানমার থেকে এসেছে। মায়ানমারকে আমরা বহু অনুরোধ করেছি, তারা অনেক কথা বলে কিন্তু কোনটাই তারা কার্যকর করে না। প্রতিশ্রুতি অনেক কিছুই দেন কিন্তু কোনটাই কার্যকর করে না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকেই মায়নমার থেকে ইয়াবা আনছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে ইয়াবা আনার চেষ্টা করছে।