‘ডিবি পরিচয়ে’ ব্যাংকে লেনদেনকারী গ্রাহকদের তুলে নিয়ে যেত তারা

আসল ডিবির অভিযানে ভুয়া ডিবির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

বাইরে ডিবির পোশাক পরে মাইক্রোবাসে অপেক্ষায় থাকতো ডিবি। তাদের লোকজন গ্রাহক সেজে ব্যাংকে ঢুকে দেখতো কোন ব্যক্তি নগদ টাকা ব্যাংক থেকে তুলছে। এরপর টার্গেট করে ওই ব্যক্তির তথ্য দিলে বাইরে থাকা পোশাকধারী ডিবির সদস্যরা তুলে নিয়ে যেত। এরপর হাতিয়ে নিত সবকিছু। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ডিবির এমন দৌরাত্ম্যের অভিযোগ পেয়ে আসছিল আসল ডিবি। এরপর অভিযানে নেমে একটি চক্রের দলনেতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ দলনেতা ফরিদ উদ্দিন (৫০), সহযোগী মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ইসলাম নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা তিনটি জ্যাকেট, একটি হাতকড়া, একটি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), দুটি হোলস্টার, তিনটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি (খেলনা), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক বই, একটি নোয়াহ্ মাইক্রোবাস ও একটি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসল ডিবি জানতে পেরেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধ করে আসছিল। প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে তারা ডিবি পরিচয়ে টার্গেট করে মানুষের কাছ থেকে টাকা ও মালামাল যা পেত সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন, তাদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে নগদ টাকা লুট করছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল। সুনির্দিষ্ট এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড এলাকায় আসল ডিবির নতুন পোশাক পরে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির কাজে জড়িত দলের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা লেনদেনকারীদের কৌশলে অনুসরণ করতো। অধিক টাকা লেনদেনকারী ও সহজ-সরল গ্রাহকদের টার্গেট করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বাইরে অপেক্ষমাণ ডাকাত দলের সদস্যদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতো।

‘এরপর টার্গেট করা ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বের হওয়া পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করতো দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি বাইরে আসামাত্র ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যেত তারা।’ ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও অন্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিত চক্রটি। এরপর রাস্তা সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি থেকে তাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামিম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। আদালতে শুনানি শেষে ২ দিনের রিমান্ড পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এ চক্রটির দলনেতা ফরিদ উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, মাদারীপুর ও কুমিল্লা জেলায় ৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ চক্রটি ব্যাংক কেন্দ্রীক গ্রাহকদের টার্গেট করতো বেশি। পাশাপাশি এরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়েও ডিবি পরিচয়ে নানা ধরনের অপরাধ করতো। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রে আরও কারো সম্পৃক্তত আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে।

মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট ২০২২ , ১৮ শ্রাবণ ১৪২৯ ৩ মহররম ১৪৪৪

‘ডিবি পরিচয়ে’ ব্যাংকে লেনদেনকারী গ্রাহকদের তুলে নিয়ে যেত তারা

আসল ডিবির অভিযানে ভুয়া ডিবির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাইরে ডিবির পোশাক পরে মাইক্রোবাসে অপেক্ষায় থাকতো ডিবি। তাদের লোকজন গ্রাহক সেজে ব্যাংকে ঢুকে দেখতো কোন ব্যক্তি নগদ টাকা ব্যাংক থেকে তুলছে। এরপর টার্গেট করে ওই ব্যক্তির তথ্য দিলে বাইরে থাকা পোশাকধারী ডিবির সদস্যরা তুলে নিয়ে যেত। এরপর হাতিয়ে নিত সবকিছু। দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ডিবির এমন দৌরাত্ম্যের অভিযোগ পেয়ে আসছিল আসল ডিবি। এরপর অভিযানে নেমে একটি চক্রের দলনেতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ দলনেতা ফরিদ উদ্দিন (৫০), সহযোগী মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ইসলাম নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা তিনটি জ্যাকেট, একটি হাতকড়া, একটি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), দুটি হোলস্টার, তিনটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি (খেলনা), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক বই, একটি নোয়াহ্ মাইক্রোবাস ও একটি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

ডিবি জানিয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসল ডিবি জানতে পেরেছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ডিবি পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধ করে আসছিল। প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। একেক সময় একেক এলাকায় গিয়ে তারা ডিবি পরিচয়ে টার্গেট করে মানুষের কাছ থেকে টাকা ও মালামাল যা পেত সেগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন, তাদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে নগদ টাকা লুট করছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল। সুনির্দিষ্ট এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড এলাকায় আসল ডিবির নতুন পোশাক পরে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির কাজে জড়িত দলের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবির মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা লেনদেনকারীদের কৌশলে অনুসরণ করতো। অধিক টাকা লেনদেনকারী ও সহজ-সরল গ্রাহকদের টার্গেট করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বাইরে অপেক্ষমাণ ডাকাত দলের সদস্যদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হতো।

‘এরপর টার্গেট করা ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বের হওয়া পর্যন্ত তাকে অনুসরণ করতো দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি বাইরে আসামাত্র ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যেত তারা।’ ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও অন্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিত চক্রটি। এরপর রাস্তা সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি থেকে তাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামিম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। আদালতে শুনানি শেষে ২ দিনের রিমান্ড পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এ চক্রটির দলনেতা ফরিদ উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, মাদারীপুর ও কুমিল্লা জেলায় ৭টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ চক্রটি ব্যাংক কেন্দ্রীক গ্রাহকদের টার্গেট করতো বেশি। পাশাপাশি এরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়েও ডিবি পরিচয়ে নানা ধরনের অপরাধ করতো। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রে আরও কারো সম্পৃক্তত আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে।