বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনে বড় অঘটন

সৌদি আরবের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের অভিযান শুরু করলো আসরের অন্যতম ফেবারিট মেসির আর্জেন্টিনা। ঐতিহাসিক এ জয়ে সৌদি খেলোয়াড়রা বুঝিয়ে দিলেন, নাম নয়, মাঠে নেমে খেলাটাই আসল।

গতকাল লুসাইল আইকন স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে মেসির দল ২-১ গোলে পরাজিত হয়। প্রথমার্ধে মেসির পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পর পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করেন সৌদি আরবের সালেহ আলশেহরি ও সালেম

আলদাওশারি।

সৌদির রক্ষণে বার বার আটকে গেলেন মেসি, ডি মারিয়ারা। অনবদ্য সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাকে টপকাতে পারলেন না আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। নিজেদের সবটা নিড়ে দিলেন সৌদির ফুটবলাররা।

ম্যাচের শুরুটা ভালো করে আর্জেন্টিনা। নিজেদের মধ্যে বল ধরে ছোট ছোট পাসে উঠছিলেন মেসিরা। তার ফলে সুযোগও তৈরি হয়। প্রথম ২ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্তে বল পেয়ে বক্সের কাছে এসে মার্টিনেজের দিকে বাড়ান ডি মারিয়া। মার্টিনেজের ব্যাক হিল ধরে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করার চেষ্টা করেন মেসি। কিন্তু গোড়ালির দিকে বল লাগায় ঠিক জায়গায় বল যায়নি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন সৌদির গোলরক্ষক।

তাতে অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। গোল করতে কোন ভুল করেননি মেসি। প্রথমার্ধে আরও তিনটি গোল হতে পারতো আর্জেন্টিনার। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হলো সেগুলো। প্রথমে ২২ মিনিটের মাথায় সৌদি আরবের জালে বল জড়ান মেসি। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তোলেন। মেসির উদ্দেশে যখন বল বাড়ানো হয়েছিল, তখনই অল্পের জন্য অফসাইডের ফাঁদে ছিলেন তিনি পাঁচ মিনিট পরে আরও এক বার গোলে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা। এ বার গোল করেন মার্টিনেজ। প্রথমে গোল দিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে দেখা যায় অফসাইডে ছিলেন মার্টিনেজ। একটু আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলছিল সৌদি আরব। মেসিকে জোনাল মার্কিংয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তারা। তাই বার বার জায়গা বদল করে খেলছিলেন মেসি। ৩৪ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে আবার গোল করেন মার্টিনেজ। কিন্তু সেটিও অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। প্রথমার্ধেই অফসাইডের কারণে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়। লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধে ১০ মিনিটেই জোড়া গোল করে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে ৪৮ মিনিটের মাথায় গোল করেন সালে আলশেহরি। সমতা ফেরায় সৌদি আরব। গোল করার পরে খেলার ধরন পুরোপুরি বদলে যায় সৌদি আরবের। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে তারা। প্রথম গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল খায় আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন সালেম আলদাওশারি। ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়েন মেসিরা।

গোল শোধ করার অনেক চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। বার বার সৌদির সীমানায় উঠে যাছিল মেসির বাহিনী। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না। সৌদির ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনা।

গোলপোস্টের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন গোলরক্ষক আলওয়াইসি। বেশ কয়েকটি ভালো শট বাঁচান তিনি। সময় যত এগোচ্ছিল, তত চাপ বাড়ছিল আর্জেন্টিনার উপর।

শেষ দিকে বক্সের মধ্যে ঢুকে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোল আসেনি। পায়ে বেশিক্ষণ বল রাখার খেসারত দিলেন মেসিরা। সেই সঙ্গে অজস্র অফসাইডের ফাঁদে আটকে পড়লেন মার্টিনেজরা। অতিরিক্ত সময়ে গোললাইন সেভ করেন সৌদির ফুটবলার। শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের।

এর আগেও একাধিক বার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। তার মধ্যে এক বার তারা উঠেছে ফাইনালেও। তবে সৌদি আরবের মতো ফিফা ক্রমতালিকায় এত নীচে থাকা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হার যে আর্জেন্টিনার আত্মবিশ্বাসে অনেকটা ধাক্কা দেবে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ২-৩ হেরে বিদায় নেয় তারা। সে বার শুরু থেকেই নকআউটে খেলা হয়। আর্জেন্টিনা হারে প্রথম ম্যাচেই। এর পর ১৯৫০ এবং ১৯৬৪ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৫৮ সালেও প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় তারা। পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-৩ গোলে হারে তারা।

১৯৭৪ সালে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ২-৩ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮২ বিশ্বকাপে তারা প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ০-১ ব্যবধানে হারে। ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ সালে ট্রফিজয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে বার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেই হারের ধাক্কা সামলে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যান ম্যারাডোনারা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে ফাইনালে হারতে হয়, যে ম্যাচকে অনেকেই মনে করেন জোর করে হারানো হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। সেই শেষ বার বিশ্বকাপে হারে আর্জেন্টিনা। গত বার তারা প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার আবার হারতে হল নীল-সাদা জার্সিধারীদের।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনে বড় অঘটন

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

টেলিভিশনে দর্শকরা দেখলেন আর্জেন্টিনার পরাজয়ে কাঁদলেন মেসি

সৌদি আরবের কাছে লজ্জাজনক পরাজয় দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের অভিযান শুরু করলো আসরের অন্যতম ফেবারিট মেসির আর্জেন্টিনা। ঐতিহাসিক এ জয়ে সৌদি খেলোয়াড়রা বুঝিয়ে দিলেন, নাম নয়, মাঠে নেমে খেলাটাই আসল।

গতকাল লুসাইল আইকন স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে মেসির দল ২-১ গোলে পরাজিত হয়। প্রথমার্ধে মেসির পেনাল্টি গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বিরতির পর পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করেন সৌদি আরবের সালেহ আলশেহরি ও সালেম

আলদাওশারি।

সৌদির রক্ষণে বার বার আটকে গেলেন মেসি, ডি মারিয়ারা। অনবদ্য সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাকে টপকাতে পারলেন না আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। নিজেদের সবটা নিড়ে দিলেন সৌদির ফুটবলাররা।

ম্যাচের শুরুটা ভালো করে আর্জেন্টিনা। নিজেদের মধ্যে বল ধরে ছোট ছোট পাসে উঠছিলেন মেসিরা। তার ফলে সুযোগও তৈরি হয়। প্রথম ২ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্তে বল পেয়ে বক্সের কাছে এসে মার্টিনেজের দিকে বাড়ান ডি মারিয়া। মার্টিনেজের ব্যাক হিল ধরে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করার চেষ্টা করেন মেসি। কিন্তু গোড়ালির দিকে বল লাগায় ঠিক জায়গায় বল যায়নি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন সৌদির গোলরক্ষক।

তাতে অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। গোল করতে কোন ভুল করেননি মেসি। প্রথমার্ধে আরও তিনটি গোল হতে পারতো আর্জেন্টিনার। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হলো সেগুলো। প্রথমে ২২ মিনিটের মাথায় সৌদি আরবের জালে বল জড়ান মেসি। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তোলেন। মেসির উদ্দেশে যখন বল বাড়ানো হয়েছিল, তখনই অল্পের জন্য অফসাইডের ফাঁদে ছিলেন তিনি পাঁচ মিনিট পরে আরও এক বার গোলে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা। এ বার গোল করেন মার্টিনেজ। প্রথমে গোল দিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে দেখা যায় অফসাইডে ছিলেন মার্টিনেজ। একটু আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলছিল সৌদি আরব। মেসিকে জোনাল মার্কিংয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তারা। তাই বার বার জায়গা বদল করে খেলছিলেন মেসি। ৩৪ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে আবার গোল করেন মার্টিনেজ। কিন্তু সেটিও অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। প্রথমার্ধেই অফসাইডের কারণে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়। লিড নিয়ে বিরতিতে যায় মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধে ১০ মিনিটেই জোড়া গোল করে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে ৪৮ মিনিটের মাথায় গোল করেন সালে আলশেহরি। সমতা ফেরায় সৌদি আরব। গোল করার পরে খেলার ধরন পুরোপুরি বদলে যায় সৌদি আরবের। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে তারা। প্রথম গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল খায় আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন সালেম আলদাওশারি। ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়েন মেসিরা।

গোল শোধ করার অনেক চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। বার বার সৌদির সীমানায় উঠে যাছিল মেসির বাহিনী। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না। সৌদির ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনা।

গোলপোস্টের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন গোলরক্ষক আলওয়াইসি। বেশ কয়েকটি ভালো শট বাঁচান তিনি। সময় যত এগোচ্ছিল, তত চাপ বাড়ছিল আর্জেন্টিনার উপর।

শেষ দিকে বক্সের মধ্যে ঢুকে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও গোল আসেনি। পায়ে বেশিক্ষণ বল রাখার খেসারত দিলেন মেসিরা। সেই সঙ্গে অজস্র অফসাইডের ফাঁদে আটকে পড়লেন মার্টিনেজরা। অতিরিক্ত সময়ে গোললাইন সেভ করেন সৌদির ফুটবলার। শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের।

এর আগেও একাধিক বার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। তার মধ্যে এক বার তারা উঠেছে ফাইনালেও। তবে সৌদি আরবের মতো ফিফা ক্রমতালিকায় এত নীচে থাকা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হার যে আর্জেন্টিনার আত্মবিশ্বাসে অনেকটা ধাক্কা দেবে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ২-৩ হেরে বিদায় নেয় তারা। সে বার শুরু থেকেই নকআউটে খেলা হয়। আর্জেন্টিনা হারে প্রথম ম্যাচেই। এর পর ১৯৫০ এবং ১৯৬৪ সালে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৫৮ সালেও প্রথম ম্যাচেই হেরে যায় তারা। পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-৩ গোলে হারে তারা।

১৯৭৪ সালে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ২-৩ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮২ বিশ্বকাপে তারা প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ০-১ ব্যবধানে হারে। ১৯৮৬ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ সালে ট্রফিজয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে বার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেই হারের ধাক্কা সামলে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যান ম্যারাডোনারা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে ফাইনালে হারতে হয়, যে ম্যাচকে অনেকেই মনে করেন জোর করে হারানো হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। সেই শেষ বার বিশ্বকাপে হারে আর্জেন্টিনা। গত বার তারা প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার আবার হারতে হল নীল-সাদা জার্সিধারীদের।