বঙ্গবন্ধু টানেল : দ্বার খুলবে ২৯ অক্টোবর

চট্টগ্রামে বহু প্রতীক্ষার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ অক্টোবর। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকালে ১০টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেয়া হবে।

গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। মনজুর হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায় প্রায় হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পরদিন থেকে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং স্টেশনের কথা বলা হয়েছে, সেটা করতে পারব, জায়গা রয়েছে। অপারেশনে যারা রয়েছেন, মেইটেনেন্স যারা করবেন তাদের নিজস্ব যানবাহন থাকবে। প্রথম দিকে অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।

ওয়ান সিটি টু টাউনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ান সিটি টু টাউনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুই বছর ধরে যা দেখছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন দেখা যায়।

নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠা- এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজেটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে, আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কি না, শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কি না, ট্যুরিজমে ডেভেলপ ঘটাতে পারছি কি না। সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে সেই উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। সেটাই মূল বিষয়। ওয়ান সিটি টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।

তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনজুর হোসেন বলেন, কোন কোন যানবাহন টানেলে চলবে তা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। টানেলের যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।

ভেতরে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কীভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে, টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

কর্ণফুলী নদীর দুইপারে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণকাজ করছে চীনের কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২৯ ভাদ্র ১৪৩০, ২৭ সফর ১৪৪৫

বঙ্গবন্ধু টানেল : দ্বার খুলবে ২৯ অক্টোবর

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

চট্টগ্রামে বহু প্রতীক্ষার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ অক্টোবর। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে উদ্বোধন করবেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকালে ১০টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল খুলে দেয়া হবে।

গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সভার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। মনজুর হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীর জন্য গর্ব নয়, জাতির জন্যও অনেক গর্বের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় টানেল এখন প্রায় প্রায় হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধন করার পরদিন থেকে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, টানেল উদ্বোধনের পরও আমাদের কার্যক্রম চলবে। পুলিশের পক্ষ থেকে ফাঁড়ি, ডাম্পিং স্টেশনের কথা বলা হয়েছে, সেটা করতে পারব, জায়গা রয়েছে। অপারেশনে যারা রয়েছেন, মেইটেনেন্স যারা করবেন তাদের নিজস্ব যানবাহন থাকবে। প্রথম দিকে অন্যদের সাপোর্ট নিয়ে সবার সমন্বয়ে কাজগুলো এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।

ওয়ান সিটি টু টাউনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়ান সিটি টু টাউনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পতেঙ্গার এক পাশে আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আরও করা হচ্ছে। আনোয়ারা প্রান্তে পৌনে দুই বছর ধরে যা দেখছি, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চোখের সামনে সেই পরিবর্তন দেখা যায়।

নগরীকে যদি আনোয়ারার ওই প্রান্তে শিফট করা যায় তাহলে এদিকে চাপ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প কারখানা গড়ে উঠা- এগুলোই তো মূল লক্ষ্য। একটি দেশের উন্নয়নে জিডিপিতে পজেটিভ প্রভাব যেটা থাকে সেটা হচ্ছে, আমরা সময় বাঁচাতে পারছি কি না, শিল্প উন্নয়ন ঘটাতে পারছি কি না, ট্যুরিজমে ডেভেলপ ঘটাতে পারছি কি না। সব কিছু মিলিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে সেই উন্নয়নটা দেখা যাচ্ছে। সেটাই মূল বিষয়। ওয়ান সিটি টাউনের কনসেপ্টটা সেখান থেকেই এসেছে।

তিন চাকার গাড়ি চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনজুর হোসেন বলেন, কোন কোন যানবাহন টানেলে চলবে তা নির্ধারিত করা হয়েছে। টোলও নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। টানেলের যে ডিজাইন করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চলতে পারবে। টানেলের কনসেপ্টটা আমাদের কাছে নতুন। সেজন্য এটার কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।

ভেতরে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য রেসকিউ কীভাবে হবে? সেটা অন্য ব্রিজ বা সড়ক থেকে আলাদা। সেক্ষেত্রে আমাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করতে হচ্ছে, টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা ব্যবহার করবে তারাও নিরাপদ থাকবে। সেই ধারণা থেকে এই মুহূর্তে দুই বা তিন চাকার গাড়ির জন্য এটা নিরাপদ হবে না বলে আমি মনে করি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ ও আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

কর্ণফুলী নদীর দুইপারে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণকাজ করছে চীনের কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।