ছাত্রী ও পার্লার কর্মী ধর্ষণের শিকার

কুড়িগ্রামে এক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণ ও পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে এক বিউটি পার্লারকর্মী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। উভয় ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৭ম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে নাজমুল ইসলাম নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে বিকৃত কামড় ও ক্ষতবিক্ষত করে রাতভর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটলেও অভিযোগকারীর পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও মামলা করাতে বিলম্ব হয়। গতকাল দুপুরে নাজমুলসহ দুইজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছে নির্যাতিতা মেয়েটি খালা। এ ঘটনায় ফুলবাড়ীতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক উমর আলী, আশরাফ আলী ব্যাপারী, আবদুস ছালাম ও শমসের আলী জানান, ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর মোল্লাটারী গ্রামের জনৈক খবিজলের পূত্র নাজমুল ইসলাম প্রায় সময় উত্যক্ত করত মেয়েটিকে। এলাকাবাসী ও মেয়েটির পরিবার এ নিয়ে নাজমুলের পরিবারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। মেয়েটির বাবা-মা অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লিতে একটি ইটভাটায় কাজ করতে যায়। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে তারা অবস্থান করছেন। ভুক্তভোগী মেয়েটি তার খালার বাসায় থেকে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে খালার অনুপস্থিতিতে নাজমুল বাড়িটিতে প্রবেশ করে। এ সময় মেয়েটি টিভি দেখছিল। এই সুযোগে মেয়েটির সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে তাকে একাধিকবার পাশবিক নির্যাতন করে মেয়েটিকে রক্তাক্ত জখম করে সে। পরে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পরলে নাজমুল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটির খালাসহ পরিবারের লোকজন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বাইরে নেয়ার চেষ্টা করলে নাজমুল ও তার পরিবার এতে বাধা দেয়। মেয়েটির পরিবার যাতে মামলা করতে না পারে এবং ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় এ জন্য নাজমুলের বাবা খবিজল, চাচা সাইফুল, জাহিদুল ও শহিদুল প্রকাশ্যে বাধা দেয়। পুরো পরিবারটিকে তারা অবরুদ্ধ করে রাখে। ৪৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মেয়েটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে গ্রামের লোকজন মেয়েটিকে স্থানীয় আশরাফ আলী ব্যাপারীর বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান, শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর খালা রেজিয়া বেগম ফুলবাড়ী থানায় বাদী হয়ে ধর্ষক নাজমুলসহ আরও একজনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। আসামিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান,

গত শুক্রবার রাতে টঙ্গীর হিমারধীঘি এলাকায় লাকী বিউটি পার্লারের এক কর্মী (১৫) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুলিশ চার ধর্ষককে আটক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আটককৃতরা হচ্ছে- নয়ন (১৮) মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার সদরামপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে, শাহাব উদ্দিন (২০) বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ থানার বাবুগঞ্জ গ্রামের মৃত আকরাম হোসেনের ছেলে, বাবু ম-ল (২০) জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থানার জিন্নাবাজার এলাকার মৃত বিল্লাল ম-লের ছেলে, তোফাজ্জল হোসেন (১৯) ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার কান্দাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টায় ভিকটিম ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে চেরাগআলী থেকে রিকশা যোগে আরিচপুর বাসায় যাওয়ার পথে হিমারধীঘি এলাকায় পৌঁছলে ৪ বখাটে জোরপূর্বক রিকশা থেকে ভিকটিম ও ছোট ভাই আলমকে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। পরে ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি খালি ট্রাকে উঠিয়ে জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ওই রাতেই ভিকটিমকে বহনকারী রিকশাচালক তাৎক্ষণিকভাবে টঙ্গী পূর্ব থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানালে থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ ধর্ষণকারীকে আটক এবং ভিকটিম ও তার ছোট ভাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

টঙ্গীর পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার রাতে রিকশাচালক এসে থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ ধর্ষণকারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০ , ২৬ মাঘ ১৪২৬, ১৪ জমাদিউল সানি ১৪৪১

কুড়িগ্রাম ও টঙ্গীতে

ছাত্রী ও পার্লার কর্মী ধর্ষণের শিকার

সংবাদ ডেস্ক |

কুড়িগ্রামে এক মাদ্রাসা ছাত্রী ধর্ষণ ও পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে এক বিউটি পার্লারকর্মী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। উভয় ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা ও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ৭ম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে নাজমুল ইসলাম নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে বিকৃত কামড় ও ক্ষতবিক্ষত করে রাতভর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটলেও অভিযোগকারীর পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা ও মামলা করাতে বিলম্ব হয়। গতকাল দুপুরে নাজমুলসহ দুইজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছে নির্যাতিতা মেয়েটি খালা। এ ঘটনায় ফুলবাড়ীতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক উমর আলী, আশরাফ আলী ব্যাপারী, আবদুস ছালাম ও শমসের আলী জানান, ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর মোল্লাটারী গ্রামের জনৈক খবিজলের পূত্র নাজমুল ইসলাম প্রায় সময় উত্যক্ত করত মেয়েটিকে। এলাকাবাসী ও মেয়েটির পরিবার এ নিয়ে নাজমুলের পরিবারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। মেয়েটির বাবা-মা অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে কাজের সন্ধানে ভারতের দিল্লিতে একটি ইটভাটায় কাজ করতে যায়। সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে তারা অবস্থান করছেন। ভুক্তভোগী মেয়েটি তার খালার বাসায় থেকে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে খালার অনুপস্থিতিতে নাজমুল বাড়িটিতে প্রবেশ করে। এ সময় মেয়েটি টিভি দেখছিল। এই সুযোগে মেয়েটির সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে তাকে একাধিকবার পাশবিক নির্যাতন করে মেয়েটিকে রক্তাক্ত জখম করে সে। পরে মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পরলে নাজমুল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটির খালাসহ পরিবারের লোকজন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বাইরে নেয়ার চেষ্টা করলে নাজমুল ও তার পরিবার এতে বাধা দেয়। মেয়েটির পরিবার যাতে মামলা করতে না পারে এবং ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় এ জন্য নাজমুলের বাবা খবিজল, চাচা সাইফুল, জাহিদুল ও শহিদুল প্রকাশ্যে বাধা দেয়। পুরো পরিবারটিকে তারা অবরুদ্ধ করে রাখে। ৪৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মেয়েটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে গ্রামের লোকজন মেয়েটিকে স্থানীয় আশরাফ আলী ব্যাপারীর বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান, শনিবার দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর খালা রেজিয়া বেগম ফুলবাড়ী থানায় বাদী হয়ে ধর্ষক নাজমুলসহ আরও একজনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছে। আসামিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান,

গত শুক্রবার রাতে টঙ্গীর হিমারধীঘি এলাকায় লাকী বিউটি পার্লারের এক কর্মী (১৫) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। পুলিশ চার ধর্ষককে আটক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আটককৃতরা হচ্ছে- নয়ন (১৮) মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার সদরামপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে, শাহাব উদ্দিন (২০) বরিশাল জেলার মেহেদীগঞ্জ থানার বাবুগঞ্জ গ্রামের মৃত আকরাম হোসেনের ছেলে, বাবু ম-ল (২০) জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থানার জিন্নাবাজার এলাকার মৃত বিল্লাল ম-লের ছেলে, তোফাজ্জল হোসেন (১৯) ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার কান্দাপাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টায় ভিকটিম ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে চেরাগআলী থেকে রিকশা যোগে আরিচপুর বাসায় যাওয়ার পথে হিমারধীঘি এলাকায় পৌঁছলে ৪ বখাটে জোরপূর্বক রিকশা থেকে ভিকটিম ও ছোট ভাই আলমকে হাত-পা বেঁধে আটকে রাখে। পরে ভিকটিমকে জোরপূর্বক একটি খালি ট্রাকে উঠিয়ে জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

ওই রাতেই ভিকটিমকে বহনকারী রিকশাচালক তাৎক্ষণিকভাবে টঙ্গী পূর্ব থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানালে থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪ ধর্ষণকারীকে আটক এবং ভিকটিম ও তার ছোট ভাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

টঙ্গীর পূর্ব থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শুক্রবার রাতে রিকশাচালক এসে থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ ধর্ষণকারীকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।