শেখ মামুনূর রশীদ
শৈশবে বাসায় নিয়মিত যে কাগজটি পড়ে বড় হয়েছি তার নাম ‘সংবাদ’। বড় হতে হতে এই কাগজটিই আরও বেশি প্রিয় হয়েছিল নানা কারণে। পিরোজপুর শহরের পরশমণি খেলাঘর আসরের সদস্য ছিলাম। আর খেলাঘরের খবরাখবর মানেই তো সংবাদ। উদীচী, নাট্যচক্র এবং ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণেও সংবাদকে মনে হতো আমাদেরই কাগজ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজে। ছাত্রনেতা হিসেবে এই আন্দোলনের প্রথম সারিতে আমিও ছিলাম। আর তখন সংবাদই ছিল আমাদের প্রধান মুখপাত্র। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে। এটি ছিল আশার খবর। কিন্তু বামধারার রাজনীতিতে নেমে আসে বিপর্যয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্টদের সূর্যাস্ত- এখানকার বাম রাজনীতিতেও বিভক্তি এনে দেয়, যা অনেকের মধ্যে হতাশার জন্ম দেয়। বলা চলে, এই হতাশা থেকে আমিও ছাত্র রাজনীতির ইতি টেনে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আর এর ভিত শুরু হয় এই সংবাদ থেকেই।
মনে আছে, ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে সংবাদের সহকারি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান। ওই বছর মার্চে তার হাত হাত ধরেই সংবাদের মূল কাগজের সঙ্গে ‘জলসা’ নামে চার পাতার একটি রঙিন ফিচার ম্যাগাজিন বের হতে শুরু করে। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে সোহরাব হাসান নিয়মিত ‘জলসা’ বের করতেন। খুব অল্প সময়ে পাঠক সমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘জলসা’র উঠোনে অনেকের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিলাম আমিও। এর পেছনেও একটা গল্প আছে। ভোরের কাগজ প্রকাশিত হওয়ার দিন থেকেই আমি আমার শহর পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করি। কাগজটির বার্তা সম্পাদক হওয়ায় সোহরাব হাসানের সঙ্গে আগাগোড়া আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, এখনও টিকে আছে এই সম্পর্ক। তার ওপর তিনি ছিলেন আমাদের বরিশাল অঞ্চলেরই মানুষ। সম্পর্কের সূত্র ধরে সাদামাটা ভদ্রলোক সোহরাব হাসাবের ধানমন্ডির ভূতের গলির বাসায়ও একসময় যাতায়াত ছিল আমার।
সে যাই হোক, কিছুদিন যেতে না যেতেই মফস্বলের সাংবাদিকতাকে ইতি জানিয়ে ঢাকায় চলে আসি। অচেনা শহরে, নতুন জীবনের শুরুতে ভোরের কাগজ আর হলিডে’র কার্যালয়ই ছিল আমার যাতায়াত- একমাত্র ঠিকানা। মেলা, অন্যপক্ষ, অবসরসহ ভোরের কাগজের বিভিন্ন ফিচার পাতায় লেখালেখি করে সময় কাটাই। ফাঁকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, টিএসসি, শাহবাগ আর আজিজ সুপার মার্কেটে লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গেও সময় কাটাতাম। এর বাইরে স্কুল-কলেজ জীবনের বন্ধু, আত্মীয়স্বজন এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডাতো ছিলই। সবমিলিয়ে আসলে এটাই ছিল আমার ঢাকার প্রথমদিককার জীবন।
এই জীবনে একদিন হুট করে সোহরাব হাসান আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘আমি সংবাদে যোগ দিচ্ছি, তুমি ওখানে এসে দেখা কর’। যে কথা সেই কাজ- এভাবেই জীবনের প্রথম আমার ‘সংবাদ’ কার্যালয়ে পা রাখা। দোতলায় সম্পাদকীয় বিভাগে বসতেন সোহরাব হাসান। পাশে একটি ছোট্ট রুমে বসতেন জলসা পাতার রিপোর্টাররা। এখানেই পরিচয় কমলেশ রায়, মাহবুব মতিন, দিদার চৌধুরী, সাগর সারওয়ারসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা সবাই তখন সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে জলসা পাতায় লিখতেন। আমি ছিলাম একেবারেই নতুন, তাই প্রদায়ক হিসেবেই যাত্রা। লেখা প্রকাশিত হলে টাকা, না হলে নেই- এই আমার জীবন। কিছুদিন পর আমার মতো প্রদায়ক হয়ে এই তালিকায় নাম লেখাল মেহেরুন রুনী।
জলসা পাতায় কাজ করতে গিয়েই আমাদের মধ্যে তৈরি হয় নিবিড় বন্ধুত্ব। আমি নবীন হলেও বড়রা আগলে রাখতেন মায়ার বন্ধনে, ভালোবাসা দিয়ে। কাজ করতে গিয়ে এখানেই সাগর সারওয়ার এবং মেহেরুন রুনীর মধ্যে প্রেম, অতঃপর বিয়ে। সাগর সারওয়ার আর মেহেরুন রুনীর বাকি ইতিহাস তো সবার জানা। ওদের একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ আজও জানে না- কেন, কী অপরাধে তার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। জানি না আমরাও। হয়তো আর জানাও যাবে না।
দীর্ঘ পথচলায় সংবাদের আঁতুড়ঘর থেকেই কাজ শিখে বের হয়ে পরবর্তী জীবনে যশ-খ্যাতি কুড়িয়েছেন বহু সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মী। ‘জলসা’র ছোট্ট রুম থেকে যাত্রা শুরু করে সাগর সারওয়ার পরবর্তীতে যুগান্তর, ইত্তেফাক, ডয়চে ভেলে হয়ে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে ছিলেন। মেহেরুন রুনী সংবাদ থেকে যুগান্তরের ফিচার বিভাগে। এরপর চ্যানেল আই হয়ে যোগ দেন এটিএন বাংলায়। বেঁচে থাকলে তারা দু’জনই মেধা আর মননশীলতা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন গণমাধ্যমে। আমাদের সেইসময়কার আরেক সহকর্মী মাহবুব মতিনও বেঁচে নেই। সংবাদ ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন চ্যানেল আই-এ। লেখালেখি করতেন, পাশাপাশি সাংবাদিকতাও। অল্প সময়েই খুব ভালো করছিলেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে গেলেন হঠাৎ। কমলেশ রায় যুগান্তর, সকালের খবর, আলোকিত বাংলাদেশ হয়ে এখন সময়ের আলোতে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সকালের খবরে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিপাট ভদ্রলোক কমলেশ রায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্যিক হিসেবে আলাদা একটি অবস্থান গড়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মৃদুভাষী, সুদর্শন ছিলেন, এখনও আছেন দিদার চৌধুরী। সংবাদ হয়ে নানা জায়গা ঘুরে সর্বশেষ কাজ করতেন এনটিভির বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে। সম্প্রতি আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন তিনি। আমি; সংবাদ থেকেই বেক্সিমকো মিডিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অন্বেষায় যোগ দিই। যার সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। মূলত সংবাদে লেখালেখি করছি জেনেই তার সম্পাদিত নতুন এই সাপ্তাহিকটির রিপোর্টিং টিমে তিনি নিয়েছিলেন আমাকে। এরপর মানবজমিন, ভোরের কাগজ, আমার দেশ, সমকাল হয়ে এখন যুগান্তরে। আর আমাদের নিয়ে যিনি জলসা পাতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই সোহরাব হাসান সংবাদ ছেড়ে ভোরের কাগজে। এরপর উপ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন যুগান্তরে। এখন তিনি প্রথম আলোতে উপ-সম্পাদক হিসেবে আছেন।
শুনেছি, সংবাদের সেই জলসা পাতা এখন বন্ধ। কিন্তু এখনও জলসা ঘরের নানা স্মৃতি বয়ে বেড়াই মনে। হৃদয়ে বাজে হাসি-আনন্দ আর আড্ডার ঝনঝনাঝন শব্দ। আনন্দের সঙ্গে কাজ শেখা, কাজ করা- এই যে মন্ত্র, তা সংবাদ থেকেই পাওয়া। বয়সে প্রবীণ, চরিত্রে নবীন সংবাদ- গণমাধ্যমের এই দুঃসময়েও বয়ে চলুক বহতা নদীর মতো।
বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০
শেখ মামুনূর রশীদ
শৈশবে বাসায় নিয়মিত যে কাগজটি পড়ে বড় হয়েছি তার নাম ‘সংবাদ’। বড় হতে হতে এই কাগজটিই আরও বেশি প্রিয় হয়েছিল নানা কারণে। পিরোজপুর শহরের পরশমণি খেলাঘর আসরের সদস্য ছিলাম। আর খেলাঘরের খবরাখবর মানেই তো সংবাদ। উদীচী, নাট্যচক্র এবং ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণেও সংবাদকে মনে হতো আমাদেরই কাগজ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে সামরিক সরকারের বিদায়ঘণ্টা বাজে। ছাত্রনেতা হিসেবে এই আন্দোলনের প্রথম সারিতে আমিও ছিলাম। আর তখন সংবাদই ছিল আমাদের প্রধান মুখপাত্র। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে। এটি ছিল আশার খবর। কিন্তু বামধারার রাজনীতিতে নেমে আসে বিপর্যয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্টদের সূর্যাস্ত- এখানকার বাম রাজনীতিতেও বিভক্তি এনে দেয়, যা অনেকের মধ্যে হতাশার জন্ম দেয়। বলা চলে, এই হতাশা থেকে আমিও ছাত্র রাজনীতির ইতি টেনে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আর এর ভিত শুরু হয় এই সংবাদ থেকেই।
মনে আছে, ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ১৯৯৬ সালের প্রথম দিকে সংবাদের সহকারি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান। ওই বছর মার্চে তার হাত হাত ধরেই সংবাদের মূল কাগজের সঙ্গে ‘জলসা’ নামে চার পাতার একটি রঙিন ফিচার ম্যাগাজিন বের হতে শুরু করে। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে সোহরাব হাসান নিয়মিত ‘জলসা’ বের করতেন। খুব অল্প সময়ে পাঠক সমাজে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘জলসা’র উঠোনে অনেকের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিলাম আমিও। এর পেছনেও একটা গল্প আছে। ভোরের কাগজ প্রকাশিত হওয়ার দিন থেকেই আমি আমার শহর পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করি। কাগজটির বার্তা সম্পাদক হওয়ায় সোহরাব হাসানের সঙ্গে আগাগোড়া আমার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, এখনও টিকে আছে এই সম্পর্ক। তার ওপর তিনি ছিলেন আমাদের বরিশাল অঞ্চলেরই মানুষ। সম্পর্কের সূত্র ধরে সাদামাটা ভদ্রলোক সোহরাব হাসাবের ধানমন্ডির ভূতের গলির বাসায়ও একসময় যাতায়াত ছিল আমার।
সে যাই হোক, কিছুদিন যেতে না যেতেই মফস্বলের সাংবাদিকতাকে ইতি জানিয়ে ঢাকায় চলে আসি। অচেনা শহরে, নতুন জীবনের শুরুতে ভোরের কাগজ আর হলিডে’র কার্যালয়ই ছিল আমার যাতায়াত- একমাত্র ঠিকানা। মেলা, অন্যপক্ষ, অবসরসহ ভোরের কাগজের বিভিন্ন ফিচার পাতায় লেখালেখি করে সময় কাটাই। ফাঁকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, টিএসসি, শাহবাগ আর আজিজ সুপার মার্কেটে লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গেও সময় কাটাতাম। এর বাইরে স্কুল-কলেজ জীবনের বন্ধু, আত্মীয়স্বজন এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আড্ডাতো ছিলই। সবমিলিয়ে আসলে এটাই ছিল আমার ঢাকার প্রথমদিককার জীবন।
এই জীবনে একদিন হুট করে সোহরাব হাসান আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘আমি সংবাদে যোগ দিচ্ছি, তুমি ওখানে এসে দেখা কর’। যে কথা সেই কাজ- এভাবেই জীবনের প্রথম আমার ‘সংবাদ’ কার্যালয়ে পা রাখা। দোতলায় সম্পাদকীয় বিভাগে বসতেন সোহরাব হাসান। পাশে একটি ছোট্ট রুমে বসতেন জলসা পাতার রিপোর্টাররা। এখানেই পরিচয় কমলেশ রায়, মাহবুব মতিন, দিদার চৌধুরী, সাগর সারওয়ারসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা সবাই তখন সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে জলসা পাতায় লিখতেন। আমি ছিলাম একেবারেই নতুন, তাই প্রদায়ক হিসেবেই যাত্রা। লেখা প্রকাশিত হলে টাকা, না হলে নেই- এই আমার জীবন। কিছুদিন পর আমার মতো প্রদায়ক হয়ে এই তালিকায় নাম লেখাল মেহেরুন রুনী।
জলসা পাতায় কাজ করতে গিয়েই আমাদের মধ্যে তৈরি হয় নিবিড় বন্ধুত্ব। আমি নবীন হলেও বড়রা আগলে রাখতেন মায়ার বন্ধনে, ভালোবাসা দিয়ে। কাজ করতে গিয়ে এখানেই সাগর সারওয়ার এবং মেহেরুন রুনীর মধ্যে প্রেম, অতঃপর বিয়ে। সাগর সারওয়ার আর মেহেরুন রুনীর বাকি ইতিহাস তো সবার জানা। ওদের একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ আজও জানে না- কেন, কী অপরাধে তার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে। জানি না আমরাও। হয়তো আর জানাও যাবে না।
দীর্ঘ পথচলায় সংবাদের আঁতুড়ঘর থেকেই কাজ শিখে বের হয়ে পরবর্তী জীবনে যশ-খ্যাতি কুড়িয়েছেন বহু সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মী। ‘জলসা’র ছোট্ট রুম থেকে যাত্রা শুরু করে সাগর সারওয়ার পরবর্তীতে যুগান্তর, ইত্তেফাক, ডয়চে ভেলে হয়ে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে ছিলেন। মেহেরুন রুনী সংবাদ থেকে যুগান্তরের ফিচার বিভাগে। এরপর চ্যানেল আই হয়ে যোগ দেন এটিএন বাংলায়। বেঁচে থাকলে তারা দু’জনই মেধা আর মননশীলতা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন গণমাধ্যমে। আমাদের সেইসময়কার আরেক সহকর্মী মাহবুব মতিনও বেঁচে নেই। সংবাদ ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন চ্যানেল আই-এ। লেখালেখি করতেন, পাশাপাশি সাংবাদিকতাও। অল্প সময়েই খুব ভালো করছিলেন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলে গেলেন হঠাৎ। কমলেশ রায় যুগান্তর, সকালের খবর, আলোকিত বাংলাদেশ হয়ে এখন সময়ের আলোতে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সকালের খবরে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিপাট ভদ্রলোক কমলেশ রায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিশু সাহিত্যিক হিসেবে আলাদা একটি অবস্থান গড়ে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মৃদুভাষী, সুদর্শন ছিলেন, এখনও আছেন দিদার চৌধুরী। সংবাদ হয়ে নানা জায়গা ঘুরে সর্বশেষ কাজ করতেন এনটিভির বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে। সম্প্রতি আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছেন তিনি। আমি; সংবাদ থেকেই বেক্সিমকো মিডিয়া থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক অন্বেষায় যোগ দিই। যার সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। মূলত সংবাদে লেখালেখি করছি জেনেই তার সম্পাদিত নতুন এই সাপ্তাহিকটির রিপোর্টিং টিমে তিনি নিয়েছিলেন আমাকে। এরপর মানবজমিন, ভোরের কাগজ, আমার দেশ, সমকাল হয়ে এখন যুগান্তরে। আর আমাদের নিয়ে যিনি জলসা পাতার নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই সোহরাব হাসান সংবাদ ছেড়ে ভোরের কাগজে। এরপর উপ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন যুগান্তরে। এখন তিনি প্রথম আলোতে উপ-সম্পাদক হিসেবে আছেন।
শুনেছি, সংবাদের সেই জলসা পাতা এখন বন্ধ। কিন্তু এখনও জলসা ঘরের নানা স্মৃতি বয়ে বেড়াই মনে। হৃদয়ে বাজে হাসি-আনন্দ আর আড্ডার ঝনঝনাঝন শব্দ। আনন্দের সঙ্গে কাজ শেখা, কাজ করা- এই যে মন্ত্র, তা সংবাদ থেকেই পাওয়া। বয়সে প্রবীণ, চরিত্রে নবীন সংবাদ- গণমাধ্যমের এই দুঃসময়েও বয়ে চলুক বহতা নদীর মতো।