কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন

মুস্তাফিজ শফি

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের একটি উদ্বৃতি দিয়ে লেখাটি শুরু করতে চাই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কার্যকর জাতীয় সংসদ ও বিরোধীদল ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে না। জাতীয় সংসদকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ না দেওয়ায় বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলো আজও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।’

আমরা যদি ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন পরবর্তী সময়কে ধরি তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স (১৯৯১ থেকে ২০১৯) ২৮ বছর। মাঝখানে অবশ্য প্রায় দুবছর (২০০৭-২০০৮) সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো। এই দুবছর বাদ দিলেও ২৬ বছর কোনো হিসাবেই কম সময় নয়। শুধু সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নন, এই দীর্ঘ সময়ে গণতন্ত্র যে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এটা এখন অনেকেই প্রকাশ্যে বলছেন। বিশেষ করে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এদেশে গণতন্ত্র এখন এক ভিন্নমাত্রার সংকটে পড়েছে।

গণতন্ত্রের সার্বজনীন সংজ্ঞা নিয়ে বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা আলোচনা এবং বিতর্ক প্রচলিত আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গ বক্তৃতায় আব্রাহাম লিংকনের দেওয়া সংজ্ঞাটিই সর্বাধিক গৃহীত। তার মতে গণতন্ত্র হলো- ‘জনগণের সরকার, জনগণের দারা, জনগণের জন্য।’ আর অধ্যাপক গেটেলের মতে, ‘যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী হয়, তা-ই গণতন্ত্র।’ গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ডেমোক্রেসিয়া থেকে, যার অর্থ ‘জনগণের শাসন’। আর সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের সুফল তখনই মিলবে যখন থাকবে একটি কার্যকর সংসদ এবং সরকারী দলের পাশাপাশি একটি কার্যকর বিরোধীদলও। এই ভারসাম্য না থাকলে কর্তৃত্ববাদী শাসন চেপে বসার আশংকা তৈরি হয়। ব্যাহত হয় সুশাসন। ভেঙ্গে পড়ে রাষ্ট্র কাঠামো। বাংলাদেশে আমরা এখন সে আশঙ্কার মধ্যেই আছি।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা যে জয় পেয়েছে তাতে এদেশে বিরোধী দল একেবারে নাই হয়ে গিয়েছে। ওই নির্বাচনে ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারি গঠিত একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন তো কার্যত বিরোধীদলবিহীনই শেষ হয়েছে। প্রথমে ফল প্রত্যাখান করলেও পরে শপথ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে একাদশ সংসদে যোগ দিয়েছেন মাঠের অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির পাঁচ ও তাদের সমমনা দলের দুজন এমপি। যদিও খাতাপত্রে এই সংসদে বিরোধীদল হিসেবে আছে জোট রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অন্যতম মিত্র জাতীয় পার্টি। বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদেও দলটি বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে তারা সরকারেরও শরিক ছিলো। ওই মেয়াদে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা। পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেও গ্রহণ করেন মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ। সরকারের সঙ্গে নজিরবিহীন সখ্য অটুট রাখার ফলে দশম সংসদের শুরু থেকে শেষ অবধি জাতীয় পার্টিকে পরিচয় সংকটে থাকতে হয়েছে। বিএনপিতো তাদেরকে গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর কাগজে কলমে কার্যকর থাকলেও ওই সংসদ জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর ছিলো সে প্রশ্নও কিন্তু রয়ে গেছে। যার ছায়া একাদশ সংসদেও পড়েছে। সংকট আরও ঘনীভূত করেছে।

আমরা জানি বর্তমানে চলমান এই সংসদে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের প্রবণতাও নেই। তবুও সংসদ প্রাণবন্ত হচ্ছে না। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের আগ্রহও এখন কমে গেছে। রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে ক্রমশ গৌণ হয়ে পড়ছে সংসদের ভূমিকাও। হারিয়ে যেতে বসেছে সার্বভৌম সংসদের অস্তিত্ব। গণতন্ত্রের জন্য এটা কোনোভাবেই সুখকর নয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল পেতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধীদল, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে ক্ষমতার ভারসাম্য। আওয়ামী লীগের অভাবনীয় জয়ের পরে এদেশে গঠিত একাদশ সংসদে এই সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ক আলোচনা শুরু হয়েছে নির্বাচনের পর পরই। একাদশ সংসদ গঠনের পর এই আলোচনা আরও ডালপালা মেলেছে। সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই-ই বলেছেন, বল এখন সরকারি দলের কোর্টে, সংসদকে কার্যকর করতে হলে তাদেরকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রে ছাড়ও দিতে হবে। তবে গত দুটি অধিবেশন পর্যালোচনা করে আমরা সে লক্ষণ খুব একটা দেখছি না। এই দুই অধিবেশনে ওই অর্থে কার্যকর কোনো বিল উত্থাপন হয়নি। সংসদীয় কার্যক্রমের প্রাণ হচ্ছে জাতীয় ইস্যু নিয়ে বিতর্ক আমরা দেখতে পাইনি সেরকম প্রাণবন্ত কোনো বিতর্কও। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রথমে ফল প্রত্যাখান করলেও বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলের সাত এমপি শপথ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন থেকেই সংসদে যোগ দিয়েছেন। একজন নারী সংসদ সদস্যও চলতি বাজেট অধিবেশন থেকে সংসদে রয়েছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদেরকে আশ^স্ত করেছেন, সংখ্যায় তারা কতো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, তাদের প্রাপ্য সুযোগ তিনি নিশ্চিত করবেন।

বিরোধীদল কতোটুকু সযোগ পেলো তার পর্যালোচনা আসলে করতে হবে চলতি বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পর। অবশ্য বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যার যে অনুপাত তাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর সংসদের আশা আসলে খুব একটা করা যায় না।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর পর তিনটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে এবারই সংসদে রয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের প্রতিনিধি। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায় সবাই সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেয়। আর জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সর্বোচ্চ সংখ্যক নয়টি রাজনৈতিক দল। এদের মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, গণফোরাম, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), বিকল্প ধারা, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও সে সংসদে সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪০টির মতো নিবন্ধিত দলের মধ্যে একটি ছাড়া সবাই অংশ নেয়। নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় আটটি দল। সেগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও এলডিপি।

এতোদিনে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকেও মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। দশম সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি হাতেগোনা কয়েকবার সংসদের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করলেও তারা পুরো পাঁচ বছরে একদিনের জন্যও সংসদ বর্জন করেনি। একাদশ সংসদের দুটি অধিবেশনেও বর্জনের ঘটনা ঘটেনি।

সংসদ সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এর আগে নবম সংসদের মেয়াদে সংসদ বর্জনের রেকর্ড গড়েছিল তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে তারা অনুপস্থিত ছিল ৩৪২ দিন। এর আগে অষ্টম সংসদে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সদস্যরা সর্বোচ্চ ২২৩ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। ওই সংসদ শেষ হয়েছিল ৩৭৩ কার্যদিবসে। এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদের ৫ বছরে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৮২ দিন। এ সময় তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করে ১৬৩ দিন। সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর প্রথম সংসদ অর্থাৎ পঞ্চম সংসদের ৫ বছরে মোট কার্যদিবস ছিল ৪০০ দিন। ওই সময় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জন করে ১৩৫ দিন।

আমরা দেখছি বর্জনের সংস্কৃতি বিদায় নিলেও কার্যকর হয়নি সংসদ। এর ফলে সুশাসনেও ঘাটতি থেকে গেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ নিয়েও কথা উঠছে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি। শুরুতেই চাই সরকারি দলের দায়িত্বশীল আচরণ, প্রয়োজনে ছাড়। এটা নিশ্চিত করা গেলে আর কোনো আলোচনারই অবকাশ থাকে না। তবে এও বলা যায় এই দায়িত্বশীল আচরণ, এই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা কিন্তু হুট করে আসবে না। এজন্য পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। যা অনেক বড় কাজ এবং এই কাজে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের আগ্রহ একেবারে নেই বললেই চলে। এমপিদের দলীয় বৃত্তের বাইরে নিয়ে আসার আলোচনাও রয়েছে জোরেশোরে। এনিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মত ও প্রস্তাব দিচ্ছেন। সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের দাবিও দীর্ঘদিনের। এই অনুচ্ছেদকে অনেকেই গণতন্ত্র এবং কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার বিরোধী বলে মনে করেন। এতে বলা হয়েছে-

‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা

(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

আসলে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো এদেশের ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মোকাবেলার স্বার্থেই। তা না হলে আমাদেরকে সকাল বিকাল অনেক সরকারই দেখতে হতো। অনেকে বলেন, এমপি কেনাবেচাও হতো। ২০১৭ সালে এই অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছিলো। তবে সেটা খারিজ হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, সরকারের প্রতি অনাস্থা ভোট বাদ দিয়ে আর সব বিষয়ে সংসদে পক্ষে বিপক্ষে এমপিদের ভোট দেওয়াসহ মত প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এটা করা গেলেই সংসদে যে জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করা যাবে।

একইসঙ্গে সংসদীয় কমিটিগুলোকেও কার্যকর করতে হবে। সাবেক মন্ত্রীরা যদি বেশিরভাগ কমিটির প্রধান হন তাহলে এই কমিটিগুলো কার্যকর হবে কীভাবে? বিষয়টি ভেবে দেখে এখনই এ ব্যাপারে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। কমিটির সদস্যরা যেন কোনোরূপ স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের লক্ষ্য একটাই, এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। অনের রক্তে, অনেক ত্যাগে পাওয়া এই বাংলাদেশ। শুধু দেশ স্বাধীন করার জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্যও এদেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই অবারিত করতে হবে দেশটির আগামীর পথচলা। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটাও সেজন্য জরুরি। তা না হলে দেশটার অগ্রযাত্রা যে ব্যাহত হবে। গণতন্ত্রচর্চার প্রধান ক্ষেত্র জাতীয় সংসদ। সেটাকে কার্যকর করা ছাড়া আমাদের সামনে আসলেই আর কোনো বিকল্প নেই।

stafizshafi71@gmail.com

image

শিল্পী : সমর মজুমদার

আরও খবর
৬৯ বছরে সংবাদ
ভাষা থেকে ভূখন্ড
স্মৃতিময় সংবাদ-এর ৬৯ বছর
একটি রাজনৈতিক পাঠ
সংবাদ : কিছু কথা কিছু স্মৃতি
যুগে যুগে সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা
আলোর তৃষ্ণায় জাগো
ইতিহাস ঐতিহ্য ও আদর্শের স্মারক দৈনিক সংবাদ
কেন লিখি
সংবাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার
ঐতিহ্য আর মুক্তচিন্তার সংবাদ
আমার সংবাদ সংবাদের আমি
বিচিত্র জীবিকা বিচিত্র জীবন
ঋতুপর্ণ ঘোষের এলোমেলো দেশকাল
চীন ও বাংলাদেশ : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সম্পর্ক
সংবাদের জলসাঘর
আমরা এখন শান্ত হয়ে আছি
মাটির মাধুর্য
কষ্টের ঢাকা স্বপ্নের বাংলাদেশ
তোমারে বধিবে যে...
বঙ্গবন্ধুর জনকল্যাণের অর্থনৈতিক নীতি কৌশল
শারহুল পটবসন্ত ও বজলুর রহমান
শিশুশিক্ষায় শিল্প-সাহিত্য-সংগীত
গণমাধ্যমের হাল-হকিকত
এবং বজলুর রহমান স্মৃতিপদক
দুর্নীতি, পেশাদারিত্ব ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চার ভবিষ্যৎ
চেতনায় নৈতিকতা মূল্যবোধ : বিরুদ্ধবাস্তবতা
সবার উপরে মানুষ সত্য
আহমদুল কবির শ্রদ্ধাঞ্জলি
‘সংবাদ’ আমারই ছিল আমারই আছে
আমাদের ‘সংবাদ’
নারীর অধিকার ও সচেতনতা
গণমাধ্যমে বিশ্বাস কমছে পাঠকের
নারী ও তার বিধাতা পুরুষ
বাংলাদেশের নারী
সংবাদের কাছে আমি ঋণী
বিস্মৃতিপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের অক্ষমতা
যে দীপশিখা দিয়েছে আলো

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন

মুস্তাফিজ শফি

image

শিল্পী : সমর মজুমদার

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের একটি উদ্বৃতি দিয়ে লেখাটি শুরু করতে চাই। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কার্যকর জাতীয় সংসদ ও বিরোধীদল ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে না। জাতীয় সংসদকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ না দেওয়ায় বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলো আজও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।’

আমরা যদি ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন পরবর্তী সময়কে ধরি তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বয়স (১৯৯১ থেকে ২০১৯) ২৮ বছর। মাঝখানে অবশ্য প্রায় দুবছর (২০০৭-২০০৮) সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো। এই দুবছর বাদ দিলেও ২৬ বছর কোনো হিসাবেই কম সময় নয়। শুধু সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নন, এই দীর্ঘ সময়ে গণতন্ত্র যে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি এটা এখন অনেকেই প্রকাশ্যে বলছেন। বিশেষ করে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এদেশে গণতন্ত্র এখন এক ভিন্নমাত্রার সংকটে পড়েছে।

গণতন্ত্রের সার্বজনীন সংজ্ঞা নিয়ে বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা আলোচনা এবং বিতর্ক প্রচলিত আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ১৮৬৩ সালে গেটিসবার্গ বক্তৃতায় আব্রাহাম লিংকনের দেওয়া সংজ্ঞাটিই সর্বাধিক গৃহীত। তার মতে গণতন্ত্র হলো- ‘জনগণের সরকার, জনগণের দারা, জনগণের জন্য।’ আর অধ্যাপক গেটেলের মতে, ‘যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী হয়, তা-ই গণতন্ত্র।’ গণতন্ত্র বা ডেমোক্রেসি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ডেমোক্রেসিয়া থেকে, যার অর্থ ‘জনগণের শাসন’। আর সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের সুফল তখনই মিলবে যখন থাকবে একটি কার্যকর সংসদ এবং সরকারী দলের পাশাপাশি একটি কার্যকর বিরোধীদলও। এই ভারসাম্য না থাকলে কর্তৃত্ববাদী শাসন চেপে বসার আশংকা তৈরি হয়। ব্যাহত হয় সুশাসন। ভেঙ্গে পড়ে রাষ্ট্র কাঠামো। বাংলাদেশে আমরা এখন সে আশঙ্কার মধ্যেই আছি।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা যে জয় পেয়েছে তাতে এদেশে বিরোধী দল একেবারে নাই হয়ে গিয়েছে। ওই নির্বাচনে ভোট হওয়া ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারি গঠিত একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন তো কার্যত বিরোধীদলবিহীনই শেষ হয়েছে। প্রথমে ফল প্রত্যাখান করলেও পরে শপথ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে একাদশ সংসদে যোগ দিয়েছেন মাঠের অন্যতম বিরোধীদল বিএনপির পাঁচ ও তাদের সমমনা দলের দুজন এমপি। যদিও খাতাপত্রে এই সংসদে বিরোধীদল হিসেবে আছে জোট রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অন্যতম মিত্র জাতীয় পার্টি। বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদেও দলটি বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করে। একই সঙ্গে তারা সরকারেরও শরিক ছিলো। ওই মেয়াদে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির তিনজন নেতা। পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেও গ্রহণ করেন মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ। সরকারের সঙ্গে নজিরবিহীন সখ্য অটুট রাখার ফলে দশম সংসদের শুরু থেকে শেষ অবধি জাতীয় পার্টিকে পরিচয় সংকটে থাকতে হয়েছে। বিএনপিতো তাদেরকে গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর কাগজে কলমে কার্যকর থাকলেও ওই সংসদ জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর ছিলো সে প্রশ্নও কিন্তু রয়ে গেছে। যার ছায়া একাদশ সংসদেও পড়েছে। সংকট আরও ঘনীভূত করেছে।

আমরা জানি বর্তমানে চলমান এই সংসদে সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রমও চলছে। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের প্রবণতাও নেই। তবুও সংসদ প্রাণবন্ত হচ্ছে না। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো বাংলাদেশে জাতীয় সংসদের কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের আগ্রহও এখন কমে গেছে। রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে ক্রমশ গৌণ হয়ে পড়ছে সংসদের ভূমিকাও। হারিয়ে যেতে বসেছে সার্বভৌম সংসদের অস্তিত্ব। গণতন্ত্রের জন্য এটা কোনোভাবেই সুখকর নয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল পেতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধীদল, যার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে ক্ষমতার ভারসাম্য। আওয়ামী লীগের অভাবনীয় জয়ের পরে এদেশে গঠিত একাদশ সংসদে এই সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ক আলোচনা শুরু হয়েছে নির্বাচনের পর পরই। একাদশ সংসদ গঠনের পর এই আলোচনা আরও ডালপালা মেলেছে। সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই-ই বলেছেন, বল এখন সরকারি দলের কোর্টে, সংসদকে কার্যকর করতে হলে তাদেরকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রে ছাড়ও দিতে হবে। তবে গত দুটি অধিবেশন পর্যালোচনা করে আমরা সে লক্ষণ খুব একটা দেখছি না। এই দুই অধিবেশনে ওই অর্থে কার্যকর কোনো বিল উত্থাপন হয়নি। সংসদীয় কার্যক্রমের প্রাণ হচ্ছে জাতীয় ইস্যু নিয়ে বিতর্ক আমরা দেখতে পাইনি সেরকম প্রাণবন্ত কোনো বিতর্কও। তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রথমে ফল প্রত্যাখান করলেও বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলের সাত এমপি শপথ নিয়ে দ্বিতীয় অধিবেশন থেকেই সংসদে যোগ দিয়েছেন। একজন নারী সংসদ সদস্যও চলতি বাজেট অধিবেশন থেকে সংসদে রয়েছেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তাদেরকে আশ^স্ত করেছেন, সংখ্যায় তারা কতো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, তাদের প্রাপ্য সুযোগ তিনি নিশ্চিত করবেন।

বিরোধীদল কতোটুকু সযোগ পেলো তার পর্যালোচনা আসলে করতে হবে চলতি বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পর। অবশ্য বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিদের সংখ্যার যে অনুপাত তাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কার্যকর সংসদের আশা আসলে খুব একটা করা যায় না।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর পর তিনটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে এবারই সংসদে রয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক দলের প্রতিনিধি। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায় সবাই সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নেয়। আর জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছে সর্বোচ্চ সংখ্যক নয়টি রাজনৈতিক দল। এদের মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, গণফোরাম, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), বিকল্প ধারা, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করলেও সে সংসদে সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪০টির মতো নিবন্ধিত দলের মধ্যে একটি ছাড়া সবাই অংশ নেয়। নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় আটটি দল। সেগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও এলডিপি।

এতোদিনে সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকেও মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। দশম সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি হাতেগোনা কয়েকবার সংসদের বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করলেও তারা পুরো পাঁচ বছরে একদিনের জন্যও সংসদ বর্জন করেনি। একাদশ সংসদের দুটি অধিবেশনেও বর্জনের ঘটনা ঘটেনি।

সংসদ সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এর আগে নবম সংসদের মেয়াদে সংসদ বর্জনের রেকর্ড গড়েছিল তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে তারা অনুপস্থিত ছিল ৩৪২ দিন। এর আগে অষ্টম সংসদে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সদস্যরা সর্বোচ্চ ২২৩ দিন অনুপস্থিত ছিলেন। ওই সংসদ শেষ হয়েছিল ৩৭৩ কার্যদিবসে। এর আগে সপ্তম জাতীয় সংসদের ৫ বছরে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৮২ দিন। এ সময় তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করে ১৬৩ দিন। সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর প্রথম সংসদ অর্থাৎ পঞ্চম সংসদের ৫ বছরে মোট কার্যদিবস ছিল ৪০০ দিন। ওই সময় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জন করে ১৩৫ দিন।

আমরা দেখছি বর্জনের সংস্কৃতি বিদায় নিলেও কার্যকর হয়নি সংসদ। এর ফলে সুশাসনেও ঘাটতি থেকে গেছে। নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ নিয়েও কথা উঠছে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কি। শুরুতেই চাই সরকারি দলের দায়িত্বশীল আচরণ, প্রয়োজনে ছাড়। এটা নিশ্চিত করা গেলে আর কোনো আলোচনারই অবকাশ থাকে না। তবে এও বলা যায় এই দায়িত্বশীল আচরণ, এই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা কিন্তু হুট করে আসবে না। এজন্য পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। যা অনেক বড় কাজ এবং এই কাজে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের আগ্রহ একেবারে নেই বললেই চলে। এমপিদের দলীয় বৃত্তের বাইরে নিয়ে আসার আলোচনাও রয়েছে জোরেশোরে। এনিয়ে বিশেষজ্ঞরা নানা মত ও প্রস্তাব দিচ্ছেন। সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের দাবিও দীর্ঘদিনের। এই অনুচ্ছেদকে অনেকেই গণতন্ত্র এবং কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠার বিরোধী বলে মনে করেন। এতে বলা হয়েছে-

‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-

(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা

(খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন,

তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

আসলে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিলো এদেশের ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে মোকাবেলার স্বার্থেই। তা না হলে আমাদেরকে সকাল বিকাল অনেক সরকারই দেখতে হতো। অনেকে বলেন, এমপি কেনাবেচাও হতো। ২০১৭ সালে এই অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও হয়েছিলো। তবে সেটা খারিজ হয়ে গেছে। আমরা মনে করি, সরকারের প্রতি অনাস্থা ভোট বাদ দিয়ে আর সব বিষয়ে সংসদে পক্ষে বিপক্ষে এমপিদের ভোট দেওয়াসহ মত প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। এটা করা গেলেই সংসদে যে জবাবদিহিতার কথা বলা হচ্ছে, ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলা হচ্ছে সেটা নিশ্চিত করা যাবে।

একইসঙ্গে সংসদীয় কমিটিগুলোকেও কার্যকর করতে হবে। সাবেক মন্ত্রীরা যদি বেশিরভাগ কমিটির প্রধান হন তাহলে এই কমিটিগুলো কার্যকর হবে কীভাবে? বিষয়টি ভেবে দেখে এখনই এ ব্যাপারে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। কমিটির সদস্যরা যেন কোনোরূপ স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের লক্ষ্য একটাই, এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। অনের রক্তে, অনেক ত্যাগে পাওয়া এই বাংলাদেশ। শুধু দেশ স্বাধীন করার জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্যও এদেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থেই অবারিত করতে হবে দেশটির আগামীর পথচলা। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটাও সেজন্য জরুরি। তা না হলে দেশটার অগ্রযাত্রা যে ব্যাহত হবে। গণতন্ত্রচর্চার প্রধান ক্ষেত্র জাতীয় সংসদ। সেটাকে কার্যকর করা ছাড়া আমাদের সামনে আসলেই আর কোনো বিকল্প নেই।

stafizshafi71@gmail.com