‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র নির্বাচন কেন্দ্র করে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন সরকারি কলেজের শিক্ষক ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত শিক্ষকরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক-এই দুটি পক্ষ প্রধান। ‘মূল ধারা’ ও ‘সাধারণ শিক্ষক’ পক্ষ থাকলেও সব পক্ষেই বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা সুবিধা পাচ্ছেন। সব পক্ষেই রাজধানীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বহাল আছে; কিন্তু প্রায় ১৬ হাজার সদস্যের এই ক্যাডারের বেশিরভাগ শিক্ষকই ঢাকার বাইরে কর্মরত। এর ফলে নির্বাচন হলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে এই ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ-এমন আশঙ্কা করছেন শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। তারা তড়িঘড়ি নির্বাচনের বিপক্ষে।
তাছাড়া সরকারসমর্থক শিক্ষকদের গ্রুপিং, দলাদলি, লোভনীয় স্থানে পদায়ন পেতে মরিয়া তদবিরের কারণে অনেকটাই বিরক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। আবার বিএনপি-জামায়াতপন্থি, দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাবাদী শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এখন ভোল পাল্টে রাতারাতি আওয়ামী লীগ সমর্থক সেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটিও প্রায় দুই বছর ধরে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছেন না। আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সবার সম্মতিক্রমেই আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হন (আহ্বায়ক) আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার; অর্থাৎ তিনি সংগঠনের প্রধান। আমি সদস্য সচিব মাত্র। আরও অনেকেই আছেন। সবাইকে মিলেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কারওর একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা নির্বাচনের চেষ্টা করছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আসলে নির্বাচন মুখ্য বিষয় নয়। বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী ও অসাধু একটি চক্র সমিতির নির্বাচনের নামে শিক্ষা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এই চক্রটি টাকা নিয়েও খেলছে।’
শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ১৬ হাজার সদস্য আছে। শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১ জুন। দ্বিবার্ষিক এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ১৪ জুন। ওই নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ প্যানেল থেকে মহাসচিব নির্বাচিত হন অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। আর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সভাপতি হন প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বর্তমানে সরকারি কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সংবাদকে বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি বার বার নির্বাচনের কথা বলে আসছি; ফেসবুকেও লিখেছি সাধারণ সদস্যদের অনেকের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কিন্তু যারা দায়িত্বে আছেন তারা আমলে নেননি। আমি মাউশি ডিজিকেও (মহাপরিচালক) নির্বাচনের কথা বলেছি। তিনিও কিছু করছেন না। এজন্য আমি খুব শীঘ্রই সাধারণ সভা আহ্বান করব। এছাড়া কোন বিকল্প নেই।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ফোরাম। এর ফোরামের সদস্য প্রায় দুই হাজার দুশ’। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২৪তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
২৪তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া রবিউল আলম বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য। কিন্তু এটাও সত্য যে, ২৪তম বিসিএসের প্রায় ২২শ’ সদস্যের প্রায় ৯৫ ভাগই ছাত্রদলের নেতাকর্মী বা অনুসারী অথবা ছাত্রশিবির। পরবর্তীতে অনেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থক সেজেছেন। সাইনবোর্ড পাল্টে নানা অপকর্মও করেছেন, সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। কাজেই এই মুহূর্তে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচন হলে ফলাফল কী হবে, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিভাজনের কারণে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদ’ গঠিত হয়। এই সংসদের আহ্বায়ক প্রফেসর নাসির উদ্দিন শিক্ষা ক্যাডারে একজন ‘ক্লিন ইমেজ’র সদস্য হিসেবে পরিচিত। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ফেয়ার নির্বাচন হলে স্বাধীনতা সংসদের প্রার্থীদের বিজয় অনিবার্য। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচনের আয়োজন করতে হলে সাধারণ সভা আহ্বানের বিকল্প নেই। কারণ একটি গ্রুপ নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন নির্বাচন না থাকায় সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিক্ষা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচন জরুরি।’
রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২০ , ২২ পৌষ ১৪২৬, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র নির্বাচন কেন্দ্র করে চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন সরকারি কলেজের শিক্ষক ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত শিক্ষকরা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক-এই দুটি পক্ষ প্রধান। ‘মূল ধারা’ ও ‘সাধারণ শিক্ষক’ পক্ষ থাকলেও সব পক্ষেই বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা সুবিধা পাচ্ছেন। সব পক্ষেই রাজধানীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বহাল আছে; কিন্তু প্রায় ১৬ হাজার সদস্যের এই ক্যাডারের বেশিরভাগ শিক্ষকই ঢাকার বাইরে কর্মরত। এর ফলে নির্বাচন হলে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে এই ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ-এমন আশঙ্কা করছেন শিক্ষা প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা। তারা তড়িঘড়ি নির্বাচনের বিপক্ষে।
তাছাড়া সরকারসমর্থক শিক্ষকদের গ্রুপিং, দলাদলি, লোভনীয় স্থানে পদায়ন পেতে মরিয়া তদবিরের কারণে অনেকটাই বিরক্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। আবার বিএনপি-জামায়াতপন্থি, দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাবাদী শিক্ষকদের একটি বড় অংশ এখন ভোল পাল্টে রাতারাতি আওয়ামী লীগ সমর্থক সেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটিও প্রায় দুই বছর ধরে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারছেন না। আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেন, ‘সবার সম্মতিক্রমেই আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হন (আহ্বায়ক) আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার; অর্থাৎ তিনি সংগঠনের প্রধান। আমি সদস্য সচিব মাত্র। আরও অনেকেই আছেন। সবাইকে মিলেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কারওর একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা নির্বাচনের চেষ্টা করছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আসলে নির্বাচন মুখ্য বিষয় নয়। বিএনপি-জামায়াতের সুবিধাভোগী ও অসাধু একটি চক্র সমিতির নির্বাচনের নামে শিক্ষা প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এই চক্রটি টাকা নিয়েও খেলছে।’
শিক্ষা ক্যাডারে প্রায় ১৬ হাজার সদস্য আছে। শিক্ষা সমিতির সর্বশেষ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১ জুন। দ্বিবার্ষিক এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ১৪ জুন। ওই নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থক’ প্যানেল থেকে মহাসচিব নির্বাচিত হন অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী। আর স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে সভাপতি হন প্রফেসর আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বর্তমানে সরকারি কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সংবাদকে বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমি বার বার নির্বাচনের কথা বলে আসছি; ফেসবুকেও লিখেছি সাধারণ সদস্যদের অনেকের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কিন্তু যারা দায়িত্বে আছেন তারা আমলে নেননি। আমি মাউশি ডিজিকেও (মহাপরিচালক) নির্বাচনের কথা বলেছি। তিনিও কিছু করছেন না। এজন্য আমি খুব শীঘ্রই সাধারণ সভা আহ্বান করব। এছাড়া কোন বিকল্প নেই।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে ২৪তম বিসিএস শিক্ষা ফোরাম। এর ফোরামের সদস্য প্রায় দুই হাজার দুশ’। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ২৪তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
২৪তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া রবিউল আলম বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমি স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য। কিন্তু এটাও সত্য যে, ২৪তম বিসিএসের প্রায় ২২শ’ সদস্যের প্রায় ৯৫ ভাগই ছাত্রদলের নেতাকর্মী বা অনুসারী অথবা ছাত্রশিবির। পরবর্তীতে অনেকেই আওয়ামী লীগ সমর্থক সেজেছেন। সাইনবোর্ড পাল্টে নানা অপকর্মও করেছেন, সুবিধা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। কাজেই এই মুহূর্তে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচন হলে ফলাফল কী হবে, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিভাজনের কারণে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ‘স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদ’ গঠিত হয়। এই সংসদের আহ্বায়ক প্রফেসর নাসির উদ্দিন শিক্ষা ক্যাডারে একজন ‘ক্লিন ইমেজ’র সদস্য হিসেবে পরিচিত। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ফেয়ার নির্বাচন হলে স্বাধীনতা সংসদের প্রার্থীদের বিজয় অনিবার্য। তবে এই মুহূর্তে নির্বাচনের আয়োজন করতে হলে সাধারণ সভা আহ্বানের বিকল্প নেই। কারণ একটি গ্রুপ নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন নির্বাচন না থাকায় সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিক্ষা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচন জরুরি।’