সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এক আসনের বিপরীতে ১০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিয়মিত ঘটনা। বেশিরভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একই চিত্র দেখা গেলেও বিপরীত চিত্রও রয়েছে। শিক্ষার্থী সংকটে বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী খুঁজতে হয় বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এ প্রতিষ্ঠানটির অদূরে সরকারি বালক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। শুধুমাত্র শিক্ষক সংকটের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বরিশাল বিভাগের প্রায় সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট এখন প্রকট। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে প্রধান শিক্ষকের কাজ। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন সৃষ্ট পদের অর্ধেক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান হচ্ছেনা। শিক্ষার্থী-অভিবাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি। আর এ সুযোগে এসব প্রতিষ্ঠান ঘিরে চলছে কোচিংসহ রমরমা শিক্ষা বানিজ্য। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের (মাউশি) পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন মাত্র দুটিতে। তিনি মাউশিকে পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন, স্কুলগুলোতে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরীর দুটি স্কুল বাদ দিলে এর শতকরা হিসাব দাঁড়াবে অর্ধেকেরও বেশি। মাউশি পরিচালক বলেন, চলতি সপ্তাহে মাউশির পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত তথ্য দিয়েছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এ ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনার বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
শিক্ষক সংকট একটি প্রতিষ্ঠানকে কতখানি অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় এবছর বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায়। সেখানকার দিবা শাখায় ১২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ৪টি। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রভাতি শাখায় ১৯৯ জন আবেদন করলে সেখান থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রভাতি শাখায় এনে ভর্তি করেছেন।
এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৫২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। তারমধ্যে একজন বিএড কোর্সের জন্য এক বছরের ছুটিতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য কয়েক বছর আগে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে দুটি শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেয়া অসম্ভব হওয়ায় একটি শিফট বাতিলের চিন্তাভাবনা চলছে। বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে আছে মাত্র ২২ জন। জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এ দুটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে কোচিং সেন্টার আদলে কমপক্ষে ১৫টি অনুমোদনহীন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। তারা বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সদর বরিশাল নগরীতে ২০১৬ সালে স্থাপিত নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরীর কাউনিয়ার শহীদ আরজুমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. এবাদুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, মো. এবাদুল ইসলাম নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসায় সহকারী শিক্ষকরা সেখানে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। বাধ্যতামূলক কোচিং করার জন্য শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ আছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক এবায়দুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়টির অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তাকে মাউশির আঞ্চলিক দাফতরিক কাজ সেরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এতে তারও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনিও চান প্রতিষ্ঠানটিতে একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক দেয়া হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমরমা কোচিং বাণিজ্যের লোভে সহকারী শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তদবির করে জেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে কর্মরত আছেন। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ তথ্যের সত্যতা দাবি করে বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, বরিশাল নগরীর ৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত বরগুনা জেলার বাসিন্দা যে কজন শিক্ষক আছেন, শুধু তারা নিজ জেলা বরগুনাতে ফিরে এলে এখানকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হতো না।
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২০ , ৮ মাঘ ১৪২৬, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এক আসনের বিপরীতে ১০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিয়মিত ঘটনা। বেশিরভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একই চিত্র দেখা গেলেও বিপরীত চিত্রও রয়েছে। শিক্ষার্থী সংকটে বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রক্ষায় শিক্ষার্থী খুঁজতে হয় বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এ প্রতিষ্ঠানটির অদূরে সরকারি বালক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। শুধুমাত্র শিক্ষক সংকটের জন্য প্রতিষ্ঠান দুটি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বরিশাল বিভাগের প্রায় সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট এখন প্রকট। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে প্রধান শিক্ষকের কাজ। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক আছেন সৃষ্ট পদের অর্ধেক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পাঠদান হচ্ছেনা। শিক্ষার্থী-অভিবাবকরা আগ্রহ হারাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি। আর এ সুযোগে এসব প্রতিষ্ঠান ঘিরে চলছে কোচিংসহ রমরমা শিক্ষা বানিজ্য। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের (মাউশি) পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন মাত্র দুটিতে। তিনি মাউশিকে পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন, স্কুলগুলোতে গড়ে ৩৮ ভাগ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরীর দুটি স্কুল বাদ দিলে এর শতকরা হিসাব দাঁড়াবে অর্ধেকেরও বেশি। মাউশি পরিচালক বলেন, চলতি সপ্তাহে মাউশির পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত তথ্য দিয়েছেন। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এ ধরনের জটের সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান। তিনি বলেন, প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী এবং বরগুনার বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।
শিক্ষক সংকট একটি প্রতিষ্ঠানকে কতখানি অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে তার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় এবছর বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষায়। সেখানকার দিবা শাখায় ১২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ৪টি। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রভাতি শাখায় ১৯৯ জন আবেদন করলে সেখান থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রভাতি শাখায় এনে ভর্তি করেছেন।
এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৫২ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। তারমধ্যে একজন বিএড কোর্সের জন্য এক বছরের ছুটিতে আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক বলেন, শিক্ষক সংকটের জন্য কয়েক বছর আগে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে দুটি শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেয়া অসম্ভব হওয়ায় একটি শিফট বাতিলের চিন্তাভাবনা চলছে। বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদ চৌধুরী জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ৫১ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে আছে মাত্র ২২ জন। জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এ দুটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে কোচিং সেন্টার আদলে কমপক্ষে ১৫টি অনুমোদনহীন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। তারা বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সদর বরিশাল নগরীতে ২০১৬ সালে স্থাপিত নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরীর কাউনিয়ার শহীদ আরজুমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. এবাদুল ইসলাম। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেন, মো. এবাদুল ইসলাম নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসায় সহকারী শিক্ষকরা সেখানে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। বাধ্যতামূলক কোচিং করার জন্য শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ারও অভিযোগ আছে কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক এবায়দুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়টির অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তাকে মাউশির আঞ্চলিক দাফতরিক কাজ সেরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। এতে তারও অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনিও চান প্রতিষ্ঠানটিতে একজন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক দেয়া হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমরমা কোচিং বাণিজ্যের লোভে সহকারী শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তদবির করে জেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে কর্মরত আছেন। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সংকটে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এ তথ্যের সত্যতা দাবি করে বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, বরিশাল নগরীর ৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত বরগুনা জেলার বাসিন্দা যে কজন শিক্ষক আছেন, শুধু তারা নিজ জেলা বরগুনাতে ফিরে এলে এখানকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হতো না।