করোনাভাইরাস

সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফেরার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস কোনভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরও বিশেষভাকে দেখাশোনা করতে হবে।’ চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে কেয়ারফুল (সতর্ক) থাকতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার না ঘটতে পারে। চীন বা হংকং থেকে থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী চীনে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে সেখান থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চীন সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কী প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে করা হবে। আমাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই মূল লক্ষ্য। এ বিষয়ে আজকের দিনের শেষে (গতকাল) একটি প্রাথমিক নির্দেশনা জারি করা হবে; যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়ন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনের উহান প্রদেশে প্রায় ৪শ’ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর রাখছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখনো কোন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একটি হটলাইন খোলা হয়েছে। এ হটলাইন নম্বর হলো (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

চীনের ‘উহান’ প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নভেল করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে ইতোমধ্যে দেশদিতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে। ২০০২ সালে মার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মত একই পরিবারের সদস্য ‘নভেল করোনাভাইরাস’। এ ধরনের ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় মধ্য চীনের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বর। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর গত ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোন প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। এ রোগের ভাইরাসে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। এটি সাধারণ ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। বিশ্বের কোন দেশেই করোনাভাইরাসের কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। এ রোগ ঠেকাতে পারে-এমন কোন চিকিৎসা এখনও মানুষের আয়ত্বে আসেনি।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

করোনাভাইরাস

সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফেরার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস কোনভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরও বিশেষভাকে দেখাশোনা করতে হবে।’ চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে কেয়ারফুল (সতর্ক) থাকতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার না ঘটতে পারে। চীন বা হংকং থেকে থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী চীনে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে সেখান থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চীন সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কী প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে করা হবে। আমাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই মূল লক্ষ্য। এ বিষয়ে আজকের দিনের শেষে (গতকাল) একটি প্রাথমিক নির্দেশনা জারি করা হবে; যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়ন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনের উহান প্রদেশে প্রায় ৪শ’ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজখবর রাখছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এখনো কোন বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে একটি হটলাইন খোলা হয়েছে। এ হটলাইন নম্বর হলো (৮৬)-১৭৮০১১১৬০০৫।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

চীনের ‘উহান’ প্রদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নভেল করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসে ইতোমধ্যে দেশদিতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে। ২০০২ সালে মার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মত একই পরিবারের সদস্য ‘নভেল করোনাভাইরাস’। এ ধরনের ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।

করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় মধ্য চীনের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বর। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর গত ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তবে তাদের ধারণা, মানুষের দেহে এ রোগ এসেছে কোন প্রাণী থেকে। তারপর মানুষ থেকে মানুষ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। এ রোগের ভাইরাসে সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। এটি সাধারণ ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এটি মোড় নিতে পারে নিউমোনিয়া, রেসপাইরেটরি ফেইলিউর বা কিডনি অকার্যকারিতার দিকে। বিশ্বের কোন দেশেই করোনাভাইরাসের কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। এ রোগ ঠেকাতে পারে-এমন কোন চিকিৎসা এখনও মানুষের আয়ত্বে আসেনি।