সাংবাদিকদের ডিএমপির হয়রানিমূলক তলব

সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদ

পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ১০/১২ জন সাংবাদিককে চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. শাহ আবিদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে তারিখ উল্লেখ করে ডিএমপি সদর দফতরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পুলিশ এভাবে কোন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে না। যে দফতর থেকে চিঠিটি ফাঁস হয়েছে সেখানে জড়িতদের খুঁজে বের না করে উল্টো সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আইজিপি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তার কার্যালয়ের ইমাম হোসেন নামে একজন যুগ্ম কমিশনারকে তিনি দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি অধস্তন ওই পুলিশ কর্মকর্তা কমিশনারকে পুলিশের জন্য কেনাকাটায় পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একারণে অধস্তন ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করার আহ্বান জানান কমিশনার। এই চিঠিটি নিয়ে দেশের একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এ কারণে ডিএমপি থেকে চিঠিটি কীভাবে ফাঁস হলো তা জানার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধানের পক্ষ থেকে অন্তত ১২জন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা যথাযথ পালন করতেই আমরা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের আসার জন্য অনুরোধ করেছি। কাউকে বাধ্য করছি না। সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদ কর্মীদের ডেকে পাঠানোর বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্বে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির শামিল। তথ্য প্রকাশ ও বাক স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। এমন পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন না।

তিনি বলেন, যে পুলিশ কমিশনার নিজেই তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের কাছে বদলির সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছেন, সে কমিশনারের কাছ থেকে এটা স্ববিরোধী আচরণ। এটা কোনভাবেই তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। বরং গণমাধ্যমকে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে ভাবা উচিত। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করা তাদের দায়িত্ব না। এটা এখতিয়ার বহির্ভূত এবং আত্মঘাতী কাজ।

চিঠি পাওয়া একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ডিএমপি থেকে চিঠি দিয়ে তাদের ডাকার বিষয়টিকে তারা হয়রানি মনে করছেন। এটি ভীতিকর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতাও বাধাগ্রস্ত হবে। সোর্সরা আর গোপন তথ্য দিতে চাইবেন না। সাংবাদিকদের সংবাদ পাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হলো সোর্স মেইনটেইন করা। ফলে সোর্সের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ার কারণে সোর্সরাও নিজের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকবেন। এতে সমাজে অন্যায়-অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি আরও বেড়ে যাবে। যা সার্বিকভাবে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ডিএমপির চিঠি পাওয়া সাংবাদিক নেসারুল হক খোকন বলেন, এভাবে তারা ডাকতে পারে না। এই চিঠি কীভাবে আউট হয়েছে সে বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিলেই তো পারে। সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ডেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়রানির শামিল। এটা অতীতে কখনও ঘটেনি। আমি তথ্য আমার সোর্সের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এই সোর্স আমি কখনও প্রকাশ করতে পারি না। এই ডাকাডাকি বন্ধ করা উচিত। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রবলভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক জানান, সোর্স জানার জন্য কমিটি করে অনুসন্ধান করা প্রথম শুনছি। এটি তারা কোনভাবেই করতে পারেন না। আমরা সাংবাদিকরা সোর্স বলতে বাধ্য নই। প্রকাশিত সেই চিঠিটি যদি ভুয়া হতো তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু তারা তো তা বলছে না। তারা চিঠিটি আমরা কীভাবে পেলাম তা জানার চেষ্টা করছে। এটা কোনভাবেই সমীচীন নয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, যার দুর্নীতির ব্যাপারে রিপোর্টটি প্রকাশ হয়েছে, সেই রিপোর্টটি আমলে নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার ছিল। যদি মনে হয় তিনি দোষি তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর যদি দোষি না হন, তাহলে তিনি তো প্রতিবাদ পাঠাতে পারতেন। এসব না করে সাংবাদিকদের ডেকে সোর্স জানার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা তো সমীচীন নয়। সাংবাদিকরাতো সোর্স বলতে বাধ্য না। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কাছে যদি সোর্সের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা। এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমার মনে এই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করবেন।

ডিইউজের প্রতিবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটি তলব করায় গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। অনুসন্ধানের নামে এতে করে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মনে করে এ সংগঠন। গতকাল ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দফতর থেকে কয়েকদিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের নিমিত্তে’ নির্ধারিত সময়ে ১০ জন সাংবাদিককে হাজির হতে বলা হয়েছে। ডিইউজে নেতারা মনে করেন, পুলিশি অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের তদন্তে সাংবাদিকদের তলব করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ স্পষ্টতই প্রচলিত আইন ও রেওয়াজের পরিপন্থী। এ ধরনের চিঠি এক ধরনের মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করছে। যা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। দেশের প্রচলিত আইনে সাংবাদিকদের কাছে তথ্যের সূত্র জানতে চাওয়ার কোন অবকাশ নেই। কেননা, সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক ও পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে গোপনীয়তার বেড়াজাল ভেঙে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণকে অবহিত করা। বিবৃতিতে ডিইউজে নেতারা এই ধরনের হয়রানি ও মনস্তাত্বিক চাপমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বিএবি-র সিদ্ধান্তে ডিইউজের উদ্বেগ : সংবাদপত্র, অনলাইন বার্তা সংস্থা ও টেলিভিশনে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। ব্যাংক মালিকদের এ ধরনের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডিইউজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গণমাধ্যমে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা মূলত গণমাধ্যমের সম্প্রসারণ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার শামিল। গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস প্রধানত বিজ্ঞাপন। করোনা দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে কোন সংগঠন বা সংস্থা থেকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা গণমাধ্যমের জন্য সুবিবেচনাপ্রসূত আচরণ হবে না। দেশ ও জাতি গঠনে গণমাধ্যমের যে ভূমিকা রয়েছে, এই ঘোষণায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা মিডিয়ার সঙ্গে বৈরী আচরণের শামিল। যা খুবই হতাশা ও দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ঘোষণা থেকে বিএবি’কে সরে আসার আহ্বান জানান ডিইউজে নেতারা।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ , ৪ আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ শাওয়াল ১৪৪১

পুলিশ কমিশনারের চিঠি ফাঁসের খবর

সাংবাদিকদের ডিএমপির হয়রানিমূলক তলব

সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ১০/১২ জন সাংবাদিককে চিঠি দেয়া হয়েছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. শাহ আবিদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে তারিখ উল্লেখ করে ডিএমপি সদর দফতরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। তবে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পুলিশ এভাবে কোন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে না। যে দফতর থেকে চিঠিটি ফাঁস হয়েছে সেখানে জড়িতদের খুঁজে বের না করে উল্টো সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম আইজিপি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তার কার্যালয়ের ইমাম হোসেন নামে একজন যুগ্ম কমিশনারকে তিনি দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি অধস্তন ওই পুলিশ কর্মকর্তা কমিশনারকে পুলিশের জন্য কেনাকাটায় পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একারণে অধস্তন ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করার আহ্বান জানান কমিশনার। এই চিঠিটি নিয়ে দেশের একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এ কারণে ডিএমপি থেকে চিঠিটি কীভাবে ফাঁস হলো তা জানার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধানের পক্ষ থেকে অন্তত ১২জন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা যথাযথ পালন করতেই আমরা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের আসার জন্য অনুরোধ করেছি। কাউকে বাধ্য করছি না। সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদ কর্মীদের ডেকে পাঠানোর বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা গণমাধ্যমের পেশাগত দায়িত্বে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির শামিল। তথ্য প্রকাশ ও বাক স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। এমন পদক্ষেপ তারা নিতে পারেন না।

তিনি বলেন, যে পুলিশ কমিশনার নিজেই তার অধীনস্থ কর্মকর্তাকে দুর্নীতিবাজ চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের কাছে বদলির সুপারিশ করে চিঠি দিয়েছেন, সে কমিশনারের কাছ থেকে এটা স্ববিরোধী আচরণ। এটা কোনভাবেই তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। বরং গণমাধ্যমকে তার সহায়ক শক্তি হিসেবে ভাবা উচিত। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষের উচিত হবে পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করা তাদের দায়িত্ব না। এটা এখতিয়ার বহির্ভূত এবং আত্মঘাতী কাজ।

চিঠি পাওয়া একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ডিএমপি থেকে চিঠি দিয়ে তাদের ডাকার বিষয়টিকে তারা হয়রানি মনে করছেন। এটি ভীতিকর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতাও বাধাগ্রস্ত হবে। সোর্সরা আর গোপন তথ্য দিতে চাইবেন না। সাংবাদিকদের সংবাদ পাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হলো সোর্স মেইনটেইন করা। ফলে সোর্সের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ার কারণে সোর্সরাও নিজের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকবেন। এতে সমাজে অন্যায়-অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি আরও বেড়ে যাবে। যা সার্বিকভাবে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ডিএমপির চিঠি পাওয়া সাংবাদিক নেসারুল হক খোকন বলেন, এভাবে তারা ডাকতে পারে না। এই চিঠি কীভাবে আউট হয়েছে সে বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিলেই তো পারে। সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ডেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়রানির শামিল। এটা অতীতে কখনও ঘটেনি। আমি তথ্য আমার সোর্সের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। এই সোর্স আমি কখনও প্রকাশ করতে পারি না। এই ডাকাডাকি বন্ধ করা উচিত। এতে স্বাধীন সাংবাদিকতা প্রবলভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক জানান, সোর্স জানার জন্য কমিটি করে অনুসন্ধান করা প্রথম শুনছি। এটি তারা কোনভাবেই করতে পারেন না। আমরা সাংবাদিকরা সোর্স বলতে বাধ্য নই। প্রকাশিত সেই চিঠিটি যদি ভুয়া হতো তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু তারা তো তা বলছে না। তারা চিঠিটি আমরা কীভাবে পেলাম তা জানার চেষ্টা করছে। এটা কোনভাবেই সমীচীন নয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, যার দুর্নীতির ব্যাপারে রিপোর্টটি প্রকাশ হয়েছে, সেই রিপোর্টটি আমলে নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার ছিল। যদি মনে হয় তিনি দোষি তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর যদি দোষি না হন, তাহলে তিনি তো প্রতিবাদ পাঠাতে পারতেন। এসব না করে সাংবাদিকদের ডেকে সোর্স জানার চেষ্টা করা হচ্ছে এটা তো সমীচীন নয়। সাংবাদিকরাতো সোর্স বলতে বাধ্য না। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কাছে যদি সোর্সের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা। এটি আসলে মেনে নেয়া যায় না। আমার মনে এই বিষয়টি তারা উপলব্ধি করবেন।

ডিইউজের প্রতিবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

পুলিশ কর্মকর্তার অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটি তলব করায় গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। অনুসন্ধানের নামে এতে করে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মনে করে এ সংগঠন। গতকাল ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দফতর থেকে কয়েকদিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের নিমিত্তে’ নির্ধারিত সময়ে ১০ জন সাংবাদিককে হাজির হতে বলা হয়েছে। ডিইউজে নেতারা মনে করেন, পুলিশি অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের তদন্তে সাংবাদিকদের তলব করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ স্পষ্টতই প্রচলিত আইন ও রেওয়াজের পরিপন্থী। এ ধরনের চিঠি এক ধরনের মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করছে। যা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। দেশের প্রচলিত আইনে সাংবাদিকদের কাছে তথ্যের সূত্র জানতে চাওয়ার কোন অবকাশ নেই। কেননা, সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক ও পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তাছাড়া, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে গোপনীয়তার বেড়াজাল ভেঙে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণকে অবহিত করা। বিবৃতিতে ডিইউজে নেতারা এই ধরনের হয়রানি ও মনস্তাত্বিক চাপমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

বিএবি-র সিদ্ধান্তে ডিইউজের উদ্বেগ : সংবাদপত্র, অনলাইন বার্তা সংস্থা ও টেলিভিশনে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। ব্যাংক মালিকদের এ ধরনের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডিইউজের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, গণমাধ্যমে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা মূলত গণমাধ্যমের সম্প্রসারণ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার শামিল। গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস প্রধানত বিজ্ঞাপন। করোনা দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে কোন সংগঠন বা সংস্থা থেকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা গণমাধ্যমের জন্য সুবিবেচনাপ্রসূত আচরণ হবে না। দেশ ও জাতি গঠনে গণমাধ্যমের যে ভূমিকা রয়েছে, এই ঘোষণায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা মিডিয়ার সঙ্গে বৈরী আচরণের শামিল। যা খুবই হতাশা ও দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ঘোষণা থেকে বিএবি’কে সরে আসার আহ্বান জানান ডিইউজে নেতারা।