স্বজনরা কাছে নেই আছে স্বেচ্ছাসেবীরা

৭২ দিনে বহন করেছে শত শত লাশের ভার

চট্টগ্রামে লাশ দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৪টি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা গত ৭২ দিনে বহন করেছে পাঁচ শতাধিক লাশের ভার। সংগঠনগুলো চট্টগ্রামের বাহিরেও লাশ দাফন করেছেন। চট্টগ্রামে মরদেহ দাফনে নিয়োজিত এই ৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হলো- আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন, এসআইপিএফ মুর্দাসেবা প্রকল্প, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, করোনা মৃতদেহ স্বেচ্ছাসেবক সংঘ। তবে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১১৭ জন।

৪টি সংগঠনের মধ্যে সর্বপ্রথম করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনা সন্দেহের লাশ দাফন শুরু করে এসআইপিএফ মুর্দাসেবা প্রকল্প। সংগঠনটির উদ্যোক্তা ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, গত ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়। গত ১৫ জুন পর্যন্ত গত ৭২ দিনে ৮৬ টি মরদেহ দাফন করেছে সংগঠনটি। যদিও এই সংগঠনটি অন্য সংগঠনের সহযোগিতা নিয়েছে মরদেহ দাফনে।

অন্যদিকে বাকি ৩টি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এককভাবে মরদেহ দাফন ও সৎকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এদের মধ্যে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রথম মরদেহ দাফন শুরু করেছে গত ১৩ এপ্রিল। গত ১৫ জুন রাত পর্যন্ত মোট দাফন ও সৎকার করেছে ১৯০টি লাশ।

সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার জানান, চট্টগ্রামের বাইরেও মরদেহ দাফন ও সৎকার করছে সংগঠনটি। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই ১৯০টি লাশের ভার বহন করেছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় মরদেহের সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি।

মরদেহ দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ লাশের ভার বহন করেছে আল মানাহিল ফাউন্ডেশন। গত ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু করে গত ১৫ জুন পর্যন্ত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ২০৪টি লাশের ভার বহন করেছে।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন জানান, এদের মধ্য প্রায় ১০০ জন করোনা পজিটিভ। বাকিগুলো করোনা সন্দেহের কিংবা অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

লাশ সৎকারের অন্য সংগঠন ‘করোনা মৃতদেহ সৎকার স্বেচ্ছাসেবক সংঘ’ এর আহ্বায়ক সুমন পাল জানান, গত ১৩ মে থেকে লাশ সৎকার শুরু করে গত ১৫ জুন পর্যন্ত সৎকার করেছে ২৫টি লাশ।

সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, করোনা পজিটিভ ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ছাড়াও এই লাশের মিছিলে উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে অন্য রোগী। এদের মধ্যে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে অনেকেই।

এদিকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর খবর প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই নাম সামাজিক যোগাযোগ বা গণমাধ্যমে এলেও গ্রামে মারা যাওয়া অনেকেই হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

এমন অবস্থায় চট্টগ্রামে করোনা উদ্ভূত পরিস্তিতিতে- করোনা উপসর্গ নিয়ে কিংবা চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে কতজন প্রাণ হারিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দায়িত্ব প্রাপ্তদের কাছে নেই।

image
আরও খবর
দক্ষিণ এশিয়ায় সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে ঊর্ধ্বমুখী
করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর
আইভারমেকটিনের পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু
আক্রান্ত ৯৮ হাজার পার মৃত্যু ১৩০৫ জন
গণস্বাস্থ্যের কিট করোনা শনাক্তে কার্যকর নয় বিএসএমএমইউ
শিশু-কিশোরদের আক্রান্তের ঝুঁকি কম
সরকারি ল্যাবে কিট সংকট : হয়নি পরীক্ষা
বরিশাল সিটিতে লকডাউন আগামী সপ্তাহে
জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ‘ডেক্সামেথাসন’ উদ্ভাবন ব্রিটিশ গবেষকদের দাবি
বাঁশের ঘেরা উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢুকে পড়ে এলাকায়
সাংবাদিকদের ডিএমপির হয়রানিমূলক তলব
লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে রাজি হয়েছে চীন ও ভারত

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন ২০২০ , ৪ আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ শাওয়াল ১৪৪১

স্বজনরা কাছে নেই আছে স্বেচ্ছাসেবীরা

৭২ দিনে বহন করেছে শত শত লাশের ভার

চট্টগ্রাম ব্যুরো

image

চট্টগ্রামে লাশ দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৪টি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা গত ৭২ দিনে বহন করেছে পাঁচ শতাধিক লাশের ভার। সংগঠনগুলো চট্টগ্রামের বাহিরেও লাশ দাফন করেছেন। চট্টগ্রামে মরদেহ দাফনে নিয়োজিত এই ৪টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হলো- আল মানাহিল ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন, এসআইপিএফ মুর্দাসেবা প্রকল্প, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, করোনা মৃতদেহ স্বেচ্ছাসেবক সংঘ। তবে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে করোনা আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১১৭ জন।

৪টি সংগঠনের মধ্যে সর্বপ্রথম করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনা সন্দেহের লাশ দাফন শুরু করে এসআইপিএফ মুর্দাসেবা প্রকল্প। সংগঠনটির উদ্যোক্তা ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, গত ৫ এপ্রিল প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ দাফন করা হয়। গত ১৫ জুন পর্যন্ত গত ৭২ দিনে ৮৬ টি মরদেহ দাফন করেছে সংগঠনটি। যদিও এই সংগঠনটি অন্য সংগঠনের সহযোগিতা নিয়েছে মরদেহ দাফনে।

অন্যদিকে বাকি ৩টি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এককভাবে মরদেহ দাফন ও সৎকার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এদের মধ্যে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রথম মরদেহ দাফন শুরু করেছে গত ১৩ এপ্রিল। গত ১৫ জুন রাত পর্যন্ত মোট দাফন ও সৎকার করেছে ১৯০টি লাশ।

সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার জানান, চট্টগ্রামের বাইরেও মরদেহ দাফন ও সৎকার করছে সংগঠনটি। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রামেই ১৯০টি লাশের ভার বহন করেছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় মরদেহের সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি।

মরদেহ দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত সংগঠনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ লাশের ভার বহন করেছে আল মানাহিল ফাউন্ডেশন। গত ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু করে গত ১৫ জুন পর্যন্ত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি ২০৪টি লাশের ভার বহন করেছে।

সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন বিন জমির উদ্দিন জানান, এদের মধ্য প্রায় ১০০ জন করোনা পজিটিভ। বাকিগুলো করোনা সন্দেহের কিংবা অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

লাশ সৎকারের অন্য সংগঠন ‘করোনা মৃতদেহ সৎকার স্বেচ্ছাসেবক সংঘ’ এর আহ্বায়ক সুমন পাল জানান, গত ১৩ মে থেকে লাশ সৎকার শুরু করে গত ১৫ জুন পর্যন্ত সৎকার করেছে ২৫টি লাশ।

সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, করোনা পজিটিভ ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ছাড়াও এই লাশের মিছিলে উল্লেখযোগ্য হারে রয়েছে অন্য রোগী। এদের মধ্যে হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে অনেকেই।

এদিকে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড়ে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর খবর প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই নাম সামাজিক যোগাযোগ বা গণমাধ্যমে এলেও গ্রামে মারা যাওয়া অনেকেই হিসেবের বাইরে থেকে যাচ্ছেন।

এমন অবস্থায় চট্টগ্রামে করোনা উদ্ভূত পরিস্তিতিতে- করোনা উপসর্গ নিয়ে কিংবা চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে কতজন প্রাণ হারিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দায়িত্ব প্রাপ্তদের কাছে নেই।