বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে অসঙ্গতি সিপিডি

বন্যাকবলিত বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। অসমাঞ্জস্যভাবে চলছে ত্রাণ কার্যক্রম। অল্প সংখ্যক গরিব মানুষ বসবাস করা অঞ্চলে এলাকার সব মানুষই ত্রাণ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ যেসব অঞ্চলে বেশি গরিব মানুষ বাস করে তারা হাতেগোনা কিছু গরিব মানুষ পাচ্ছে ত্রাণ সুবিধা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল ‘করোনা ও বন্যা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর তথ্য মতে বন্যা মোকাবিলায় জিআর চাল বিতরণের ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় বেশি সংখ্যক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানকার কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশের বেশি পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বল্প দারিদ্র্যের নীলফামারী, চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের অধিক সংখ্যক পরিবার বন্যা মোকাবিলায় জিআর চাল বিতরণ সুবিধার আওতায় ছিল। বিপরীতে কুড়িগ্রাম, জামালপুরের মতো উচ্চদারিদ্র্যের অঞ্চলে কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধা পায়।

সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চাল বিতরণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জে বেশি সংখ্যক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সেখানকার কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। অন্যদিকে চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশের বেশি পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল।

সিপিডি জানিয়েছে, সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মাইকিং বা প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। কোনো উঠান বৈঠক হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গোপনে তাদের দলীয় লোকজনকে নিয়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন করতেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি জেনে যান এবং প্রতিনিধিদের পেছনে ধর্ণা দেন তাহলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচন করা হয়।

সিপিডির প্রবন্ধে আরও বলা হয়, করোনাকালীন খাদ্য (চাল) সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ছিল এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও যোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নগদ আড়াই হাজার টাকা সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ছিল না। এ ক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ পাওয়া যায়।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্ব সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তবে তিনি নির্বাচনী এলাকায় থাকায় সংলাপ চলাকালেই চলে যান।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম। সম্মানিত অথিতি হিসেবে ছিলেন রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।

এছাড়া সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত এবং আরডিআরএস বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান প্রমুখ সংলাপে অংশ নেন।

বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০ , ৬ মহররম ১৪৪২, ২৬ আগস্ট ২০২০

বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে অসঙ্গতি সিপিডি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বন্যাকবলিত বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে। অসমাঞ্জস্যভাবে চলছে ত্রাণ কার্যক্রম। অল্প সংখ্যক গরিব মানুষ বসবাস করা অঞ্চলে এলাকার সব মানুষই ত্রাণ সুবিধা পাচ্ছে। অথচ যেসব অঞ্চলে বেশি গরিব মানুষ বাস করে তারা হাতেগোনা কিছু গরিব মানুষ পাচ্ছে ত্রাণ সুবিধা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণায় এসব চিত্র উঠে এসেছে।

গতকাল ‘করোনা ও বন্যা মোকাবিলায় ত্রাণ কর্মসূচি : সরকারি পরিষেবার কার্যকারিতা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর তথ্য মতে বন্যা মোকাবিলায় জিআর চাল বিতরণের ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় বেশি সংখ্যক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানকার কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশের বেশি পরিবার এই সুবিধা পেয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বল্প দারিদ্র্যের নীলফামারী, চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলের অধিক সংখ্যক পরিবার বন্যা মোকাবিলায় জিআর চাল বিতরণ সুবিধার আওতায় ছিল। বিপরীতে কুড়িগ্রাম, জামালপুরের মতো উচ্চদারিদ্র্যের অঞ্চলে কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধা পায়।

সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়েছে, চাল বিতরণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জে বেশি সংখ্যক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, সেখানকার কম সংখ্যক পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল। অন্যদিকে চাঁদপুর ও গোপালগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কম থাকা সত্ত্বেও ১০০ শতাংশের বেশি পরিবার এই সুবিধার আওতায় ছিল।

সিপিডি জানিয়েছে, সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের মাইকিং বা প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। কোনো উঠান বৈঠক হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গোপনে তাদের দলীয় লোকজনকে নিয়ে সুবিধাভোগী নির্বাচন করতেন। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি জেনে যান এবং প্রতিনিধিদের পেছনে ধর্ণা দেন তাহলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচন করা হয়।

সিপিডির প্রবন্ধে আরও বলা হয়, করোনাকালীন খাদ্য (চাল) সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ছিল এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ও যোগ্য ব্যক্তিরাই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নগদ আড়াই হাজার টাকা সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ছিল না। এ ক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ পাওয়া যায়।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্ব সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তবে তিনি নির্বাচনী এলাকায় থাকায় সংলাপ চলাকালেই চলে যান।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম। সম্মানিত অথিতি হিসেবে ছিলেন রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক মো. আসিব আহসান।

এছাড়া সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত এবং আরডিআরএস বাংলাদেশের পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান প্রমুখ সংলাপে অংশ নেন।