নরসিংদীর রায়পুরায় কয়েক দিনে মেঘনার ক্রমাগত ভাঙনে শুধুমাত্র চরমধুয়া ইউনিয়নের দুই গ্রাম চরমধুয়া ও দড়িহাটির প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এর আগেও গত বছর এই ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার হয় ২শ’ ঘর-বাড়ি। সেই সঙ্গে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ওই দুটি গ্রামের কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি। এতে চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটছে এই চরবাসীর।
উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে নদী ভাঙন প্রবল ইউনিয়নগুলো হলো- শ্রীনগর, চাঁনপুর, মির্জাচর ও চরমধুয়া। এই ইউনিয়নগুলোতে গ্রাম রক্ষা বাঁধ না থাকায় বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে মেঘনার প্রবল স্রোতে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, হাট-বাজার, আবাদি জমি, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা গ্রাম রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও এক দশকেও ভাঙন প্রবল এলাকায় বাঁধ নির্মাণে নেই সরকারি উদ্যোগ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেন এবং তাদের ‘নর্বাসনে নেই কোন উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলোর পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। নতুন করে মেঘনার ভাঙনে ওই চার ইউনিয়নের অনেক পরিবার তাদের বসতভিটা ও সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামে নিকট আত্মীয়র বাড়িতে। ভাঙন আতঙ্কে আগে থেকেই অনেক টিনের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। সর্বত্র হারিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ও জীবিকার সন্ধানে শহর শহরের পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন আমাদের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি মেঘনা নদীর ভাঙনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময় তারা ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ করেন। পরিবারগুলো ইউনিয়ন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে দাবি জানান।
মেঘনার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের মির্জাচর ইউনিয়নের ৩টি প্রাইমারি স্কুল, ২টি বাজার, ২টি লঞ্চঘাট, ৯টি মসজিদ, ১টি মন্দির ও ৩টি কবরস্থান। চাঁনপুর ইউনিয়নে ১টি লঞ্চঘাট চাঁনপুর ও কালিকাপুর গ্রাম। শ্রীনগর ইউনিয়নে পলাশতলী ও ফকিরেরচর গ্রামের একাংশ এবং চরমধুয়া ইউনিয়নে চরমধুয়া ও দড়িহাটি গ্রাম।
গত এক দশকে চাঁনপুরে ইমামদিরকান্দি ও শ্রীনগরের পলাশতলী গ্রাম দুটির নদীতে প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। পলাশতলী গ্রামে কিছু সংখ্যক লোকের বসতি থাকলেও ইমামদিরকান্দি গ্রামটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ইমামদিরকান্দি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি পরে পাশের মহিনীপুর গ্রামে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চরমধুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম সিকদার জানান, নদী ভাঙনের এলাকা পরির্দশন করে গেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধ নির্মাণের দাবিতে একালাবাসী নিয়ে মানববন্ধন করেছি। এই সময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ নির্মাণে জোর দাবি জানান।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে চরমধুয়ার নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন আসেন নরসিংদী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাহাব উদ্দিন আহমেদ ও রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক।
ওই সময় প্রকৌশলী সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।
শুক্রবার, ০২ জুলাই ২০২১ , ১৮ আষাঢ় ১৪২৮ ২০ জিলক্বদ ১৪৪২
আবদুল হান্নান ভুঁইয়া
নরসিংদীর রায়পুরায় কয়েক দিনে মেঘনার ক্রমাগত ভাঙনে শুধুমাত্র চরমধুয়া ইউনিয়নের দুই গ্রাম চরমধুয়া ও দড়িহাটির প্রায় অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এর আগেও গত বছর এই ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার হয় ২শ’ ঘর-বাড়ি। সেই সঙ্গে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে ওই দুটি গ্রামের কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি। এতে চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কাটছে এই চরবাসীর।
উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে নদী ভাঙন প্রবল ইউনিয়নগুলো হলো- শ্রীনগর, চাঁনপুর, মির্জাচর ও চরমধুয়া। এই ইউনিয়নগুলোতে গ্রাম রক্ষা বাঁধ না থাকায় বছরের পর বছর ধরে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে মেঘনার প্রবল স্রোতে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসতভিটা, হাট-বাজার, আবাদি জমি, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা গ্রাম রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও এক দশকেও ভাঙন প্রবল এলাকায় বাঁধ নির্মাণে নেই সরকারি উদ্যোগ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেন এবং তাদের ‘নর্বাসনে নেই কোন উদ্যোগ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলোর পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। নতুন করে মেঘনার ভাঙনে ওই চার ইউনিয়নের অনেক পরিবার তাদের বসতভিটা ও সহায়-সম্বল হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গ্রামে নিকট আত্মীয়র বাড়িতে। ভাঙন আতঙ্কে আগে থেকেই অনেক টিনের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। সর্বত্র হারিয়ে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই ও জীবিকার সন্ধানে শহর শহরের পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন আমাদের ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি মেঘনা নদীর ভাঙনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওই সময় তারা ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগ করেন। পরিবারগুলো ইউনিয়ন রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে দাবি জানান।
মেঘনার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার চরাঞ্চলের মির্জাচর ইউনিয়নের ৩টি প্রাইমারি স্কুল, ২টি বাজার, ২টি লঞ্চঘাট, ৯টি মসজিদ, ১টি মন্দির ও ৩টি কবরস্থান। চাঁনপুর ইউনিয়নে ১টি লঞ্চঘাট চাঁনপুর ও কালিকাপুর গ্রাম। শ্রীনগর ইউনিয়নে পলাশতলী ও ফকিরেরচর গ্রামের একাংশ এবং চরমধুয়া ইউনিয়নে চরমধুয়া ও দড়িহাটি গ্রাম।
গত এক দশকে চাঁনপুরে ইমামদিরকান্দি ও শ্রীনগরের পলাশতলী গ্রাম দুটির নদীতে প্রায় বিলিন হয়ে গেছে। পলাশতলী গ্রামে কিছু সংখ্যক লোকের বসতি থাকলেও ইমামদিরকান্দি গ্রামটি কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। ইমামদিরকান্দি গ্রামের প্রাইমারি স্কুলটি পরে পাশের মহিনীপুর গ্রামে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চরমধুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম সিকদার জানান, নদী ভাঙনের এলাকা পরির্দশন করে গেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধ নির্মাণের দাবিতে একালাবাসী নিয়ে মানববন্ধন করেছি। এই সময় তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বাঁধ নির্মাণে জোর দাবি জানান।
বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে চরমধুয়ার নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন আসেন নরসিংদী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাহাব উদ্দিন আহমেদ ও রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক।
ওই সময় প্রকৌশলী সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা যাবে।