সংক্রমণ পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই

ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চারপাশের সাত জেলায় ২২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ‘লকডাউন’ আরোপ করা হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় ‘কঠোর লকডাউন’। কিন্তু গত ৫ জুলাই সাত জেলা ‘লকডাউনের’ ১৪ দিন পূর্ণ হলেও ঢাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি, বরং গুরুতর অবনতি হয়েছে। একইসঙ্গে সাত জেলায়ও ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। জেলা সাতটি হলো নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের চলাফেরা ও ‘লকডাউন’ কার্যকরে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

সাত জেলায় ‘লকডাউন’ শুরুর দিন মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এক হাজার ৪৯৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ওইদিন সাত জেলায় মোট শনাক্ত হয় ১৯৭ জনের সংক্রমণ।

সাত জেলা ‘লকডাউন’র দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৫ জুলাই ঢাকায় করোনা শনাক্ত হয় তিন হাজার ১৯৫ জনের। ওইদিন সাত জেলায় শনাক্ত হয় ৫০৬ জনের সংক্রমণ। পরদিন ৬ জুলাই মহানগরসহ ঢাকা জেলায় তিন হাজার ৭১৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন সাত জেলায় করোনা শনাক্ত হয় ৬৩৯ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সাত জেলায় ৭৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে ১৯৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১০ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩৬ জন, মানিকগঞ্জে ৯১ জন, মাদারীপুরে ৭৫ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৮ জন ও গোপালগঞ্জে ৫২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র মহানগরসহ ঢাকা জেলায় পাঁচ হাজার দুইজনের দেহে করোনার জীবাণু পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত লকডাউনের ১৪ দিন হলো ইনকিউবেশন প্রিয়ড (রোগজীবাণু থেকে অনুকূল পরিবেশ বিকাশ হওয়া)। দুই সপ্তাহের লকডাউনে সংক্রমণের চেইন ভেঙে যাওয়া বা দুর্বল হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, লকডাউন না মানেন সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি খারাপ হবেই।’

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কঠোর লকডাউনেই কেউ ঘরে থাকেনি। মানুষও নানা অজুহাতে বাইরে বের হয়েছে। প্রশাসনও পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ কারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।’

একদিনে শনাক্তে রেকর্ড,

মৃত্যু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো দশ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে।

এর আগে ১১ জুলাই শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৮৭৪ জনের সংক্রমণ, যা ওইদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। এরও আগে গত ৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৯১ জনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দেশে ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের মৃত্যু হলো।

২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২০ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হলেন আট লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন।

২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬২৭টি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬ হাজার ৪৫টি নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭০ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪টি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ, আগের দিন এই হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ২২০ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪২ জন ও নারী ৭৮ জন। মোট মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৬৫০ জন এবং নারী চার হাজার ৯৮৯ জন।

বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ১২১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী একজন মারা গেছেন।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২২০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৪ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। অন্য বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৭ জন, রাজশাহীতে ২৩ জন, খুলনায় ৫৫ জন, বরিশাল চারজন, সিলেটে ছয়জন, রংপুরে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪০ জন এবং বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী ও খুলনায় কমছে সংক্রমণের হার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার সবচেয়ে কম ছিল রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। গত বেশ কিছুদিন এই দুই বিভাগে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এর সপ্তাহ আগেও খুলনা বিভাগে সংক্রমণের ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ২০ হাজার ৫১৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ছয় হাজার ৪১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ জেলায় ১৬ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার দুই জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকায় সংক্রমণের হার ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০০ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩২ দশমিক ২১ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে গত একদিনে ছয় হাজার ৭৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় দুই হাজার ৩১১ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৪৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে এক হাজার ৩৩৯ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৯৫০টি। এতে ৬১৩ জনের দেহে করোনার জীবাণু পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্র্মীরা। রংপুরে সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৫৩১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় এক হাজার ৬৪২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগে পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগে গত একদিনে এক হাজার ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫৭৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই বিভাগে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

সিলেট বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার তিনটি নমুনা পরীক্ষায় ৩৭৫ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সিলেটে সংক্রমণের হার ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১ , ২৯ আষাঢ় ১৪২৮ ২ জিলহজ্জ ১৪৪২

সংক্রমণ পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ঢাকায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চারপাশের সাত জেলায় ২২ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ‘লকডাউন’ আরোপ করা হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় ‘কঠোর লকডাউন’। কিন্তু গত ৫ জুলাই সাত জেলা ‘লকডাউনের’ ১৪ দিন পূর্ণ হলেও ঢাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি, বরং গুরুতর অবনতি হয়েছে। একইসঙ্গে সাত জেলায়ও ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। জেলা সাতটি হলো নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে মানুষের চলাফেরা ও ‘লকডাউন’ কার্যকরে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।

সাত জেলায় ‘লকডাউন’ শুরুর দিন মহানগরসহ ঢাকা জেলায় এক হাজার ৪৯৬ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ওইদিন সাত জেলায় মোট শনাক্ত হয় ১৯৭ জনের সংক্রমণ।

সাত জেলা ‘লকডাউন’র দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৫ জুলাই ঢাকায় করোনা শনাক্ত হয় তিন হাজার ১৯৫ জনের। ওইদিন সাত জেলায় শনাক্ত হয় ৫০৬ জনের সংক্রমণ। পরদিন ৬ জুলাই মহানগরসহ ঢাকা জেলায় তিন হাজার ৭১৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া যায়। ওইদিন সাত জেলায় করোনা শনাক্ত হয় ৬৩৯ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাবে, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সাত জেলায় ৭৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গাজীপুরে ১৯৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১০ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩৬ জন, মানিকগঞ্জে ৯১ জন, মাদারীপুরে ৭৫ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৮ জন ও গোপালগঞ্জে ৫২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র মহানগরসহ ঢাকা জেলায় পাঁচ হাজার দুইজনের দেহে করোনার জীবাণু পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণত লকডাউনের ১৪ দিন হলো ইনকিউবেশন প্রিয়ড (রোগজীবাণু থেকে অনুকূল পরিবেশ বিকাশ হওয়া)। দুই সপ্তাহের লকডাউনে সংক্রমণের চেইন ভেঙে যাওয়া বা দুর্বল হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, লকডাউন না মানেন সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি খারাপ হবেই।’

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি কমিটি’র সদস্য ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কঠোর লকডাউনেই কেউ ঘরে থাকেনি। মানুষও নানা অজুহাতে বাইরে বের হয়েছে। প্রশাসনও পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ কারণে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।’

একদিনে শনাক্তে রেকর্ড,

মৃত্যু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো দশ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে।

এর আগে ১১ জুলাই শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৮৭৪ জনের সংক্রমণ, যা ওইদিন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। এরও আগে গত ৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৯১ জনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে দেশে ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের মৃত্যু হলো।

২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ২০ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হলেন আট লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন।

২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ৬২৭টি ল্যাবরেটরিতে (পরীক্ষাগার) একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬ হাজার ৪৫টি নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৭টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭০ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪টি।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ, আগের দিন এই হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬১ শতাংশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া ২২০ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪২ জন ও নারী ৭৮ জন। মোট মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ৬৫০ জন এবং নারী চার হাজার ৯৮৯ জন।

বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ১২১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। অন্যদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৬ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী একজন মারা গেছেন।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২২০ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬৪ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। অন্য বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৭ জন, রাজশাহীতে ২৩ জন, খুলনায় ৫৫ জন, বরিশাল চারজন, সিলেটে ছয়জন, রংপুরে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৬৭ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৪০ জন এবং বাড়িতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী ও খুলনায় কমছে সংক্রমণের হার

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার সবচেয়ে কম ছিল রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। গত বেশ কিছুদিন এই দুই বিভাগে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি ছিল। এর সপ্তাহ আগেও খুলনা বিভাগে সংক্রমণের ৪০ শতাংশের ওপরে ছিল।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ২০ হাজার ৫১৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ছয় হাজার ৪১৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগরসহ জেলায় ১৬ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ হাজার দুই জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ঢাকায় সংক্রমণের হার ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০০ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণের হার ৩২ দশমিক ২১ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বিভাগে গত একদিনে ছয় হাজার ৭৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় দুই হাজার ৩১১ জনের শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৩৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

রাজশাহী বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৪৭৬টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে এক হাজার ৩৩৯ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

রংপুর বিভাগে একদিনে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৯৫০টি। এতে ৬১৩ জনের দেহে করোনার জীবাণু পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্র্মীরা। রংপুরে সংক্রমণের হার ৩১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৫৩১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় এক হাজার ৬৪২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। খুলনা বিভাগে পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগে গত একদিনে এক হাজার ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে ৫৭৫ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই বিভাগে পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

সিলেট বিভাগে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার তিনটি নমুনা পরীক্ষায় ৩৭৫ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পেয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সিলেটে সংক্রমণের হার ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।