রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ভ্যাসেল (পারমাণবিক চুল্লি পাত্র)’ স্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এই চুল্লিটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। যেখানে মূল জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) থাকবে। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃদপিন্ডও বলা হয়। চুল্লি স্থাপনের বিষয়টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ অক্টোবর বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনপিপি) পারমাণবিক চুল্লি পাত্র স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে ৮ অক্টোবর থেকে রূপপুরে উপস্থিত থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম এর মহাপরিচালক এলেক্সে লিখাচেভ এ উপলক্ষে ঢাকা আসবেন। ১০ অক্টোবর সকালে তিনি রূপপুরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সেখান থেকে ঢাকা ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

এদিকে প্রকল্প পরিদর্শনে বেশ কয়েক দিন যাবৎ রূপপুরে ছিলেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। গতকাল দুপুরে ঢাকায় ফেরেন তিনি। প্রকল্পের অগ্রগতির সম্পর্কে গতকাল রাতে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি তো দৃশ্যমান। নিয়মিত কাজ চলছে। ঈদুল আজহার দিনেও প্রকল্পের কাজ চলমান ছিল।’

‘করোনা মহামারীতে কাজে সমস্যা হয়নি? সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘মহামারীর শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশি ও বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। রাশিয়ার সহযোগিতায় দেশীয় কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কারোনাকালেও গাইড লাইন অনুযায়ী প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছে। একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য ৩৩৩ দশমিক ৬ টন ওজনের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি রাশিয়ার ভলগা থেকে জলপথে কৃষ্ণসাগর এবং সুয়েজ ক্যানেল হয়ে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পদ্মায় রূপপুর প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছায় গত বছরের অক্টোবরে। সেটি স্থাপনের জন্য দীর্ঘ এক বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়।

রোসাটমের প্রকৌশল শাখা ‘এসএসই জেএসসি’র তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনের অভ্যন্তরীণ ‘কন্টেইনমেন্ট ডোম’ এর ধাতব কাঠামো স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ডোম স্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় একে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন এসএসই জেএসসি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক এলেক্সি ডেইরি।

এখন এই ইউনিটের পরবর্তী ধাপের কাজগুলো হলো- রিয়েক্টর ভেসেল, একটি স্টিম জেনারেটর ও একটি প্রধান সার্কুলেশন পাইপলাইন সংযোজন করা।

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় দেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট পরের বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে এখানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছে। এই কর্মযজ্ঞ কোভিড কালেও সচল ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, করোনায় লাকডাউনে স্থানীয়দের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও এই প্রকল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা মহামারীকালে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই ছিলেন।

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশ্বের সর্বাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্টসম্পন্ন ‘থার্ড জেনারেশন প্লাস ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রিয়েক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোসাটম। একই প্রযুক্তিতে রাশিয়ার নভোভরোনেঝ প্রদেশে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন চলমান আছে। এই প্রযুক্তির রিয়েক্টরের মেয়াদ ৬০ বছর, যা পরে আরও ২০ বছর বাড়ানো যায়।

এককভাবে আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। প্রকল্প ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) দেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

সোমবার, ০৪ অক্টোবর ২০২১ , ১৯ আশ্বিন ১৪২৮ ২৫ সফর ১৪৪৩

রূপপুরে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর ভ্যাসেল (পারমাণবিক চুল্লি পাত্র)’ স্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এই চুল্লিটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। যেখানে মূল জ্বালানি (ইউরেনিয়াম) থাকবে। এটিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হৃদপিন্ডও বলা হয়। চুল্লি স্থাপনের বিষয়টি বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ অক্টোবর বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (এনপিপি) পারমাণবিক চুল্লি পাত্র স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে ৮ অক্টোবর থেকে রূপপুরে উপস্থিত থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম এর মহাপরিচালক এলেক্সে লিখাচেভ এ উপলক্ষে ঢাকা আসবেন। ১০ অক্টোবর সকালে তিনি রূপপুরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সেখান থেকে ঢাকা ফিরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

এদিকে প্রকল্প পরিদর্শনে বেশ কয়েক দিন যাবৎ রূপপুরে ছিলেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। গতকাল দুপুরে ঢাকায় ফেরেন তিনি। প্রকল্পের অগ্রগতির সম্পর্কে গতকাল রাতে সংবাদকে তিনি বলেন, ‘অগ্রগতি তো দৃশ্যমান। নিয়মিত কাজ চলছে। ঈদুল আজহার দিনেও প্রকল্পের কাজ চলমান ছিল।’

‘করোনা মহামারীতে কাজে সমস্যা হয়নি? সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘মহামারীর শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশি ও বিদেশি কর্মীরা কাজ করছেন। রাশিয়ার সহযোগিতায় দেশীয় কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কারোনাকালেও গাইড লাইন অনুযায়ী প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের অগ্রগতির পাশাপাশি দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছে। একদিনের জন্যও কাজ বন্ধ রাখা হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য ৩৩৩ দশমিক ৬ টন ওজনের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেলটি রাশিয়ার ভলগা থেকে জলপথে কৃষ্ণসাগর এবং সুয়েজ ক্যানেল হয়ে প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পদ্মায় রূপপুর প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছায় গত বছরের অক্টোবরে। সেটি স্থাপনের জন্য দীর্ঘ এক বছর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অবকাঠামো প্রস্তুত করা হয়।

রোসাটমের প্রকৌশল শাখা ‘এসএসই জেএসসি’র তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর ভবনের অভ্যন্তরীণ ‘কন্টেইনমেন্ট ডোম’ এর ধাতব কাঠামো স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। ডোম স্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় একে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আরেকটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন এসএসই জেএসসি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক এলেক্সি ডেইরি।

এখন এই ইউনিটের পরবর্তী ধাপের কাজগুলো হলো- রিয়েক্টর ভেসেল, একটি স্টিম জেনারেটর ও একটি প্রধান সার্কুলেশন পাইপলাইন সংযোজন করা।

রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় দেশে নির্মাণাধীন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালে এবং একই ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট পরের বছর উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অধীনে এখানে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার কর্মী কাজ করছে। এই কর্মযজ্ঞ কোভিড কালেও সচল ছিল। স্থানীয়রা বলছেন, করোনায় লাকডাউনে স্থানীয়দের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও এই প্রকল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা মহামারীকালে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই ছিলেন।

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিশ্বের সর্বাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্টসম্পন্ন ‘থার্ড জেনারেশন প্লাস ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রিয়েক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রোসাটম। একই প্রযুক্তিতে রাশিয়ার নভোভরোনেঝ প্রদেশে নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন চলমান আছে। এই প্রযুক্তির রিয়েক্টরের মেয়াদ ৬০ বছর, যা পরে আরও ২০ বছর বাড়ানো যায়।

এককভাবে আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। প্রকল্প ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। ঋণ হিসেবে রাশিয়া দিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাকিটা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) দেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।