ইপিসি গ্লোবালের এমডি ও চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩

রাজধানীর বাড্ডা থেকে ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- এমডি মো. শাহিন মিয়া, চেয়ারম্যান মো. জুয়েল, অর্থ পরিচালক মো. সাদ্দাম হোসাইন।

র‌্যাব বলছে, গত সোমবার রাতে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোম্পানিটি অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনা করে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

র‌্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (অপ্স ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, কোম্পানিটির ইপিসিলাইট.কম ও ইপিসিপ্রোবিডি.কম নামে দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোম্পানিটির অফিসে অভিযান চালিয়ে এমডি চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, বিরিয়ানি ও খিচুরির গুঁড়া মশলা, চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, কোম্পানিটির নিত্যপণ্যের প্যাকেজ মূল্যসহ তালিকা, ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেডের ল্যান্ড প্রজেক্টের চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, আমানত আদায়ের মুড়ি বই, কম্পিউটার ও ৬টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তাদের ই-কমার্স আইটি নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। ওই লাইসেন্সের আড়ালে তারা এমএলএম ব্যবসা অনুসরণ করে ইপিসি কোম্পানি লিমিটেডের মোড়কে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন নিম্নমানের বিভিন্ন গুঁড়া মশলা, দারুচিনি, এলাচি, কিসমিস, লবণ, টুথ ব্রাশ, আয়না, সেভ ওয়েট গ্রোথ-ন্যাচারেল প্রোটিন পাউডার, ক্যালসিয়াম+ডি (ক্যাপসুল), ওমেগা৩-৬-৯ (ক্যাপসুল), ক্যালসিয়াম ডি (ক্যাপসুল), ডিক্টামনি-এন্টিবায়োটিক ক্রিম, সেভ টক্সিন ফাশ (হারবাল শরবত), এরাবিয়ান ঘাওয়া কফি, সেভ প্রোটিন প্লাস (প্রোটিন ফুড), ড্রিম ভ্যালী (লিকুইড ডিটারজেন্ট), বাথিং জেল (গোসলের লিকুইড সাবান), পানির ফিল্টারসহ ২১ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। বাস্তবে এসব পণ্যের কোন মজুদ তাদের কাছে নেই। গ্রাহকদের বিশ^াস অর্জন এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এসব চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত।

এছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠানের দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রতারণার আরেকটি অভিনব ফাঁদ। কোন গ্রাহক ১ হাজার ৩৫০ টাকা বিনিয়োগ করলে উক্ত ওয়েবসাইটে তার নামে একটি একাউন্ট খোলা হত এবং প্রতিদিন ১৫ টাকা হারে লভ্যাংশ তার হিসাবে জমা হত। উক্ত গ্রাহককে একটি পিন নাম্বার দেয়া হয়, যাতে উক্ত গ্রাহক নিজেই তার লেনদেনের তথ্য দেখতে পারেন। এভাবে ৫০০ টাকা লভ্যাংশ জমা হলে কোন গ্রাহক তার জমা উত্তোলন করতে পারতেন। এই প্রলোভনে পড়ে একজন গ্রাহক তার নিকট আত্মীয়দের উক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে এবং নিজেও অধিক লাভের আশায় ২০০-৩০০ একাউন্ট খুলত। কিন্তু লভ্যাংশ উত্তোলনের সময় উক্ত টাকা হতে ১০ শতাংশ অফেরতযোগ্য চার্জ এবং কেনাকাটার জন্য আরও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ কর্তন করা হত। এভাবে গ্রাহক যখন তাদের প্রতারণা বুঝতে পেরে আমানত ফেরত চায়, তখন তারা উক্ত গ্রাহকের একাউন্ট ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিত এবং তার সমস্ত আমানত জমার বিষয়টি অস্বীকার করত।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। এমডি শাহিন ও চেয়ারম্যান জুয়েল আগে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার ও সাদ্দাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করত। কাজের সূত্রে তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ। স্বল্প সময়ে বিনাপুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে তারা উক্ত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে ব্যবসার লোকসানের অজুহাতে তাদেরকে লভ্যাংশ ও আসল পরিশোধ করতে অনীহা প্রকাশ করত। এভাবে উক্ত চক্র লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে দশ হাজার গ্রাহকের দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় এমএলএম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার, ০৩ নভেম্বর ২০২১ , ১৮ কার্তিক ১৪২৮ ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

অনলাইনে এমএলএম ফাঁদ পেতে প্রতারণা

ইপিসি গ্লোবালের এমডি ও চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর বাড্ডা থেকে ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- এমডি মো. শাহিন মিয়া, চেয়ারম্যান মো. জুয়েল, অর্থ পরিচালক মো. সাদ্দাম হোসাইন।

র‌্যাব বলছে, গত সোমবার রাতে কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোম্পানিটি অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনা করে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

র‌্যাব-৩-এর স্টাফ অফিসার (অপ্স ও ইন্ট শাখা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, কোম্পানিটির ইপিসিলাইট.কম ও ইপিসিপ্রোবিডি.কম নামে দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোম্পানিটির অফিসে অভিযান চালিয়ে এমডি চেয়ারম্যানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, বিরিয়ানি ও খিচুরির গুঁড়া মশলা, চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, কোম্পানিটির নিত্যপণ্যের প্যাকেজ মূল্যসহ তালিকা, ইপিসি গ্লোবাল লিমিটেডের ল্যান্ড প্রজেক্টের চটকদার বিজ্ঞাপনের কপি, আমানত আদায়ের মুড়ি বই, কম্পিউটার ও ৬টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তাদের ই-কমার্স আইটি নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। ওই লাইসেন্সের আড়ালে তারা এমএলএম ব্যবসা অনুসরণ করে ইপিসি কোম্পানি লিমিটেডের মোড়কে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন নিম্নমানের বিভিন্ন গুঁড়া মশলা, দারুচিনি, এলাচি, কিসমিস, লবণ, টুথ ব্রাশ, আয়না, সেভ ওয়েট গ্রোথ-ন্যাচারেল প্রোটিন পাউডার, ক্যালসিয়াম+ডি (ক্যাপসুল), ওমেগা৩-৬-৯ (ক্যাপসুল), ক্যালসিয়াম ডি (ক্যাপসুল), ডিক্টামনি-এন্টিবায়োটিক ক্রিম, সেভ টক্সিন ফাশ (হারবাল শরবত), এরাবিয়ান ঘাওয়া কফি, সেভ প্রোটিন প্লাস (প্রোটিন ফুড), ড্রিম ভ্যালী (লিকুইড ডিটারজেন্ট), বাথিং জেল (গোসলের লিকুইড সাবান), পানির ফিল্টারসহ ২১ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। বাস্তবে এসব পণ্যের কোন মজুদ তাদের কাছে নেই। গ্রাহকদের বিশ^াস অর্জন এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যেই এসব চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হত।

এছাড়াও উক্ত প্রতিষ্ঠানের দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রতারণার আরেকটি অভিনব ফাঁদ। কোন গ্রাহক ১ হাজার ৩৫০ টাকা বিনিয়োগ করলে উক্ত ওয়েবসাইটে তার নামে একটি একাউন্ট খোলা হত এবং প্রতিদিন ১৫ টাকা হারে লভ্যাংশ তার হিসাবে জমা হত। উক্ত গ্রাহককে একটি পিন নাম্বার দেয়া হয়, যাতে উক্ত গ্রাহক নিজেই তার লেনদেনের তথ্য দেখতে পারেন। এভাবে ৫০০ টাকা লভ্যাংশ জমা হলে কোন গ্রাহক তার জমা উত্তোলন করতে পারতেন। এই প্রলোভনে পড়ে একজন গ্রাহক তার নিকট আত্মীয়দের উক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে এবং নিজেও অধিক লাভের আশায় ২০০-৩০০ একাউন্ট খুলত। কিন্তু লভ্যাংশ উত্তোলনের সময় উক্ত টাকা হতে ১০ শতাংশ অফেরতযোগ্য চার্জ এবং কেনাকাটার জন্য আরও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ কর্তন করা হত। এভাবে গ্রাহক যখন তাদের প্রতারণা বুঝতে পেরে আমানত ফেরত চায়, তখন তারা উক্ত গ্রাহকের একাউন্ট ওয়েবসাইট থেকে মুছে দিত এবং তার সমস্ত আমানত জমার বিষয়টি অস্বীকার করত।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। এমডি শাহিন ও চেয়ারম্যান জুয়েল আগে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিতে সেলস ম্যানেজার ও সাদ্দাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করত। কাজের সূত্রে তাদের একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাশ। স্বল্প সময়ে বিনাপুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশে তারা উক্ত প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে ব্যবসার লোকসানের অজুহাতে তাদেরকে লভ্যাংশ ও আসল পরিশোধ করতে অনীহা প্রকাশ করত। এভাবে উক্ত চক্র লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম কার্যক্রম পরিচালনা করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে দশ হাজার গ্রাহকের দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় এমএলএম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে।