১০ স্কুল প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে থানায় অভিযোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প, লক্ষ্য ঢাকার কাছেই ১০টি স্কুল স্থাপন করা। নেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। কিন্তু এর বাস্তবায়নের শুরুতেই ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ওঠে, আবার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও শুরু হয় প্রভাবশালী মহলের ‘লড়াই’। সর্বশেষ এই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে শিক্ষা ক্যাডারে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে ঢাকার তিন থানায় চারটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মাউশি মহাপরিচালকসহ চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা চারজনই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য। জিডিতে প্রভাষকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

ওই প্রভাষকের নাম আবদুর রাজ্জাক। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বহুল আলোচিত ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা; দীর্ঘদিন তিনি ওএসডি ছিলেন। গত ৩১ অক্টোবর তাকে রাজধানীর একটি সরকারি কলেজে পদায়ন করা হয়।

আবদুর রাজ্জাকের দাবি, মূলত প্রকল্পের দুর্নীতির প্রতিবাদ করার কারণেই তার বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আবদুর রাজ্জাক গত ২৩ অক্টোবর নিজের ফেইসবুক আইডিতে বলেন, ‘পৃথক তিনজন সহকর্মীর থেকে শুনলাম আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমাকে কোথাও লাঞ্ছিত করা হলে নি¤েœর ব্যক্তিবর্গ দায়ী থাকবেন।’

ফেইসবুকে রাজ্জাক আরও বলেন, ‘আমাকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে এই ব্যক্তিগণ দায়ী থাকবেন। আমি বেঁচে থাকলে এই দুর্নীতি মামলার প্রমাণ করে যাব।’

ওই ফেইসবুক মন্তবের কারণেই জিডি করেন চার কর্মকর্তা। তারা হলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিল আফরোজ বিনতে আছির, মাউশির ওএসডি কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মহাম্মদপুর থানায় জিডি (জিডি নম্বর-১৮৪২) করেছেন। জিডি করার কারণ জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমি টেলিফোনে কোন কিছু বলতে পারব না। আমার কাছে লিখিতভাবে জানতে চাইলে আমি বলব।’ পরদিন (২৪ অক্টোবর) শাহবাগ থানায় মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, সহকারী পরিচালক দিল আফরোজ বিনতে আছির (জিডি নম্বর-১৭০২) এবং রমনা থানায় জিডি (জিডি নম্বর-১৩৪০) করেন ওএসডি কর্মকর্তা ও ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে দিল আফরোজ ও আমিরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তাদের যা বলার জিডিতে উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে তাদের কোন বক্তব্য নেই। আর মাউশি মহাপরিচালকও এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে আবদুর রাজ্জাক সংবাদকে বলেন, ‘ওনাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, মামলা চলমান আছে। তারা ৪৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতি করছিল। আমি সেই ফাইল ধরেছি; এ কারণে তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। আমি নিজেই জিডির আর্জি জানিয়েছিলাম; কিন্তু প্রশাসন আমার আর্জি নেয়নি। এখন আমার বিরুদ্ধে তারা জিডি করেছেন। আমি এটি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’

ওই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান আছে জানিয়ে রাজ্জাক দাবি করেন, ‘মামলা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করেছে। তারা ইতোমধ্যে কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং আমার আর্জি শতভাগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’

তবে আমিরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি, এ কারণে মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও কোন কিছুর প্রমাণ মিলেনি। পিবিআইয়ের তদন্তেও সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।’

রাজ্জাকের বিরুদ্ধে করা জিডিতে বলা হয়েছে, ‘বিবাদী কর্তৃক মিথ্যা তথ্যসম্বলিত পোস্টটি প্রকাশ করায় আমাকে সামাজিকভাবে অত্যধিক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণে আমার সুনাম ও সম্মানহানী হচ্ছে। তাছাড়া বিবাদী নাটক সাজিয়ে আমার/আমাদের যেকোন ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে মর্মে আশঙ্কা করছি। এমতাবস্থায়, বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ডাইরিভুক্ত এবং প্রয়োজনীয় তদন্তপূর্বক দোষী বা দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন।’

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ফেইসবুকে ওইসব মন্তব্য করা যায় কীনা জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ‘আমার বাসায় এসে বলে গেছেন, আপনার প্রাণনাশের সম্ভাবনা আছে, আপনি সাবধানে চলাফেরা করবেন। তাহলে আমি কী করব? তারা যে আমাকে হুমকি দিয়েছেন সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে।’

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত নন; তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে মন্তব্য করলেন কেন- এমন প্রশ্নের বিষয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘তিনি একজন বিসিএস ক্যাডার সদস্য। তিনি কোনক্রমেই দুই জায়গা থেকে বেতন নিতে পারেন না। তিনি বেতনের পাশাপাশি লালমাটিয়া কলেজ থেকে দেড় লাখ টাকা অভিজ্ঞতা ভাতা নিচ্ছেন। এটা দুর্নীতি। চাকরির পাশাপাশি তিনি ডেভেলপার ব্যবসাও করছেন। তাছাড়া তিনি কলেজটি সরকারিকরণের আগ মুহূর্তে ৫০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন; যা তিনি পারেন না। আমি এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি।’

জিডি ও দুর্নীতির অভিযোগের নেপথ্যে

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ১০টি নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা; আর বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

কিন্তু বাস্তবায়নের শুরুতেই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবিত স্থানের গাছ-পালা কাটা ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অভিযোগে ‘ঢাকার সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের ৩০০ কোটি টাকা ‘লুটপাটের’ অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও একটি স্কুলের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ওই জটিলতায় ‘পিছু হুটে’ প্রশাসন।

প্রকল্পে অনিয়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিনকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য মাউশির পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পে কোন আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ হয়নি, দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না, অভিযোগটি শুধু অনুমান ছিল।’

এরপর প্রকল্পের সাবেক পিডি, মাউশি শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন প্রকল্পের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। তার দাবি, মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পে দুর্নীতির ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে ওঠে। এই মামলা তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই। তারা সম্প্রতি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।

আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও প্রকল্পের সাবেক পরিচালক (পিডি) ড. আমিরুল ইসলাম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক দিল আফরোজ বিনতে আছিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (ডিপি) গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার শুনানি এখন চলমান। মূলত ওই ঘটনার পরই মাউশির কর্মকর্তা ও রাজ্জাকের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১ , ২০ কার্তিক ১৪২৮ ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

১০ স্কুল প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে থানায় অভিযোগ

রাকিব উদ্দিন

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প, লক্ষ্য ঢাকার কাছেই ১০টি স্কুল স্থাপন করা। নেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। কিন্তু এর বাস্তবায়নের শুরুতেই ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ওঠে, আবার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়েও শুরু হয় প্রভাবশালী মহলের ‘লড়াই’। সর্বশেষ এই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে শিক্ষা ক্যাডারে।

এরই ধারাবাহিকতায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের এক প্রভাষকের বিরুদ্ধে ঢাকার তিন থানায় চারটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন মাউশি মহাপরিচালকসহ চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা চারজনই বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্য। জিডিতে প্রভাষকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।

ওই প্রভাষকের নাম আবদুর রাজ্জাক। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বহুল আলোচিত ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা; দীর্ঘদিন তিনি ওএসডি ছিলেন। গত ৩১ অক্টোবর তাকে রাজধানীর একটি সরকারি কলেজে পদায়ন করা হয়।

আবদুর রাজ্জাকের দাবি, মূলত প্রকল্পের দুর্নীতির প্রতিবাদ করার কারণেই তার বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আবদুর রাজ্জাক গত ২৩ অক্টোবর নিজের ফেইসবুক আইডিতে বলেন, ‘পৃথক তিনজন সহকর্মীর থেকে শুনলাম আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমাকে কোথাও লাঞ্ছিত করা হলে নি¤েœর ব্যক্তিবর্গ দায়ী থাকবেন।’

ফেইসবুকে রাজ্জাক আরও বলেন, ‘আমাকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে এই ব্যক্তিগণ দায়ী থাকবেন। আমি বেঁচে থাকলে এই দুর্নীতি মামলার প্রমাণ করে যাব।’

ওই ফেইসবুক মন্তবের কারণেই জিডি করেন চার কর্মকর্তা। তারা হলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দিল আফরোজ বিনতে আছির, মাউশির ওএসডি কর্মকর্তা ড. আমিরুল ইসলাম ও লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. রফিকুল ইসলাম গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মহাম্মদপুর থানায় জিডি (জিডি নম্বর-১৮৪২) করেছেন। জিডি করার কারণ জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমি টেলিফোনে কোন কিছু বলতে পারব না। আমার কাছে লিখিতভাবে জানতে চাইলে আমি বলব।’ পরদিন (২৪ অক্টোবর) শাহবাগ থানায় মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, সহকারী পরিচালক দিল আফরোজ বিনতে আছির (জিডি নম্বর-১৭০২) এবং রমনা থানায় জিডি (জিডি নম্বর-১৩৪০) করেন ওএসডি কর্মকর্তা ও ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে দিল আফরোজ ও আমিরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তাদের যা বলার জিডিতে উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে তাদের কোন বক্তব্য নেই। আর মাউশি মহাপরিচালকও এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে আবদুর রাজ্জাক সংবাদকে বলেন, ‘ওনাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, মামলা চলমান আছে। তারা ৪৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতি করছিল। আমি সেই ফাইল ধরেছি; এ কারণে তারা হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। আমি নিজেই জিডির আর্জি জানিয়েছিলাম; কিন্তু প্রশাসন আমার আর্জি নেয়নি। এখন আমার বিরুদ্ধে তারা জিডি করেছেন। আমি এটি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’

ওই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান আছে জানিয়ে রাজ্জাক দাবি করেন, ‘মামলা পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করেছে। তারা ইতোমধ্যে কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছে এবং আমার আর্জি শতভাগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’

তবে আমিরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি, এ কারণে মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও কোন কিছুর প্রমাণ মিলেনি। পিবিআইয়ের তদন্তেও সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।’

রাজ্জাকের বিরুদ্ধে করা জিডিতে বলা হয়েছে, ‘বিবাদী কর্তৃক মিথ্যা তথ্যসম্বলিত পোস্টটি প্রকাশ করায় আমাকে সামাজিকভাবে অত্যধিক বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং প্রচুর পরিমাণে আমার সুনাম ও সম্মানহানী হচ্ছে। তাছাড়া বিবাদী নাটক সাজিয়ে আমার/আমাদের যেকোন ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে মর্মে আশঙ্কা করছি। এমতাবস্থায়, বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য ডাইরিভুক্ত এবং প্রয়োজনীয় তদন্তপূর্বক দোষী বা দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা প্রয়োজন।’

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ফেইসবুকে ওইসব মন্তব্য করা যায় কীনা জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক বলেন, তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ‘আমার বাসায় এসে বলে গেছেন, আপনার প্রাণনাশের সম্ভাবনা আছে, আপনি সাবধানে চলাফেরা করবেন। তাহলে আমি কী করব? তারা যে আমাকে হুমকি দিয়েছেন সেই প্রমাণ আমার কাছে আছে।’

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ‘১০ স্কুল প্রকল্পের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত নন; তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে মন্তব্য করলেন কেন- এমন প্রশ্নের বিষয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘তিনি একজন বিসিএস ক্যাডার সদস্য। তিনি কোনক্রমেই দুই জায়গা থেকে বেতন নিতে পারেন না। তিনি বেতনের পাশাপাশি লালমাটিয়া কলেজ থেকে দেড় লাখ টাকা অভিজ্ঞতা ভাতা নিচ্ছেন। এটা দুর্নীতি। চাকরির পাশাপাশি তিনি ডেভেলপার ব্যবসাও করছেন। তাছাড়া তিনি কলেজটি সরকারিকরণের আগ মুহূর্তে ৫০ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন; যা তিনি পারেন না। আমি এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেছি।’

জিডি ও দুর্নীতির অভিযোগের নেপথ্যে

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ১০টি নতুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা; আর বাস্তবায়ন মেয়াদ নির্ধারণ হয় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

কিন্তু বাস্তবায়নের শুরুতেই স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবিত স্থানের গাছ-পালা কাটা ও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা অভিযোগে ‘ঢাকার সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের ৩০০ কোটি টাকা ‘লুটপাটের’ অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও একটি স্কুলের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ওই জটিলতায় ‘পিছু হুটে’ প্রশাসন।

প্রকল্পে অনিয়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিনকে সভাপতি করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য মাউশির পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রকল্পে কোন আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ হয়নি, দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল না, অভিযোগটি শুধু অনুমান ছিল।’

এরপর প্রকল্পের সাবেক পিডি, মাউশি শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন প্রকল্পের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। তার দাবি, মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পে দুর্নীতির ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে ওঠে। এই মামলা তদন্তের দায়িত্বে আছে পিবিআই। তারা সম্প্রতি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।

আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও প্রকল্পের সাবেক পরিচালক (পিডি) ড. আমিরুল ইসলাম এবং মাউশির সহকারী পরিচালক দিল আফরোজ বিনতে আছিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (ডিপি) গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যার শুনানি এখন চলমান। মূলত ওই ঘটনার পরই মাউশির কর্মকর্তা ও রাজ্জাকের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বৃদ্ধি পায়।