আলোর তৃষ্ণায় জাগো

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

রাষ্ট্রে আনন্দে বাস করতে নাগরিকদের জন্যে অনেকগুলো ইতিবাচক অনুষঙ্গ প্রয়োজন হয়। মৌলিক এবং স্বাভাবিক নিরাপত্তা বোধ, উন্নত নৈতিকতার অনুকরণীয় সরণি, শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্তানদের জন্যে যথার্থভাবে শিক্ষিত হয়ে ওঠার সময়োপোযোগী কার্যক্রম- এ সকলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক জীবনে মৌলিক অর্থিক সঙ্গতির পাশাপাশি। কিন্তু আমাদের সামনে চলমান সময়ে প্রত্যক্ষ করছি, বাংলাদেশের আর্থিক শক্তি ক্রমশ বাড়ছে, তবুও জনগণের ভেতর নিয়মিত নিরাপত্তাহীনতার আশাঙ্কা, আর জীবন যাপনের সুর তাল, লয় কেটে যাবার মতো অনুভব প্রবল। কিন্তু কেন এমন বোধ? ক্ষমতার প্রান্তিক সারিতে থাকা মানুষেরা নিজের পকেটে হাত দিয়ে টাকার অস্তিত্ব টের পাবার পরেও কেনো ভাবে, তারা ভালো নাই? পত্রিকা পড়ে মন খারাপে করে প্রতিনিয়ত? এতো যন্ত্রণার ছাপ, এতো প্রকাশিত অত্যাচারে গল্প পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে সকলের কাছে!

একাধিক প্রশ্ন তখন মনের কোনে উঁকি দেয়। এ সমাজে বৈরী আঁধার কি হয়ে উঠছে প্রবল? ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে কি আমাদের সমাজ? এক ভিন্ন অবয়বের ধনী আঁধার কি অনেক ক্ষমতাধর, দাপুটে এখন? আপন অন্তর ভুবনে আসন পেতে থাকা বিস্তৃত অলিন্দগুলো কি পরাজিত আলোর কোনো ঈঙ্গিতে উঠছে কুঁকড়ে? আমার চারদিকে এখন কি কেনো অভিশম্পাতের ছোবল উদ্যত?

এ সকল প্রশ্নের মীমাংসিত উত্তর প্রত্যাশা করেও তারা বহু দূরে মায়ায় কুয়াশার চাদর জড়িয়ে অস্পষ্ট। সুতরাং কোথাও কোনো স্থিরতা নাই। কিন্তু আমি তো অনেকের সাথে গ্রন্থিত হয়ে পেতে চাই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ আঁধার, যেখান হতে ভোরের নদীতে বকের ডানায় প্রথম প্রভাতের ছলকে ওঠা আলোর রোশনাই দেখব। কে দেবে আমাকে, আমাদেরকে? নেতারা বলেছিলো দেবো। আমাদের সংবিধান বলেছিলো, ‘নাও, বাধা নেই।’ তবুও যখন আমি পত্রিকা মেলি সাতসকালে, ভারি হয়ে মন। এতো খুন, এতো ধর্ষণ, এতো চুরি আর মানুষেরর অধিকার লঙ্ঘনের খবর কখনো তো দেখিনি এই দেশে! যে মাটির শ্যামলিমায় গান গাইবো, সে মাটিতে প্রকাশ্যে মানুষ কোপানোর বিষণ্ন দাগ লেগে। যে স্কুলঘরে পাঠে নিমগ্ন হবো, সেখানে কিছু শিক্ষকের হাতে তারই নারী শিক্ষার্থী ধর্ষণের উন্মত্ত ছাপ। যে মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন পাকের নূরে নিজেকে স্নাত করতে আপন কন্যা আর পুত্রকে পাঠাই, সেই সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আমাদের সন্তানেরা নিরাপদ নয়। সে মাদ্রাসায় আমার কন্যা তারই শিক্ষক দ্বারা অত্যাচারিত, ধর্ষিত। এই তো সেদিন ফেনিতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তার ছাত্রদের দিয়ে কোরোসিন ঢেলে তার ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠলো।

কেন এমন হবে? যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানেরা ধর্মীয় শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হবে, নিজেকে গড়ে তুলবে নৈতিকতায় উন্নত সঠিক মানব সন্তান। কিন্তু সে তারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে ধর্ষিত, বলাৎকারের শিকার। এমন পরিস্থিতিেিত এখনো দেখিনি কোথাও যে, মাদ্রাসা বোর্ডের নেতারা বা কওমি মাদ্রাসার নেতৃত্বস্থানীয় মওলানা সাহেবরা কঠোর বিবৃতি প্রদান করেছেন এই বলে, তারা ঐ সকল মাদ্রাসার ধর্ষক শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চান। তারা প্রবল প্রতিবাদে পথেও নামেনি। কিন্তু কেনো এ অবক্ষয়? কেনো এ জাহান্নামের আগুনে তাদের হাত পোড়া? কোনো জবাব কোনোদিক হতে কেউ সঠিক করে দেয় না।

এসব দেখে বুকের ভেতর পাথরচাপা কান্না। কখনো বোবা হয়ে উঠছে সময়। কার কাছে যাবো? আইনের কাছে? আদালতের কাছে? সেখানেও বিপত্তি। পত্রিকায় যখন দেখি, পুলিশের ডিআইজি মিজান দুদুক কর্মকর্তাকে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ সাধে, তখন একটা খোলা দৃশ্য অবয়ব নিয়ে ফুটে ওঠে; তা হলো, পুলিশ কাঠামোতে এমন অপরাধে যুক্ত হবার লোকেরা তাহলে আছে, যাদের কাছে আমরা নিরাপদ নই। কেননা, এমন ধরনের পুলিশ কর্মকর্তার হাতে তাহলে অবৈধ অর্থ প্রচুর। আর এমন অবৈধ অর্থ তার হতে জমা হয়েছে পুলিশ হিসেবে রাষ্ট্র তার কাছে যে ক্ষমতা দিয়েছিল, সে তার অপব্যবহার করেছে। সে দুষ্টকে লালন করেছে, আদর করেছে দমনের বিপরীতে। তাহলে অসংখ্য দুষ্টর লালনে, অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ তাদের ন্যায্যতায় আইনের আশ্রয় লাভ করেনি। নির্যাতিত হয়েছে। নিষ্পেশিত হয়েছে। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। এমন তো আমাদের পুলিশ বাহিনীর শপথ তাদেরকে শেখায় না। তাও এসব ঘটছে, ঘটে।

এসব ভাবনায় প্রবল হাহাকার ঘূর্ণি হয়ে ওঠে আমাদের চারদিকে। রাজনীতি করা আমাদের নেতারা বলেছিলেন, আমাদের, সাধারণের আয় বাড়বে। তা বেড়েছে। তারা বলেছেন, আমাদের সাধারণদের গৃহ হবে সুখের নন্দন। হ্যাঁ, আমাদের অনেকের গৃহ হয়েছে। সুদৃশ্য গৃহও আছে আমাদের অনেকের। নেতারা বলেছে বারম্বার, ‘আমাদের পথ হবে, আমার এগিয়ে চলার নিরাপত্তায় অনন্য।’ জনগণের সামগ্রিক সুরক্ষায় একই সুরে সংবিধান ১৫ নং ধারায় বলেছে, “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়:

(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;

(খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;

(গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; এবং

(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার।

এটা তো উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লিখিত এবং মৌলিক ভিত্তি। তবু কি পাই এসব আমরা? যদি পেয়ে যেতাম আমরা, সাধারণেরা; তবে এ দেশে কেমনে ঋণখেলাপি গজায়? জনগণের ব্যাংক হতে ক্ষমতার দাপটে, বা অপরাধের পথ ধরে সুকৌশলে অর্থকড়ি নিজের পকেটে ভরছে কেউ এবং এরপর ফেরৎ দেবার নামনিশানা নাই। ব্যাংকগুলো খোকলা হয়ে উঠছে। জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল। এতে দেখা গেছে, শীর্ষ ৩শ ঋণখেলাপির যে তালিকা রয়েছে, তাতে বরাবরের মতোই এবারও আসেনি রাঘববোয়ালদের নাম। অর্থমন্ত্রীর তুলে ধরা তথ্যমতে, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে ১৪ হাজার ৬১৭ জন। এসব ঋণগ্রহীতার অধিকাংশই ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। সর্বসাকল্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকাশ করা হয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণগ্রহীতাদের তালিকাও। তালিকা বিশ্লেষণ করে পত্রিকাগুলো বলছে, নামেবেনামে কোম্পানি খুলে বড় বড় গ্রুপের পক্ষে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব গ্রুপের একেকটিতে ৩০টা কোম্পানি পর্যন্ত রয়েছে। এসব কোম্পানির বিপরীতে ৩০ থেকে ৩৫টি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ করা তালিকায় এসব গ্রুপের নাম আসেনি; এসেছে তাদের দু-একটি কোম্পানির নাম।

একদিকে যেমন ঋণ খোলাপির তালিকা লম্বা, অন্যদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশে লোকেদের টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে। এখানে কি কোনো যোগসূত্র আছে? ঘটনাচক্রের দৃশ্য ঠিক এরকম, ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৯ শতাংশ বা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) সম্প্রতি ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য পাওয়া গেছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। তবে ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশি মূদ্রায় এক সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য এখন ৮৬ টাকার একটু বেশি। এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বছরেও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। যেমন ২০১৩ সালে বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মূদ্রায় ৩ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।

এদেশের ঋণ খেলাপী বা সুইস ব্যাংকে অর্থ জমানোয় একটি মিলিত ছন্দ আছে, একই বেহালায় ঝংকৃত সুর আছে। যে সুর আমরা সাধারণেরা ধরতে পারি না। আমরা তা ভাঙতে পারি না। কেনো পারি না? কেননা, অমন অপরাধ করা মানুষেরা কিন্তু কেউ মধ্যবিত্ত পরিবারের নয়, নয় তারা কৃষকের সন্তান, কেউ তারা কুলি-মজুরও নয়। সকলেই বিত্ত বৈভবের মালিক । তাদের আরোও চাই এবং তারা রাষ্ট্রের মানুষের পকেট কেটে রাষ্ট্রের কোষাগার সুকৌশলে ছিদ্র করে নিজের পকেটে তা ঢোকায়। এই যে তারা যখন এ কা-টি করে, তখন তারা সকলে একটি সুনিপুণ পরিশুদ্ধ অপরাধ কর্ম করে, প্রতারণার আশ্রয় নেয় এবং তাতে সহায়তা করে কারা? বলাই বাহুল্য, সকল বুঝদার আরা রাষ্ট্র্র কাঠামোর বৃহৎ কুরসিতে বসে থাকা মহাশয়গণ।

আর এমন প্রক্রিয়ায় লাখো যোদ্ধার রক্তস্নাত বাংলাদেশে জনগণকে দেয়া সংবিধানের ওয়াদা, জনগণের কাছে খেলাপি হয়ে ওঠে। তখন ব্যথিত হয়ে ওঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরলোকে বাস করা আত্মা। ব্যথিত হয়ে পরে পবিত্র সংবিধানের ধারাগুলো। আর সাধারণ জনগণ অনুভব করে বাংলাদেশে মাথা পিছু আয় বাড়লেও, সে অর্থে আমাদের কোনো ভাগ নাই। আমাদের তো দিন আনতে পান্তা ফুরায় অর্থ কেলেংকারি করা অপরাধিদের অনৈতিক দাম্ভিকতায় সমাজে নৈতিকতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে বলে। তাহলে এ থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় কী? কী করে জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে পারে আপন মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায়? এমন কর্কষ প্রশ্নে চারদিকে তখন একটি সিম্ফনী ওঠে,- “আলোর তৃষ্ণায় জাগো সকলে।”

image

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

আরও খবর
৬৯ বছরে সংবাদ
ভাষা থেকে ভূখন্ড
স্মৃতিময় সংবাদ-এর ৬৯ বছর
একটি রাজনৈতিক পাঠ
সংবাদ : কিছু কথা কিছু স্মৃতি
যুগে যুগে সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা
ইতিহাস ঐতিহ্য ও আদর্শের স্মারক দৈনিক সংবাদ
কেন লিখি
সংবাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার
ঐতিহ্য আর মুক্তচিন্তার সংবাদ
আমার সংবাদ সংবাদের আমি
বিচিত্র জীবিকা বিচিত্র জীবন
ঋতুপর্ণ ঘোষের এলোমেলো দেশকাল
চীন ও বাংলাদেশ : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সম্পর্ক
সংবাদের জলসাঘর
আমরা এখন শান্ত হয়ে আছি
মাটির মাধুর্য
কষ্টের ঢাকা স্বপ্নের বাংলাদেশ
তোমারে বধিবে যে...
বঙ্গবন্ধুর জনকল্যাণের অর্থনৈতিক নীতি কৌশল
শারহুল পটবসন্ত ও বজলুর রহমান
শিশুশিক্ষায় শিল্প-সাহিত্য-সংগীত
গণমাধ্যমের হাল-হকিকত
এবং বজলুর রহমান স্মৃতিপদক
দুর্নীতি, পেশাদারিত্ব ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চার ভবিষ্যৎ
চেতনায় নৈতিকতা মূল্যবোধ : বিরুদ্ধবাস্তবতা
সবার উপরে মানুষ সত্য
আহমদুল কবির শ্রদ্ধাঞ্জলি
কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন
‘সংবাদ’ আমারই ছিল আমারই আছে
আমাদের ‘সংবাদ’
নারীর অধিকার ও সচেতনতা
গণমাধ্যমে বিশ্বাস কমছে পাঠকের
নারী ও তার বিধাতা পুরুষ
বাংলাদেশের নারী
সংবাদের কাছে আমি ঋণী
বিস্মৃতিপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের অক্ষমতা
যে দীপশিখা দিয়েছে আলো

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

আলোর তৃষ্ণায় জাগো

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

image

শিল্পী : সঞ্জয় দে রিপন

রাষ্ট্রে আনন্দে বাস করতে নাগরিকদের জন্যে অনেকগুলো ইতিবাচক অনুষঙ্গ প্রয়োজন হয়। মৌলিক এবং স্বাভাবিক নিরাপত্তা বোধ, উন্নত নৈতিকতার অনুকরণীয় সরণি, শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্তানদের জন্যে যথার্থভাবে শিক্ষিত হয়ে ওঠার সময়োপোযোগী কার্যক্রম- এ সকলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক জীবনে মৌলিক অর্থিক সঙ্গতির পাশাপাশি। কিন্তু আমাদের সামনে চলমান সময়ে প্রত্যক্ষ করছি, বাংলাদেশের আর্থিক শক্তি ক্রমশ বাড়ছে, তবুও জনগণের ভেতর নিয়মিত নিরাপত্তাহীনতার আশাঙ্কা, আর জীবন যাপনের সুর তাল, লয় কেটে যাবার মতো অনুভব প্রবল। কিন্তু কেন এমন বোধ? ক্ষমতার প্রান্তিক সারিতে থাকা মানুষেরা নিজের পকেটে হাত দিয়ে টাকার অস্তিত্ব টের পাবার পরেও কেনো ভাবে, তারা ভালো নাই? পত্রিকা পড়ে মন খারাপে করে প্রতিনিয়ত? এতো যন্ত্রণার ছাপ, এতো প্রকাশিত অত্যাচারে গল্প পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে সকলের কাছে!

একাধিক প্রশ্ন তখন মনের কোনে উঁকি দেয়। এ সমাজে বৈরী আঁধার কি হয়ে উঠছে প্রবল? ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে কি আমাদের সমাজ? এক ভিন্ন অবয়বের ধনী আঁধার কি অনেক ক্ষমতাধর, দাপুটে এখন? আপন অন্তর ভুবনে আসন পেতে থাকা বিস্তৃত অলিন্দগুলো কি পরাজিত আলোর কোনো ঈঙ্গিতে উঠছে কুঁকড়ে? আমার চারদিকে এখন কি কেনো অভিশম্পাতের ছোবল উদ্যত?

এ সকল প্রশ্নের মীমাংসিত উত্তর প্রত্যাশা করেও তারা বহু দূরে মায়ায় কুয়াশার চাদর জড়িয়ে অস্পষ্ট। সুতরাং কোথাও কোনো স্থিরতা নাই। কিন্তু আমি তো অনেকের সাথে গ্রন্থিত হয়ে পেতে চাই একটি বন্ধুত্বপূর্ণ আঁধার, যেখান হতে ভোরের নদীতে বকের ডানায় প্রথম প্রভাতের ছলকে ওঠা আলোর রোশনাই দেখব। কে দেবে আমাকে, আমাদেরকে? নেতারা বলেছিলো দেবো। আমাদের সংবিধান বলেছিলো, ‘নাও, বাধা নেই।’ তবুও যখন আমি পত্রিকা মেলি সাতসকালে, ভারি হয়ে মন। এতো খুন, এতো ধর্ষণ, এতো চুরি আর মানুষেরর অধিকার লঙ্ঘনের খবর কখনো তো দেখিনি এই দেশে! যে মাটির শ্যামলিমায় গান গাইবো, সে মাটিতে প্রকাশ্যে মানুষ কোপানোর বিষণ্ন দাগ লেগে। যে স্কুলঘরে পাঠে নিমগ্ন হবো, সেখানে কিছু শিক্ষকের হাতে তারই নারী শিক্ষার্থী ধর্ষণের উন্মত্ত ছাপ। যে মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন পাকের নূরে নিজেকে স্নাত করতে আপন কন্যা আর পুত্রকে পাঠাই, সেই সকল ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আমাদের সন্তানেরা নিরাপদ নয়। সে মাদ্রাসায় আমার কন্যা তারই শিক্ষক দ্বারা অত্যাচারিত, ধর্ষিত। এই তো সেদিন ফেনিতে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তার ছাত্রদের দিয়ে কোরোসিন ঢেলে তার ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে অঙ্গার করে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠলো।

কেন এমন হবে? যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমাদের সন্তানেরা ধর্মীয় শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত হবে, নিজেকে গড়ে তুলবে নৈতিকতায় উন্নত সঠিক মানব সন্তান। কিন্তু সে তারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হচ্ছে ধর্ষিত, বলাৎকারের শিকার। এমন পরিস্থিতিেিত এখনো দেখিনি কোথাও যে, মাদ্রাসা বোর্ডের নেতারা বা কওমি মাদ্রাসার নেতৃত্বস্থানীয় মওলানা সাহেবরা কঠোর বিবৃতি প্রদান করেছেন এই বলে, তারা ঐ সকল মাদ্রাসার ধর্ষক শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি চান। তারা প্রবল প্রতিবাদে পথেও নামেনি। কিন্তু কেনো এ অবক্ষয়? কেনো এ জাহান্নামের আগুনে তাদের হাত পোড়া? কোনো জবাব কোনোদিক হতে কেউ সঠিক করে দেয় না।

এসব দেখে বুকের ভেতর পাথরচাপা কান্না। কখনো বোবা হয়ে উঠছে সময়। কার কাছে যাবো? আইনের কাছে? আদালতের কাছে? সেখানেও বিপত্তি। পত্রিকায় যখন দেখি, পুলিশের ডিআইজি মিজান দুদুক কর্মকর্তাকে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ সাধে, তখন একটা খোলা দৃশ্য অবয়ব নিয়ে ফুটে ওঠে; তা হলো, পুলিশ কাঠামোতে এমন অপরাধে যুক্ত হবার লোকেরা তাহলে আছে, যাদের কাছে আমরা নিরাপদ নই। কেননা, এমন ধরনের পুলিশ কর্মকর্তার হাতে তাহলে অবৈধ অর্থ প্রচুর। আর এমন অবৈধ অর্থ তার হতে জমা হয়েছে পুলিশ হিসেবে রাষ্ট্র তার কাছে যে ক্ষমতা দিয়েছিল, সে তার অপব্যবহার করেছে। সে দুষ্টকে লালন করেছে, আদর করেছে দমনের বিপরীতে। তাহলে অসংখ্য দুষ্টর লালনে, অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ তাদের ন্যায্যতায় আইনের আশ্রয় লাভ করেনি। নির্যাতিত হয়েছে। নিষ্পেশিত হয়েছে। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। এমন তো আমাদের পুলিশ বাহিনীর শপথ তাদেরকে শেখায় না। তাও এসব ঘটছে, ঘটে।

এসব ভাবনায় প্রবল হাহাকার ঘূর্ণি হয়ে ওঠে আমাদের চারদিকে। রাজনীতি করা আমাদের নেতারা বলেছিলেন, আমাদের, সাধারণের আয় বাড়বে। তা বেড়েছে। তারা বলেছেন, আমাদের সাধারণদের গৃহ হবে সুখের নন্দন। হ্যাঁ, আমাদের অনেকের গৃহ হয়েছে। সুদৃশ্য গৃহও আছে আমাদের অনেকের। নেতারা বলেছে বারম্বার, ‘আমাদের পথ হবে, আমার এগিয়ে চলার নিরাপত্তায় অনন্য।’ জনগণের সামগ্রিক সুরক্ষায় একই সুরে সংবিধান ১৫ নং ধারায় বলেছে, “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদনশক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন, যাহাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়:

(ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা;

(খ) কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করিয়া যুক্তিসঙ্গত মজুরীর বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার;

(গ) যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার; এবং

(ঘ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্যলাভের অধিকার।

এটা তো উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লিখিত এবং মৌলিক ভিত্তি। তবু কি পাই এসব আমরা? যদি পেয়ে যেতাম আমরা, সাধারণেরা; তবে এ দেশে কেমনে ঋণখেলাপি গজায়? জনগণের ব্যাংক হতে ক্ষমতার দাপটে, বা অপরাধের পথ ধরে সুকৌশলে অর্থকড়ি নিজের পকেটে ভরছে কেউ এবং এরপর ফেরৎ দেবার নামনিশানা নাই। ব্যাংকগুলো খোকলা হয়ে উঠছে। জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের তালিকা তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল। এতে দেখা গেছে, শীর্ষ ৩শ ঋণখেলাপির যে তালিকা রয়েছে, তাতে বরাবরের মতোই এবারও আসেনি রাঘববোয়ালদের নাম। অর্থমন্ত্রীর তুলে ধরা তথ্যমতে, ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে ১৪ হাজার ৬১৭ জন। এসব ঋণগ্রহীতার অধিকাংশই ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। সর্বসাকল্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকাশ করা হয়েছে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণগ্রহীতাদের তালিকাও। তালিকা বিশ্লেষণ করে পত্রিকাগুলো বলছে, নামেবেনামে কোম্পানি খুলে বড় বড় গ্রুপের পক্ষে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব গ্রুপের একেকটিতে ৩০টা কোম্পানি পর্যন্ত রয়েছে। এসব কোম্পানির বিপরীতে ৩০ থেকে ৩৫টি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ করা তালিকায় এসব গ্রুপের নাম আসেনি; এসেছে তাদের দু-একটি কোম্পানির নাম।

একদিকে যেমন ঋণ খোলাপির তালিকা লম্বা, অন্যদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশে লোকেদের টাকা জমার পরিমাণ বাড়ছে। এখানে কি কোনো যোগসূত্র আছে? ঘটনাচক্রের দৃশ্য ঠিক এরকম, ২০১৮ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৯ শতাংশ বা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেড়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) সম্প্রতি ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০১৮’ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য পাওয়া গেছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। তবে ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাংলাদেশি মূদ্রায় এক সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য এখন ৮৬ টাকার একটু বেশি। এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের বছরেও সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েছিল। যেমন ২০১৩ সালে বিভিন্ন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মূদ্রায় ৩ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫১ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৪ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা।

এদেশের ঋণ খেলাপী বা সুইস ব্যাংকে অর্থ জমানোয় একটি মিলিত ছন্দ আছে, একই বেহালায় ঝংকৃত সুর আছে। যে সুর আমরা সাধারণেরা ধরতে পারি না। আমরা তা ভাঙতে পারি না। কেনো পারি না? কেননা, অমন অপরাধ করা মানুষেরা কিন্তু কেউ মধ্যবিত্ত পরিবারের নয়, নয় তারা কৃষকের সন্তান, কেউ তারা কুলি-মজুরও নয়। সকলেই বিত্ত বৈভবের মালিক । তাদের আরোও চাই এবং তারা রাষ্ট্রের মানুষের পকেট কেটে রাষ্ট্রের কোষাগার সুকৌশলে ছিদ্র করে নিজের পকেটে তা ঢোকায়। এই যে তারা যখন এ কা-টি করে, তখন তারা সকলে একটি সুনিপুণ পরিশুদ্ধ অপরাধ কর্ম করে, প্রতারণার আশ্রয় নেয় এবং তাতে সহায়তা করে কারা? বলাই বাহুল্য, সকল বুঝদার আরা রাষ্ট্র্র কাঠামোর বৃহৎ কুরসিতে বসে থাকা মহাশয়গণ।

আর এমন প্রক্রিয়ায় লাখো যোদ্ধার রক্তস্নাত বাংলাদেশে জনগণকে দেয়া সংবিধানের ওয়াদা, জনগণের কাছে খেলাপি হয়ে ওঠে। তখন ব্যথিত হয়ে ওঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরলোকে বাস করা আত্মা। ব্যথিত হয়ে পরে পবিত্র সংবিধানের ধারাগুলো। আর সাধারণ জনগণ অনুভব করে বাংলাদেশে মাথা পিছু আয় বাড়লেও, সে অর্থে আমাদের কোনো ভাগ নাই। আমাদের তো দিন আনতে পান্তা ফুরায় অর্থ কেলেংকারি করা অপরাধিদের অনৈতিক দাম্ভিকতায় সমাজে নৈতিকতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে বলে। তাহলে এ থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় কী? কী করে জনগণ তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে পারে আপন মঙ্গলাকাঙ্ক্ষায়? এমন কর্কষ প্রশ্নে চারদিকে তখন একটি সিম্ফনী ওঠে,- “আলোর তৃষ্ণায় জাগো সকলে।”