গণমাধ্যমের হাল-হকিকত

মযহারুল ইসলাম বাবলা

কোন মাধ্যমে সংবাদ জানতে আমি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি? এমন প্রশ্নের উত্তরে একবাক্যে বলবো সংবাদপত্রের সংবাদ। তার সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণটি স্বাধীনতা। টিভি মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা দর্শকদের নেই। দেশে প্রচুর সংবাদপত্রের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সম্ভবত চব্বিশটি। প্রতিটি টিভি চ্যানেল নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে। এমনকি প্রতি ঘণ্টায়ও। বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক জানা যায় একমাত্র টিভি মিডিয়াতেই। রেডিও শোনার সংস্কৃতি দেশে আর অবশিষ্ট নেই। অথচ এই প্রচারযন্ত্রটি একসময়ে ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয় মাধ্যম। রেডিও শোনার শ্রোতা এখন আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা-পরিধি অধিক হারে বিস্তৃত হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাবল টিভির প্রসারও বেগবান গতিতে। টিভি চ্যানেলের সংবাদ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না। দশ মিনিটের সংবাদকে বিজ্ঞাপন বিরতিতে ত্রিশ মিনিট দীর্ঘ করার প্রবণতার কারণে দর্শকদের ধৈর্যচ্যুতি যেমন ঘটে, তেমনি সংবাদ শোনার স্বাধীনতা পর্যন্ত এতে হরণ করা হয়। প্রতিটি টিভি চ্যানেলের সংবাদ নিয়ে মুনাফার বাণিজ্যের তোপে দর্শকদের চরমভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতি সংবাদে- সংবাদসহ শিরোনাম সংবাদ, বাণিজ্য সংবাদ, বিনোদন সংবাদ, সংস্কৃতি সংবাদ, কৃষি সংবাদ, অর্থনীতি সংবাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদ, খেলাধুলার সংবাদ ইত্যাদি নামকরণে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরে পরিবেশিত হয়। সংবাদকে বাণিজ্যিক উপাদানে পরিণত করার যেন সীমা-পরিসীমা নেই। এছাড়া রয়েছে ক্লান্তিকর দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি। মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের হিড়িকে সঙ্গত কারণে সংবাদ দেখার ধৈর্য দর্শকের আর থাকে না। এবং থাকার কথাও নয়। টিভি চ্যানেলগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা এরূপ স্বেচ্ছাচারিতায় দর্শকদের স্বাধীনতা বলে কার্যত কিছু নেই। এ সকল যৌক্তিক কারণে আমার কাছে সংবাদপত্রের সংবাদ পাঠই সর্বাধিক প্রিয়। কোন সংবাদ আগে বা পরে, কোনটি পড়বো-না পড়বো এই স্বাধীনতা সংবাদপত্রের পাঠকমাত্রই ভোগ করার অধিকার রাখে। যেটি টিভি দর্শকদের ক্ষেত্রে অসম্ভব।

গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের মাঝে মুনাফার উছিলায় অসহ্য বিজ্ঞাপন বিরতি দর্শকদের ভারাক্রান্ত করে তোলে। দর্শকের মনোনিবেশে এমন নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপ ঘটে যে, মুহূর্তে সংবাদ উধাও হয়ে বিজ্ঞাপন চিত্র হাজির হয়। পণ্য প্রচারের জন্য সংবাদকে বেছে নেবার প্রধানত কারণটি হচ্ছে প্রায় সকল দর্শকদের নিকট সংবাদপ্রিয়তা। অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখার ক্ষেত্রে দর্শকদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। কেউ নাটক, গান, সিরিয়াল, চলচ্চিত্র, টক শো ইত্যাদি অনুষ্ঠান নিজস্ব রুচি অনুযায়ী দেখে থাকে। একমাত্র সংবাদই সকলের কাছে এককভাবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এ কারণে সংবাদ পরিবেশনে মুনাফার বাণিজ্যের যথেচ্ছ সুযোগ গ্রহণ করে যেমন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, তেমনি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ। সকল অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিজ্ঞাপন বিরতি যে নেই, তা নয়। বিজ্ঞাপনের হিড়িকে নাটক, চলচ্চিত্র, সিরিয়াল, গান, টক শো কোনোটি নির্বিঘ্নে দেখা সম্ভব হয় না। দর্শকও চ্যানেল পাল্টে অবিরাম বিজ্ঞাপনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। দৈনিক সংবাদপত্র পাঠকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সর্বোপরি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেই পাঠক তার ইচ্ছানুযায়ী সংবাদ পড়তে পারে। তবে সংবাদপত্রও কিন্তু বিজ্ঞাপনের তোপমুক্ত নয়। প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সংবাদের গুরুত্ব সংকুচিত হয়ে পড়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশের হিড়িকে। সংবাদপত্র দেখলে উপায় থাকে না কর্তৃপক্ষের নিকট কোনটি অধিক বিবেচ্য। সংবাদ-না বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন প্রকাশে অর্থ আসে। সে তো আকর্ষণ করবেই। তবে এক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা আছে বলে জানা নেই। সে কারণে পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার সিংহভাগ অংশ বিজ্ঞাপনের দখলদারিত্বে আমরা দেখে থাকি। আমাদের দেশে বিদ্যমান ব্যবস্থাটি পুঁজিতান্ত্রিক বলেই পুঁজির কারসাজি সর্বক্ষেত্রে বিদ্যমান। প্রচারেই প্রসার। যত প্রচার ততই ভোক্তা বৃদ্ধি এবং পণ্যের কাটতি। সেতো আকৃষ্ট করবেই। যেমন পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারককে, তেমনি গণমাধ্যমের মালিকদেরও।

আমাদের অনেক বিজ্ঞজন প্রায়ই বলে থাকেন অমুক অমুক উন্নত দেশে সংবাদপত্র মুদ্রিত আকারে প্রকাশ হয় না। এবং প্রয়োজনও পড়ে না। দেশসুদ্ধ সবাই ইন্টারনেটে সংবাদ মুহূর্তে জেনে যায় এবং পড়ে নেয়। আমাদের দেশেও মুদ্রিত সংবাদপত্রের যুগের অবসান সময়ের ব্যাপার। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষিতে কথাগুলো মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল (অনুন্নত এখন মান রক্ষায় বলা হয় না) দেশের সঙ্গে উন্নত দেশের তুলনা কোনোভাবেই করা যাবে না। যে সকল (হাতে গোনা দু’চারটি) দেশে মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের কোনো ক্ষেত্রেই তুলনা চলে না। আমাদের মোট জনসমষ্টির কত ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে? কত ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত? কতভাগ মানুষ শিক্ষা বঞ্চিত, নিরক্ষর? কত ভাগ মানুষকে একটি দিনের উপার্জনের ওপর ঐদিনটি অতিবাহিত করতে হয় খেয়ে কিংবা না খেয়ে? সমাজের সংখ্যালঘু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির সঙ্গে কোনো ক্ষেত্রেই মেলানো যাবে না। একই দেশের নাগরিক হয়েও সকলের অধিকার-সুযোগের ভিন্নতা মোটা দাগে স্পষ্ট। সংস্কৃতিগত পার্থক্যটা আরো অধিকভাবে দৃশ্যমান। শিক্ষার হার বেড়েছে বলা হয়। কিন্তু কত ভাগ? শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত অতিক্রম না করে ঝরে পড়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শহরের বিত্তবান, মধ্যবিত্তদের জীবনাচারের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠের জীবনাচার আকাশ-পাতাল ব্যবধান তুল্য। কাজেই বিদগ্ধ কতিপয়ের বক্তব্য সমষ্টিগতদের ক্ষেত্রে বাস্তববর্জিত বলেই মান্য করা যায়। আমাদের দেশে সংবাদপত্র পাঠের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সহজে ম্লান হবে না। দেশে ক্রমাগত সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশের দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা কত? কারো পক্ষে নির্ভুলভাবে বলাও সম্ভব নয়। সংবাদপত্রের যদি পাঠকপ্রিয়তা না-ই থাকবে, তাহলে এত সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে কীভাবে? সকল সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তা নিশ্চয় এক নয়। কম-বেশি রয়েছে। সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তার মানদ- বিচারে ভিন্নতা অতীতেও ছিল। আজও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। এটা বাস্তবতা। তার মানে এই নয় যে সংবাদপত্র শিল্প বিলুপ্তির পথ ধরেছে। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের মানুষের ভাষা, রুচি, সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন ঘটে সত্য। তবে সেটা আঙ্গিকগত বা উপরিকাঠামোগত। ভেতরগত সংস্কৃতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না। আর এটাতো সত্য বিজ্ঞান প্রযুক্তির এই যন্ত্রযুগে সাবেকী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ব্যতীত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটবে না। আর এটাও সত্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সংস্কৃতিই একটি দেশ বা জাতির সংস্কৃতি রূপে স্বীকৃত। কতিপয় সুবিধাভোগীর সংস্কৃতি পুরো জাতির সংস্কৃতি বলা কিন্তু যাবে না। সংবাদপত্র পাঠ আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সহজে সেটা পরিত্যক্ত হবার নয়। যেদিন আমরা শতভাগ শিক্ষিত, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভে পরিপূর্ণ হব; সেদিন বিজ্ঞজনদের বক্তব্য সঠিক-না-মিথ্যা প্রমাণিত হবে। এর পূর্বে নয়।

দেশে প্রকাশিত প্রতিটি দৈনিকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। থাকাটা স্বাভাবিক। যার দৃশ্যমান প্রমাণ সংবাদপত্রের শিরোনাম এবং সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনোটিকে গুরুত্ব কিংবা অগুরুত্ব দেয়ার ওপর প্রতিফলিত। তাই সব সংবাদের গুরুত্ব একইভাবে সকল পত্রিকায় দেখা যায় না। সংবাদপত্রের মৌলিক বিষয়টি সংবাদ। সে সংবাদও বিজ্ঞাপনের দাপটে ম্রিয়মাণ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম মাত্রই এখন বিজ্ঞাপন নির্ভর। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা ছাড়া উপায়ও নেই। তবে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞাপনের তোপে যেন সংবাদ হারিয়ে না যায়। তাহলে সংবাদপত্রের চাহিদা ও গুরুত্ব কোনোটিই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে অধিক সচেতন হতে হবে, নয়তো সংবাদপত্রের টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়বে। সংবাদের গুরুত্ব সকল পাঠকের কাছেই গ্রহণযোগ্য। মানুষ সংবাদ জানতে আগ্রহী। এই আগ্রহের সুযোগটি গ্রহণ করে মুনাফার মওকা হাতিয়ে নিচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলো। সংবাদপত্র সেই পথ অন্ধ অনুসরণে ঝুঁকে পড়লে সংবাদপত্র শিল্পে নেতির প্রভাব পড়বে। দেশীয় টিভি চ্যানেল বিনে পয়সায় দর্শকদের দ্বারে উপস্থিত। সংবাদপত্র পাঠকদের কিনে নিতে হয়। এখানে মাধ্যম দু’টির ব্যবধান স্পষ্ট। টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের আধিক্যে মানুষ চ্যানেল পাল্টে নিজেদের ইচ্ছার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও পত্রিকা পরিবর্তনের স্বাধীনতা নিশ্চয় পাঠকদের রয়েছে। কাজেই সংবাদপত্রসমূহকে এটি গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।

সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক বিষয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেটি হচ্ছে পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশ আমলে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংকট, হরতাল, সান্ধ্যআইন, সহিংস অবরোধকালে জনজীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হবার অজস্র ঘটনা-দুর্ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। সেই ক্রান্তিকালে মানুষ গৃহবন্দিত্বে বাধ্য হয়েছে। অচল হয়েছে জীবিকা নির্বাহ পর্যন্ত। অথচ সকল ক্রান্তিকালে সংবাদপত্র প্রতি সকালে তার পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে। সংবাদকর্মীরা সকল ঝুঁকি উপেক্ষা করে পাঠকের হাতে প্রতিদিনকার সংবাদপত্র তুলে দেবার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে এসেছে। সংবাদকর্মীদের জীবিকা কখনো ঝুঁকিহীন ছিল না। আজও নেই। জীবনের বাজি ধরে সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার শতভাগ পালন করে এসেছে আমাদের সংবাদকর্মীরা। তাদের পেশা কেবল জীবিকায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক অঙ্গীকারেরও অংশ। যেটি তারা বিপদ-ভয় উপেক্ষা করে পালন করে থাকে। সাংবাদিকতা পেশা যেমন চ্যালেঞ্জের তেমনি সামাজিক অঙ্গীকারেরও বটে। আমাদের সমাজে আজও দুটি পেশা অতীব সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত। এক শিক্ষকতা। দুই সাংবাদিকতা। এই দুই পেশা জীবিকার ছকে আটকে কখনো ছিল না। আজও নেই। ব্যতিক্রম ব্যক্তি বিশেষে থাকতেই পারে। অপরাপর পেশাজীবীর ন্যায় মেরুদ-হীন অনুগত সাংবাদিকের দেশে আকাল পড়েনি। তেমন বহু দৃষ্টান্ত আমরা হরহামেশা প্রত্যক্ষ করি। আমাদের শাসক দুই প্রধান দলে সাংবাদিকদের ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে যাওয়াও অস্বীকার করি কীভাবে! তারপরও সামগ্রিক বিবেচনায় এই দুই পেশাকে অর্থ বিত্তের মাপকাঠিতে বিবেচনা করা যাবে না। মহৎ পেশা বলতে আমরা যা বুঝি তার সমস্তই এ দুই পেশাতে রয়েছে।

এখন আমাদের দেশে একটি দৈনিক পত্রিকাও সামাজিক উদ্যোগে-ব্যবস্থাপনায় নেই। সমস্ত সংবাদপত্রই বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্যিক গ্রুপের মালিকানাধীন। অতীতে ব্যক্তিগত এবং যৌথ মালিকানার সংবাদপত্র থাকলেও কালের গর্ভে সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে। সংখ্যার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের যে প্রসার আমরা দেখেছি, তার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক নানা অভিপ্রায় রয়েছে। সংবাদপত্র এখন ক্ষমতা এবং অর্থ লাভের দাবার ঘুঁটিতে পর্যন্ত পরিণত। ব্যবসায়ী মতলব হাসিলে নিজেদের মালিকানার সংবাদপত্রকে ব্যবহারের নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে। পত্রিকা দেখেও আঁচ করা যায়, কী উদ্দেশে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। সংবাদপত্রের মালিকানা দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এখন। খুব কমই বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের নিজস্ব পত্রিকা নেই। ব্যবসায়ীদের কায়েমি স্বার্থেও সংবাদপত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এই মালিকেরা আমাদের মোট জনসমষ্টির এক শতাংশ রূপে চিহ্নিত। রাষ্ট্রের ক্ষমতাও এই শাসকশ্রেণির করতলগত। অর্থাৎ পুঁজিপতি শাসকশ্রেণির বৃত্তেই আমাদের গণমাধ্যমগুলো আটকে পড়েছে। পুঁজি বিনিয়োগ করার সামর্থ্য থাকলেও পত্রিকা চালানোর যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তাই সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি নিয়োগ দিতে হয় সম্পাদককে। সম্পাদকও অপরাপর সংবাদকর্মীর ন্যায় চাকরি রক্ষায় মালিকের নির্দেশিত সীমানা অতিক্রম করার ধৃষ্টতা রাখে না। মালিকের দেয়া স্বাধীনতাটুকুই তারা ভোগ করতে পারেন। এর অতিরিক্ত নয়। চূড়ান্ত বিচারে সংবাদপত্রের মালিকপক্ষই সংবাদপত্রের নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক। পত্রিকার কাটতি, পাঠক হ্রাসের এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার তাগিদে ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশে ছাড় প্রদানে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়। সংবাদপত্র মালিকদের সামাজিক দায়-অঙ্গীকার বলে বাস্তবে কিছু নেই। তারা ক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থেই পত্রিকায় পুঁজি বিনিয়োগ করে। তাই স্বীয় স্বার্থ রক্ষায় তারা তৎপর থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। দেশ-জাতি, জনগণের স্বার্থরক্ষাকে তারা দায়িত্ব-কর্তব্যের আওতায় সঙ্গত কারণেই বিবেচনা করে না। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজ মালিকানার সংবাদপত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহারের দৃষ্টান্তও দেশের সংবাদপত্র শিল্পে রয়েছে। মোট জনসমষ্টির এই এক শতাংশের করতলগত দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হতে গণমাধ্যম পর্যন্ত। কাজেই সংবাদপত্র শিল্প নিয়ে অতি উচ্চাশার সুযোগ নেই।

দেশে গণতন্ত্রের আকালের এই ক্রান্তিকালে সংবাদপত্রকে সরকারের আদেশ-নির্দেশের বেষ্টনীর বৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। ব্যতিক্রম ঘটলেই রাষ্ট্রীয় খড়গ নেমে আসে। গণমাধ্যমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সকল ক্ষমতাসীন সরকারের শাসনামলে প্রত্যক্ষের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেউ নয়। অনুগত এবং অবনত থাকার সুফল তো আছেই। আমাদের শাসন প্রক্রিয়ার এখন কে কত অনুগত-অজ্ঞাবহ তার প্রবল প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ব্যতিক্রম হলে অবশ্যম্ভাবী বিপদ। বিপদ এড়াতে আত্মসমর্পণের হিড়িক চলছে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজ জুড়ে। আমাদের সমাজে যে যত আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারবে তারই ভাগ্যে ঘটবে নানা প্রাপ্তির সুযোগ। বর্তমান সরকারের গুণকীর্তন করে বহুজন রাষ্ট্রীয় সুবিধা আদায় করেছে, পেয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। সেই তালিকাও কম দীর্ঘ নয়। আনুগত্যের এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের পরিত্রাণ কবে ঘটবে? কিংবা আদৌ ঘটবে কিনা জানি না।

সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন কিছু নয়। ঔপনিবেশিক আমল থেকে আজ অবধি রাষ্ট্রযন্ত্র সংবাদপত্রের ওপর হস্তক্ষেপে নানা কালাকানুন আরোপ করে রেখেছে। জেল, জুলুম, সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধের নানা ঘটনা সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে আজও বলবৎ রয়েছে। ঔপনিবেশিক আমলের পরিসমাপ্তিতে আজাদ পাকিস্তানে রাষ্ট্রের পরিবর্তন যেমন ঘটেনি। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও পরাধীন দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র অক্ষুণœ রয়েছে। রাষ্ট্রের বদল না ঘটার কারণে স্বাধীন দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কৃতি, শাসক চরিত্রেরও বদল হয়নি। অতীতের ভিনদেশী শাসকের সঙ্গে স্বদেশী শাসকদের কোনো অমিল নেই। বাইরে কেবল সাদা আর কালো। ভেতরে সবার সমান রাঙা।

আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। বিদ্যমান রাষ্ট্র ও শাসকদের কর্মকান্ড সূক্ষ্মভাবে বিচার করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি বারংবার এসে যায়। পরাধীন দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র স্বাধীন দেশে পুরো মাত্রায় সচল এবং সক্রিয়। আমরা নিজেদের স্বাধীন রূপে বিবেচনা করি নিশ্চয়। কিন্তু প্রকৃতই দেশের সমষ্টিগত মানুষ কি স্বাধীন? না, মোটেও না। দেশের স্বাধীনতা ওই এক শতাংশের স্বাধীনতায় পরিণত। ক্ষুদ্র ওই এক শতাংশকে পরাভূত না করা অবধি আমাদের স্বাধীনতা অলীক। সকল মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে-গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অনিবার্যভাবে নিশ্চিত হবে। নয়তো ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটবে সত্য কিন্তু আমাদের পরিবর্তন ঘটবে না। একই বৃত্তে আমাদের ঘুরপাক খেতে হবে। যেমনটি গত আটচল্লিশ বছরব্যাপী ঘুরপাক করছি, ঠিক তেমনি। তাই ব্যবস্থার আমূল বদল ব্যতীত আমাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।

image
আরও খবর
৬৯ বছরে সংবাদ
ভাষা থেকে ভূখন্ড
স্মৃতিময় সংবাদ-এর ৬৯ বছর
একটি রাজনৈতিক পাঠ
সংবাদ : কিছু কথা কিছু স্মৃতি
যুগে যুগে সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রা
আলোর তৃষ্ণায় জাগো
ইতিহাস ঐতিহ্য ও আদর্শের স্মারক দৈনিক সংবাদ
কেন লিখি
সংবাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আত্মার
ঐতিহ্য আর মুক্তচিন্তার সংবাদ
আমার সংবাদ সংবাদের আমি
বিচিত্র জীবিকা বিচিত্র জীবন
ঋতুপর্ণ ঘোষের এলোমেলো দেশকাল
চীন ও বাংলাদেশ : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সম্পর্ক
সংবাদের জলসাঘর
আমরা এখন শান্ত হয়ে আছি
মাটির মাধুর্য
কষ্টের ঢাকা স্বপ্নের বাংলাদেশ
তোমারে বধিবে যে...
বঙ্গবন্ধুর জনকল্যাণের অর্থনৈতিক নীতি কৌশল
শারহুল পটবসন্ত ও বজলুর রহমান
শিশুশিক্ষায় শিল্প-সাহিত্য-সংগীত
এবং বজলুর রহমান স্মৃতিপদক
দুর্নীতি, পেশাদারিত্ব ও উন্নয়ন
বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চার ভবিষ্যৎ
চেতনায় নৈতিকতা মূল্যবোধ : বিরুদ্ধবাস্তবতা
সবার উপরে মানুষ সত্য
আহমদুল কবির শ্রদ্ধাঞ্জলি
কার্যকর সংসদ এবং সুশাসনের স্বপ্ন
‘সংবাদ’ আমারই ছিল আমারই আছে
আমাদের ‘সংবাদ’
নারীর অধিকার ও সচেতনতা
গণমাধ্যমে বিশ্বাস কমছে পাঠকের
নারী ও তার বিধাতা পুরুষ
বাংলাদেশের নারী
সংবাদের কাছে আমি ঋণী
বিস্মৃতিপ্রবণতা ও রাষ্ট্রের অক্ষমতা
যে দীপশিখা দিয়েছে আলো

বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯ , ২৬ আষাঢ় ১৪২৫, ৬ জ্বিলকদ ১৪৪০

গণমাধ্যমের হাল-হকিকত

মযহারুল ইসলাম বাবলা

image

কোন মাধ্যমে সংবাদ জানতে আমি সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি? এমন প্রশ্নের উত্তরে একবাক্যে বলবো সংবাদপত্রের সংবাদ। তার সুনির্দিষ্ট কারণও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণটি স্বাধীনতা। টিভি মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা দর্শকদের নেই। দেশে প্রচুর সংবাদপত্রের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সম্ভবত চব্বিশটি। প্রতিটি টিভি চ্যানেল নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন করে। এমনকি প্রতি ঘণ্টায়ও। বিশ্বজুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা-দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক জানা যায় একমাত্র টিভি মিডিয়াতেই। রেডিও শোনার সংস্কৃতি দেশে আর অবশিষ্ট নেই। অথচ এই প্রচারযন্ত্রটি একসময়ে ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয় মাধ্যম। রেডিও শোনার শ্রোতা এখন আর খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা-পরিধি অধিক হারে বিস্তৃত হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাবল টিভির প্রসারও বেগবান গতিতে। টিভি চ্যানেলের সংবাদ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে তেমন আকর্ষণ করে না। দশ মিনিটের সংবাদকে বিজ্ঞাপন বিরতিতে ত্রিশ মিনিট দীর্ঘ করার প্রবণতার কারণে দর্শকদের ধৈর্যচ্যুতি যেমন ঘটে, তেমনি সংবাদ শোনার স্বাধীনতা পর্যন্ত এতে হরণ করা হয়। প্রতিটি টিভি চ্যানেলের সংবাদ নিয়ে মুনাফার বাণিজ্যের তোপে দর্শকদের চরমভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রতি সংবাদে- সংবাদসহ শিরোনাম সংবাদ, বাণিজ্য সংবাদ, বিনোদন সংবাদ, সংস্কৃতি সংবাদ, কৃষি সংবাদ, অর্থনীতি সংবাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদ, খেলাধুলার সংবাদ ইত্যাদি নামকরণে বিভক্ত করে প্রতিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরে পরিবেশিত হয়। সংবাদকে বাণিজ্যিক উপাদানে পরিণত করার যেন সীমা-পরিসীমা নেই। এছাড়া রয়েছে ক্লান্তিকর দীর্ঘ বিজ্ঞাপন বিরতি। মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের হিড়িকে সঙ্গত কারণে সংবাদ দেখার ধৈর্য দর্শকের আর থাকে না। এবং থাকার কথাও নয়। টিভি চ্যানেলগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা এরূপ স্বেচ্ছাচারিতায় দর্শকদের স্বাধীনতা বলে কার্যত কিছু নেই। এ সকল যৌক্তিক কারণে আমার কাছে সংবাদপত্রের সংবাদ পাঠই সর্বাধিক প্রিয়। কোন সংবাদ আগে বা পরে, কোনটি পড়বো-না পড়বো এই স্বাধীনতা সংবাদপত্রের পাঠকমাত্রই ভোগ করার অধিকার রাখে। যেটি টিভি দর্শকদের ক্ষেত্রে অসম্ভব।

গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পরিবেশনের মাঝে মুনাফার উছিলায় অসহ্য বিজ্ঞাপন বিরতি দর্শকদের ভারাক্রান্ত করে তোলে। দর্শকের মনোনিবেশে এমন নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপ ঘটে যে, মুহূর্তে সংবাদ উধাও হয়ে বিজ্ঞাপন চিত্র হাজির হয়। পণ্য প্রচারের জন্য সংবাদকে বেছে নেবার প্রধানত কারণটি হচ্ছে প্রায় সকল দর্শকদের নিকট সংবাদপ্রিয়তা। অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখার ক্ষেত্রে দর্শকদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। কেউ নাটক, গান, সিরিয়াল, চলচ্চিত্র, টক শো ইত্যাদি অনুষ্ঠান নিজস্ব রুচি অনুযায়ী দেখে থাকে। একমাত্র সংবাদই সকলের কাছে এককভাবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এ কারণে সংবাদ পরিবেশনে মুনাফার বাণিজ্যের যথেচ্ছ সুযোগ গ্রহণ করে যেমন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, তেমনি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ। সকল অনুষ্ঠান সম্প্রচারে বিজ্ঞাপন বিরতি যে নেই, তা নয়। বিজ্ঞাপনের হিড়িকে নাটক, চলচ্চিত্র, সিরিয়াল, গান, টক শো কোনোটি নির্বিঘ্নে দেখা সম্ভব হয় না। দর্শকও চ্যানেল পাল্টে অবিরাম বিজ্ঞাপনের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। দৈনিক সংবাদপত্র পাঠকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সর্বোপরি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলেই পাঠক তার ইচ্ছানুযায়ী সংবাদ পড়তে পারে। তবে সংবাদপত্রও কিন্তু বিজ্ঞাপনের তোপমুক্ত নয়। প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত সংবাদের গুরুত্ব সংকুচিত হয়ে পড়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশের হিড়িকে। সংবাদপত্র দেখলে উপায় থাকে না কর্তৃপক্ষের নিকট কোনটি অধিক বিবেচ্য। সংবাদ-না বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন প্রকাশে অর্থ আসে। সে তো আকর্ষণ করবেই। তবে এক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা আছে বলে জানা নেই। সে কারণে পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার সিংহভাগ অংশ বিজ্ঞাপনের দখলদারিত্বে আমরা দেখে থাকি। আমাদের দেশে বিদ্যমান ব্যবস্থাটি পুঁজিতান্ত্রিক বলেই পুঁজির কারসাজি সর্বক্ষেত্রে বিদ্যমান। প্রচারেই প্রসার। যত প্রচার ততই ভোক্তা বৃদ্ধি এবং পণ্যের কাটতি। সেতো আকৃষ্ট করবেই। যেমন পণ্যের উৎপাদক, আমদানিকারককে, তেমনি গণমাধ্যমের মালিকদেরও।

আমাদের অনেক বিজ্ঞজন প্রায়ই বলে থাকেন অমুক অমুক উন্নত দেশে সংবাদপত্র মুদ্রিত আকারে প্রকাশ হয় না। এবং প্রয়োজনও পড়ে না। দেশসুদ্ধ সবাই ইন্টারনেটে সংবাদ মুহূর্তে জেনে যায় এবং পড়ে নেয়। আমাদের দেশেও মুদ্রিত সংবাদপত্রের যুগের অবসান সময়ের ব্যাপার। আমাদের দেশীয় প্রেক্ষিতে কথাগুলো মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। আমাদের ন্যায় উন্নয়নশীল (অনুন্নত এখন মান রক্ষায় বলা হয় না) দেশের সঙ্গে উন্নত দেশের তুলনা কোনোভাবেই করা যাবে না। যে সকল (হাতে গোনা দু’চারটি) দেশে মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় না। তাদের সঙ্গে আমাদের দেশের কোনো ক্ষেত্রেই তুলনা চলে না। আমাদের মোট জনসমষ্টির কত ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে? কত ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত? কতভাগ মানুষ শিক্ষা বঞ্চিত, নিরক্ষর? কত ভাগ মানুষকে একটি দিনের উপার্জনের ওপর ঐদিনটি অতিবাহিত করতে হয় খেয়ে কিংবা না খেয়ে? সমাজের সংখ্যালঘু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির সঙ্গে কোনো ক্ষেত্রেই মেলানো যাবে না। একই দেশের নাগরিক হয়েও সকলের অধিকার-সুযোগের ভিন্নতা মোটা দাগে স্পষ্ট। সংস্কৃতিগত পার্থক্যটা আরো অধিকভাবে দৃশ্যমান। শিক্ষার হার বেড়েছে বলা হয়। কিন্তু কত ভাগ? শিক্ষার প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত অতিক্রম না করে ঝরে পড়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শহরের বিত্তবান, মধ্যবিত্তদের জীবনাচারের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠের জীবনাচার আকাশ-পাতাল ব্যবধান তুল্য। কাজেই বিদগ্ধ কতিপয়ের বক্তব্য সমষ্টিগতদের ক্ষেত্রে বাস্তববর্জিত বলেই মান্য করা যায়। আমাদের দেশে সংবাদপত্র পাঠের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সহজে ম্লান হবে না। দেশে ক্রমাগত সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশের দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা কত? কারো পক্ষে নির্ভুলভাবে বলাও সম্ভব নয়। সংবাদপত্রের যদি পাঠকপ্রিয়তা না-ই থাকবে, তাহলে এত সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে কীভাবে? সকল সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তা নিশ্চয় এক নয়। কম-বেশি রয়েছে। সংবাদপত্রের পাঠকপ্রিয়তার মানদ- বিচারে ভিন্নতা অতীতেও ছিল। আজও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। এটা বাস্তবতা। তার মানে এই নয় যে সংবাদপত্র শিল্প বিলুপ্তির পথ ধরেছে। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের মানুষের ভাষা, রুচি, সংস্কৃতির ভিন্নতা রয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন ঘটে সত্য। তবে সেটা আঙ্গিকগত বা উপরিকাঠামোগত। ভেতরগত সংস্কৃতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না। আর এটাতো সত্য বিজ্ঞান প্রযুক্তির এই যন্ত্রযুগে সাবেকী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ব্যতীত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটবে না। আর এটাও সত্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সংস্কৃতিই একটি দেশ বা জাতির সংস্কৃতি রূপে স্বীকৃত। কতিপয় সুবিধাভোগীর সংস্কৃতি পুরো জাতির সংস্কৃতি বলা কিন্তু যাবে না। সংবাদপত্র পাঠ আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সহজে সেটা পরিত্যক্ত হবার নয়। যেদিন আমরা শতভাগ শিক্ষিত, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভে পরিপূর্ণ হব; সেদিন বিজ্ঞজনদের বক্তব্য সঠিক-না-মিথ্যা প্রমাণিত হবে। এর পূর্বে নয়।

দেশে প্রকাশিত প্রতিটি দৈনিকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। থাকাটা স্বাভাবিক। যার দৃশ্যমান প্রমাণ সংবাদপত্রের শিরোনাম এবং সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনোটিকে গুরুত্ব কিংবা অগুরুত্ব দেয়ার ওপর প্রতিফলিত। তাই সব সংবাদের গুরুত্ব একইভাবে সকল পত্রিকায় দেখা যায় না। সংবাদপত্রের মৌলিক বিষয়টি সংবাদ। সে সংবাদও বিজ্ঞাপনের দাপটে ম্রিয়মাণ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম মাত্রই এখন বিজ্ঞাপন নির্ভর। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরতা ছাড়া উপায়ও নেই। তবে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বিজ্ঞাপনের তোপে যেন সংবাদ হারিয়ে না যায়। তাহলে সংবাদপত্রের চাহিদা ও গুরুত্ব কোনোটিই আর অবশিষ্ট থাকবে না। এক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে অধিক সচেতন হতে হবে, নয়তো সংবাদপত্রের টিকে থাকাও কঠিন হয়ে পড়বে। সংবাদের গুরুত্ব সকল পাঠকের কাছেই গ্রহণযোগ্য। মানুষ সংবাদ জানতে আগ্রহী। এই আগ্রহের সুযোগটি গ্রহণ করে মুনাফার মওকা হাতিয়ে নিচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলো। সংবাদপত্র সেই পথ অন্ধ অনুসরণে ঝুঁকে পড়লে সংবাদপত্র শিল্পে নেতির প্রভাব পড়বে। দেশীয় টিভি চ্যানেল বিনে পয়সায় দর্শকদের দ্বারে উপস্থিত। সংবাদপত্র পাঠকদের কিনে নিতে হয়। এখানে মাধ্যম দু’টির ব্যবধান স্পষ্ট। টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের আধিক্যে মানুষ চ্যানেল পাল্টে নিজেদের ইচ্ছার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও পত্রিকা পরিবর্তনের স্বাধীনতা নিশ্চয় পাঠকদের রয়েছে। কাজেই সংবাদপত্রসমূহকে এটি গভীরভাবে বিবেচনায় নিতে হবে।

সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক বিষয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেটি হচ্ছে পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশ আমলে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংকট, হরতাল, সান্ধ্যআইন, সহিংস অবরোধকালে জনজীবনের স্বাভাবিকতা ব্যাহত হবার অজস্র ঘটনা-দুর্ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। সেই ক্রান্তিকালে মানুষ গৃহবন্দিত্বে বাধ্য হয়েছে। অচল হয়েছে জীবিকা নির্বাহ পর্যন্ত। অথচ সকল ক্রান্তিকালে সংবাদপত্র প্রতি সকালে তার পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে। সংবাদকর্মীরা সকল ঝুঁকি উপেক্ষা করে পাঠকের হাতে প্রতিদিনকার সংবাদপত্র তুলে দেবার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে এসেছে। সংবাদকর্মীদের জীবিকা কখনো ঝুঁকিহীন ছিল না। আজও নেই। জীবনের বাজি ধরে সংবাদ সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরার অঙ্গীকার শতভাগ পালন করে এসেছে আমাদের সংবাদকর্মীরা। তাদের পেশা কেবল জীবিকায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক অঙ্গীকারেরও অংশ। যেটি তারা বিপদ-ভয় উপেক্ষা করে পালন করে থাকে। সাংবাদিকতা পেশা যেমন চ্যালেঞ্জের তেমনি সামাজিক অঙ্গীকারেরও বটে। আমাদের সমাজে আজও দুটি পেশা অতীব সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত। এক শিক্ষকতা। দুই সাংবাদিকতা। এই দুই পেশা জীবিকার ছকে আটকে কখনো ছিল না। আজও নেই। ব্যতিক্রম ব্যক্তি বিশেষে থাকতেই পারে। অপরাপর পেশাজীবীর ন্যায় মেরুদ-হীন অনুগত সাংবাদিকের দেশে আকাল পড়েনি। তেমন বহু দৃষ্টান্ত আমরা হরহামেশা প্রত্যক্ষ করি। আমাদের শাসক দুই প্রধান দলে সাংবাদিকদের ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়ে যাওয়াও অস্বীকার করি কীভাবে! তারপরও সামগ্রিক বিবেচনায় এই দুই পেশাকে অর্থ বিত্তের মাপকাঠিতে বিবেচনা করা যাবে না। মহৎ পেশা বলতে আমরা যা বুঝি তার সমস্তই এ দুই পেশাতে রয়েছে।

এখন আমাদের দেশে একটি দৈনিক পত্রিকাও সামাজিক উদ্যোগে-ব্যবস্থাপনায় নেই। সমস্ত সংবাদপত্রই বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্যিক গ্রুপের মালিকানাধীন। অতীতে ব্যক্তিগত এবং যৌথ মালিকানার সংবাদপত্র থাকলেও কালের গর্ভে সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে। সংখ্যার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের যে প্রসার আমরা দেখেছি, তার পেছনে উদ্দেশ্যমূলক নানা অভিপ্রায় রয়েছে। সংবাদপত্র এখন ক্ষমতা এবং অর্থ লাভের দাবার ঘুঁটিতে পর্যন্ত পরিণত। ব্যবসায়ী মতলব হাসিলে নিজেদের মালিকানার সংবাদপত্রকে ব্যবহারের নানা দৃষ্টান্ত রয়েছে। পত্রিকা দেখেও আঁচ করা যায়, কী উদ্দেশে এটি প্রকাশিত হচ্ছে। সংবাদপত্রের মালিকানা দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর এখন। খুব কমই বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের নিজস্ব পত্রিকা নেই। ব্যবসায়ীদের কায়েমি স্বার্থেও সংবাদপত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এই মালিকেরা আমাদের মোট জনসমষ্টির এক শতাংশ রূপে চিহ্নিত। রাষ্ট্রের ক্ষমতাও এই শাসকশ্রেণির করতলগত। অর্থাৎ পুঁজিপতি শাসকশ্রেণির বৃত্তেই আমাদের গণমাধ্যমগুলো আটকে পড়েছে। পুঁজি বিনিয়োগ করার সামর্থ্য থাকলেও পত্রিকা চালানোর যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা তাদের নেই। তাই সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি নিয়োগ দিতে হয় সম্পাদককে। সম্পাদকও অপরাপর সংবাদকর্মীর ন্যায় চাকরি রক্ষায় মালিকের নির্দেশিত সীমানা অতিক্রম করার ধৃষ্টতা রাখে না। মালিকের দেয়া স্বাধীনতাটুকুই তারা ভোগ করতে পারেন। এর অতিরিক্ত নয়। চূড়ান্ত বিচারে সংবাদপত্রের মালিকপক্ষই সংবাদপত্রের নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক। পত্রিকার কাটতি, পাঠক হ্রাসের এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার তাগিদে ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশে ছাড় প্রদানে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়। সংবাদপত্র মালিকদের সামাজিক দায়-অঙ্গীকার বলে বাস্তবে কিছু নেই। তারা ক্ষমতা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থেই পত্রিকায় পুঁজি বিনিয়োগ করে। তাই স্বীয় স্বার্থ রক্ষায় তারা তৎপর থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। দেশ-জাতি, জনগণের স্বার্থরক্ষাকে তারা দায়িত্ব-কর্তব্যের আওতায় সঙ্গত কারণেই বিবেচনা করে না। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নিজ মালিকানার সংবাদপত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহারের দৃষ্টান্তও দেশের সংবাদপত্র শিল্পে রয়েছে। মোট জনসমষ্টির এই এক শতাংশের করতলগত দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হতে গণমাধ্যম পর্যন্ত। কাজেই সংবাদপত্র শিল্প নিয়ে অতি উচ্চাশার সুযোগ নেই।

দেশে গণতন্ত্রের আকালের এই ক্রান্তিকালে সংবাদপত্রকে সরকারের আদেশ-নির্দেশের বেষ্টনীর বৃত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। ব্যতিক্রম ঘটলেই রাষ্ট্রীয় খড়গ নেমে আসে। গণমাধ্যমের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ সকল ক্ষমতাসীন সরকারের শাসনামলে প্রত্যক্ষের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেউ নয়। অনুগত এবং অবনত থাকার সুফল তো আছেই। আমাদের শাসন প্রক্রিয়ার এখন কে কত অনুগত-অজ্ঞাবহ তার প্রবল প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ব্যতিক্রম হলে অবশ্যম্ভাবী বিপদ। বিপদ এড়াতে আত্মসমর্পণের হিড়িক চলছে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজ জুড়ে। আমাদের সমাজে যে যত আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারবে তারই ভাগ্যে ঘটবে নানা প্রাপ্তির সুযোগ। বর্তমান সরকারের গুণকীর্তন করে বহুজন রাষ্ট্রীয় সুবিধা আদায় করেছে, পেয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। সেই তালিকাও কম দীর্ঘ নয়। আনুগত্যের এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের পরিত্রাণ কবে ঘটবে? কিংবা আদৌ ঘটবে কিনা জানি না।

সংবাদপত্রের নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের ভূমিকা নতুন কিছু নয়। ঔপনিবেশিক আমল থেকে আজ অবধি রাষ্ট্রযন্ত্র সংবাদপত্রের ওপর হস্তক্ষেপে নানা কালাকানুন আরোপ করে রেখেছে। জেল, জুলুম, সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধের নানা ঘটনা সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে আজও বলবৎ রয়েছে। ঔপনিবেশিক আমলের পরিসমাপ্তিতে আজাদ পাকিস্তানে রাষ্ট্রের পরিবর্তন যেমন ঘটেনি। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও পরাধীন দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র অক্ষুণœ রয়েছে। রাষ্ট্রের বদল না ঘটার কারণে স্বাধীন দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কৃতি, শাসক চরিত্রেরও বদল হয়নি। অতীতের ভিনদেশী শাসকের সঙ্গে স্বদেশী শাসকদের কোনো অমিল নেই। বাইরে কেবল সাদা আর কালো। ভেতরে সবার সমান রাঙা।

আমাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। বিদ্যমান রাষ্ট্র ও শাসকদের কর্মকান্ড সূক্ষ্মভাবে বিচার করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। তাই বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি বারংবার এসে যায়। পরাধীন দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র স্বাধীন দেশে পুরো মাত্রায় সচল এবং সক্রিয়। আমরা নিজেদের স্বাধীন রূপে বিবেচনা করি নিশ্চয়। কিন্তু প্রকৃতই দেশের সমষ্টিগত মানুষ কি স্বাধীন? না, মোটেও না। দেশের স্বাধীনতা ওই এক শতাংশের স্বাধীনতায় পরিণত। ক্ষুদ্র ওই এক শতাংশকে পরাভূত না করা অবধি আমাদের স্বাধীনতা অলীক। সকল মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে-গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অনিবার্যভাবে নিশ্চিত হবে। নয়তো ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটবে সত্য কিন্তু আমাদের পরিবর্তন ঘটবে না। একই বৃত্তে আমাদের ঘুরপাক খেতে হবে। যেমনটি গত আটচল্লিশ বছরব্যাপী ঘুরপাক করছি, ঠিক তেমনি। তাই ব্যবস্থার আমূল বদল ব্যতীত আমাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।