নির্বাচনী ইশতেহার আতিক-তাবিথের

অভিন্ন প্রতিশ্রুতি দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর

সচল ঢাকা, আধুনিক ঢাকা গড়তে চান

রাজধানীকে আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই প্রার্থী ৩৮ ও ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করলেও অধিকাংশ বিষয়েই একমত তারা। ঢাকাকে সুস্থ, সচল ও আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চান নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ধানের শীষের প্রার্থী আদর্শ, বাসযোগ্য ও অত্যাধুনিক রূপে ঢাকাকে গড়তে চান। ৩০ লাখের অধিক ভোটারের আস্থা পেতে নানা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।

উত্তর সিটিতে লড়তে যাওয়া এই প্রার্থীই মশা, যানজটমুক্ত নিরাপদ সড়ক, খেলার মাঠ, খাল-ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও নগর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’জনই ভোট প্রার্থনা করেছেন। ঢাকাকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ গড়তে চাওয়া তাবিথ নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করবেন না বলে জানিয়েছেন। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতিতে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে চাওয়া আতিকুল নির্বাচিত হলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর অংশ দক্ষিণের তুলনায় আধুনিক। এই সিটিতে ওয়ার্ড সংখ্যা কম হলেও ভোটার বেশি। ২০১৫ সালে উত্তর সিটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। আনিসুল হকের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে আতিকুল ইসলাম মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। সেবার অবশ্য তাবিথ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এই দুই প্রার্থীই উত্তর সিটির সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই ভোটাররা প্রত্যাশা করছেন, যেই নির্বাচিত হোক ইশতেহার অনুযায়ী দ্রুতই উন্নয়নে নজর দিবেন তারা।

আতিকুল ইসলাম

রোববার গুলশানের লেকশোর হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী ৩৮টি দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার মূল লক্ষ্য ঢাকাকে ‘সুস্থ, সচল ও আধুনিক’ নগরী হিসেবে গড়ে তুলা।

সুস্থ ঢাকা : ইশতেহারে আতিকুল প্রথমত গুরুত্ব দিয়েছেন সুস্থ ঢাকা গড়ে তোলার ওপর। তিনি বলেন, আমাদের এই নগরী কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল। এই শহরে নাগরিকদের সুস্থতা নির্ভর করে শহরের সুস্থতার ওপর। একটি সুস্থ ঢাকা নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জরুরি, যা বাস্তবায়িত হলে ঢাকাবাসী আবারও গর্বের সঙ্গে বলতে পারবে- ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম সুস্থ শহর। একটি সুস্থ ঢাকা গড়ার জন্য আমার প্রতিশ্রুতি হল- মশা নিধন করার জন্য কোটি মানুষের এই নগরে উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ (আরআরএফ) স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ ও সেগুলোকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা করব। এছাড়া আধুনিক পশু জবাইখানা কেন্দ্র, এলাকাভিত্তিক পাড়া উৎসব, উত্তর সিটির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ, বস্তিবাসীর জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশুনির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ, প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করা, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো, ওয়ার্ডভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি এবং মিরপুরে উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ করবেন আতিকুল।

সচল ঢাকা : সচল ঢাকা গড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইশতেহারে আতিকুল বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দারা তাদের পাড়া-মহল্লাসহ সব রাস্তাঘাটে চলতে গেলেই নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিত ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, সাইকেল ও মোটরসাইকেল লেন, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকায় নগরবাসীর অবাধ চলাচল ব্যাহত হয়। তাই ঢাকাকে একটি সচল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেছি। সচল ঢাকা তৈরি করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করব। এছাড়া হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ঢাকা বাস রুট রেশনালাইজেশনের কাজ বাস্তবায়ন করব। পাশাপাশি নিরাপদে সড়ক পারাপারে পথচারীদের জন্য বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল সিগন্যাল বাটন স্থাপন, প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ পথচারী সেতু নির্মাণ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করব। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য স্থাপনা ও গণপরিবহন তৈরি, প্রতিটি মহল্লায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

আধুনিক ঢাকা : আধুনিক ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের রাজধানীগুলোর মতো ঢাকার আধুনিকায়ন না হলে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারব না। কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বর্তমান সময়ে শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্য। ঢাকা আধুনিকায়ন হলে নগরীর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। স্বপ্নের আধুনিক ঢাকা নির্মাণের মধ্যে রয়েছে- ঢাকাকে আধুনিক করতে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ ব্যবহার করে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ, সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ। এছাড়া বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে গৃহকর দেয়ার ব্যবস্থা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ নাগরিক সেবা দেয়া, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ডিএনসিসির কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য কাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করা হবে।

ভোট প্রার্থনা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়, স্বপ্নের ঢাকা বাস্তব করতে চলুন একসঙ্গে এগিয়ে যাই। আমি নির্বাচিত হলে ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পাঁচ বছর টেস্ট খেলব। আসুন গড়ে তুলি সবাই মিলে সবার ঢাকা- একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা।

তাবিথ আউয়াল

গতকাল গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯টি দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন ধানের শীষের প্রার্থী। তার মূল লক্ষ্য অত্যাধুনিক, আদর্শ ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়া।

তাবিথ বলেন, ডেঙ্গু অনেকটাই ম্যানেজেবল এখন। সেটা কিন্তু সিটি করপোরেশন স্ব উদ্যোগে করে নাই। তাদের অবহেলাতেই ডেঙ্গু রোগ বিস্তার পেয়েছে। মেয়র হলে আমি ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি শুরু করব। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম নেয়া হবে। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী অ্যাডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতিরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, ঢাকার উত্তরে যথাযথ সবুজায়ন করা হবে। ভার্টিকেল গার্ডেন প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক সøটার হাউজ’ নির্মাণ করা হবে। যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিং রোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল’ চিকিৎসা সেবা, ‘মোবাইল মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপন, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘বিশেষ নারী সেল’ গঠন এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমার্জেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করা হবে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশু পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করা হবে। ঢাকা সিটিকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলা হবে। ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।

ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, আমি আপনাদের কাছে আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথাগুলো বলার আগে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করুন, সমর্থন করুন, আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনও আপস করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনও করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০ , ১৪ মাঘ ১৪২৬, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪১

নির্বাচনী ইশতেহার আতিক-তাবিথের

অভিন্ন প্রতিশ্রুতি দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর

সচল ঢাকা, আধুনিক ঢাকা গড়তে চান

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

রাজধানীকে আধুনিক রূপে গড়ে তুলতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই প্রার্থী ৩৮ ও ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করলেও অধিকাংশ বিষয়েই একমত তারা। ঢাকাকে সুস্থ, সচল ও আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চান নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ধানের শীষের প্রার্থী আদর্শ, বাসযোগ্য ও অত্যাধুনিক রূপে ঢাকাকে গড়তে চান। ৩০ লাখের অধিক ভোটারের আস্থা পেতে নানা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।

উত্তর সিটিতে লড়তে যাওয়া এই প্রার্থীই মশা, যানজটমুক্ত নিরাপদ সড়ক, খেলার মাঠ, খাল-ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও নগর ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’জনই ভোট প্রার্থনা করেছেন। ঢাকাকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ গড়তে চাওয়া তাবিথ নির্বাচিত হলে নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করবেন না বলে জানিয়েছেন। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতিতে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে চাওয়া আতিকুল নির্বাচিত হলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর অংশ দক্ষিণের তুলনায় আধুনিক। এই সিটিতে ওয়ার্ড সংখ্যা কম হলেও ভোটার বেশি। ২০১৫ সালে উত্তর সিটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। আনিসুল হকের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের উপনির্বাচনে আতিকুল ইসলাম মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। সেবার অবশ্য তাবিথ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এই দুই প্রার্থীই উত্তর সিটির সমস্যা সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই ভোটাররা প্রত্যাশা করছেন, যেই নির্বাচিত হোক ইশতেহার অনুযায়ী দ্রুতই উন্নয়নে নজর দিবেন তারা।

আতিকুল ইসলাম

রোববার গুলশানের লেকশোর হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী ৩৮টি দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন। তার মূল লক্ষ্য ঢাকাকে ‘সুস্থ, সচল ও আধুনিক’ নগরী হিসেবে গড়ে তুলা।

সুস্থ ঢাকা : ইশতেহারে আতিকুল প্রথমত গুরুত্ব দিয়েছেন সুস্থ ঢাকা গড়ে তোলার ওপর। তিনি বলেন, আমাদের এই নগরী কোটি মানুষের আশ্রয়স্থল। এই শহরে নাগরিকদের সুস্থতা নির্ভর করে শহরের সুস্থতার ওপর। একটি সুস্থ ঢাকা নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জরুরি, যা বাস্তবায়িত হলে ঢাকাবাসী আবারও গর্বের সঙ্গে বলতে পারবে- ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম সুস্থ শহর। একটি সুস্থ ঢাকা গড়ার জন্য আমার প্রতিশ্রুতি হল- মশা নিধন করার জন্য কোটি মানুষের এই নগরে উন্নত বিশ্বের মতো ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) পদ্ধতিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পার্শ্ববর্তী সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ (আরআরএফ) স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ ও সেগুলোকে জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তরের ব্যবস্থা করব। এছাড়া আধুনিক পশু জবাইখানা কেন্দ্র, এলাকাভিত্তিক পাড়া উৎসব, উত্তর সিটির প্রতিটি স্থাপনায় মাতৃদুগ্ধ কক্ষ নির্মাণ, বস্তিবাসীর জন্য আবাসন ব্যবস্থাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষভাবে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ-শিশুনির্বিশেষে সবার জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ, প্রতিটি এলাকার জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করা, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমানো, ওয়ার্ডভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে ওয়ার্ড কমপ্লেক্স তৈরি এবং মিরপুরে উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষ্য প্রাণী ক্লিনিক নির্মাণ করবেন আতিকুল।

সচল ঢাকা : সচল ঢাকা গড়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইশতেহারে আতিকুল বলেন, ঢাকা শহরের বাসিন্দারা তাদের পাড়া-মহল্লাসহ সব রাস্তাঘাটে চলতে গেলেই নানারকম বাধার সম্মুখীন হন। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিত ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং, সাইকেল ও মোটরসাইকেল লেন, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকায় নগরবাসীর অবাধ চলাচল ব্যাহত হয়। তাই ঢাকাকে একটি সচল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করেছি। সচল ঢাকা তৈরি করতে ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করব। এছাড়া হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের ঢাকা বাস রুট রেশনালাইজেশনের কাজ বাস্তবায়ন করব। পাশাপাশি নিরাপদে সড়ক পারাপারে পথচারীদের জন্য বিভিন্ন জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল সিগন্যাল বাটন স্থাপন, প্রয়োজন অনুযায়ী অধিকাংশ স্থানে এস্কেলেটরসহ পথচারী সেতু নির্মাণ, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু, সাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করব। এছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য স্থাপনা ও গণপরিবহন তৈরি, প্রতিটি মহল্লায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সেন্সরের মাধ্যমে জলাবদ্ধতার স্থান চিহ্নিত করে তা সমাধানের ব্যবস্থা এবং নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

আধুনিক ঢাকা : আধুনিক ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের রাজধানীগুলোর মতো ঢাকার আধুনিকায়ন না হলে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারব না। কাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বর্তমান সময়ে শুধু প্রয়োজনীয়ই নয়, অপরিহার্য। ঢাকা আধুনিকায়ন হলে নগরীর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। স্বপ্নের আধুনিক ঢাকা নির্মাণের মধ্যে রয়েছে- ঢাকাকে আধুনিক করতে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপ ব্যবহার করে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ, সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে মেয়রের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ। এছাড়া বায়ুদূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে গৃহকর দেয়ার ব্যবস্থা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ নাগরিক সেবা দেয়া, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ডিএনসিসির কাঁচাবাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়নের জন্য কাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করা হবে।

ভোট প্রার্থনা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়, স্বপ্নের ঢাকা বাস্তব করতে চলুন একসঙ্গে এগিয়ে যাই। আমি নির্বাচিত হলে ৯ মাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পাঁচ বছর টেস্ট খেলব। আসুন গড়ে তুলি সবাই মিলে সবার ঢাকা- একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা।

তাবিথ আউয়াল

গতকাল গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯টি দফা দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন ধানের শীষের প্রার্থী। তার মূল লক্ষ্য অত্যাধুনিক, আদর্শ ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়া।

তাবিথ বলেন, ডেঙ্গু অনেকটাই ম্যানেজেবল এখন। সেটা কিন্তু সিটি করপোরেশন স্ব উদ্যোগে করে নাই। তাদের অবহেলাতেই ডেঙ্গু রোগ বিস্তার পেয়েছে। মেয়র হলে আমি ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি শুরু করব। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম নেয়া হবে। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী অ্যাডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতিরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে রাসায়নিক কারখানাগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, ঢাকার উত্তরে যথাযথ সবুজায়ন করা হবে। ভার্টিকেল গার্ডেন প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক সøটার হাউজ’ নির্মাণ করা হবে। যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে। ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিং রোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ‘রিমোট ও ভার্চুয়াল’ চিকিৎসা সেবা, ‘মোবাইল মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপন, নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ‘বিশেষ নারী সেল’ গঠন এবং নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমার্জেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করা হবে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশু পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করা হবে। ঢাকা সিটিকে ‘ইন্টেলিজেন্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলা হবে। ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।

ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, আমি আপনাদের কাছে আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথাগুলো বলার আগে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করুন, সমর্থন করুন, আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনও আপস করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনও করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।