৫ স্থানে পুলিশের ওপর হামলা দুই জঙ্গি গ্রেফতার

গত বছর রাজধানীর গুলিস্তান, সাইন্সল্যাব, মালিবাগ, পল্টন ও খামারবাড়িতে পুলিশের ওপর চালানো হামলার সঙ্গে জড়িত আরও দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা হলো- জামাল উদ্দিন রফিক ও আনোয়ার হোসেন। গত রোববার রাতে রাজধানীর শনির আখড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, যেহেতু জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পুলিশের তৎপরতা বেশি, তাই আতঙ্ক তৈরি করতে ও প্রচার পেতে পুলিশের ওপর টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি’র প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। গত বছর বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথক এই হামলায় জড়িত থাকায় এর আগে চারজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। তারা হলো- ফরিদ উদ্দিন রুমি, আবদুল্লাহ আজমীর, মেহেদি হাসান তামিম ও মিশুক খান।

মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছরে পুলিশের ওপর আচমকা যে হামলাগুলো হয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ ছিল আতঙ্ক তৈরি করা ও প্রচার পাওয়া। যদিও হামলাগুলো ছিল প্রতীকী। পুলিশের ওপর হামলা করলে প্রচারটা বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলা করলে জনমনে ভয়-ভীতিটা বেশি সৃষ্টি হবে। কারণ পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দেবে। সেখানে পুলিশেই যদি অরক্ষিত হয় তাহলে জনগণকে কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। এই জায়গায় তারা পুলিশের ওপর হামলার টার্গেট করেছিল। তাছাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পরে পুলিশের যে সক্ষমতা বেড়েছে, জঙ্গিদের যে নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠেছিল তা বিপর্যস্ত-দুর্বল করে দেয়ার কাজটি পুলিশই করেছিল।

সেজন্য তারা পুলিশকেই টার্গেট করেছে। আর প্রত্যেকটি হামলার মূলপরিকল্পনাকারী ছিল গ্রেফতারকৃত রফিক। সে নিজে চারটি হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। আর আনোয়ার সবগুলোতে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে এবং একটিতে সরাসরি অংশ নেয়। এসব ঘটনায় এর আগে দুই দফায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে এবং তদন্তে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে রফিকের নাম উঠে আসে। আর সহযোগী হিসেবে আনোয়ারের নাম আসে। রফিক ও আনোয়ার কালো পোশাক পরে খেলনা অস্ত্র, সুইসাইডাল ভেস্ট পরে বিভিন্ন উগ্রবাদী কথাবার্তা সম্বলিত একটি ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে প্রচার করেছিল।

ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চারজনের মধ্যে ফরিদ উদ্দিন রুমি, আবদুল্লাহ আজমীরের সঙ্গে গ্রেফতার রফিক ও আনোয়ার অংশ নিয়েছিল। ওই ভিডিও ক্লিপে অংশ নেয়া এই দু’জনসহ সবাই গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়াসহ তাদের উগ্রবাদী সংগঠনের সক্ষমতা ও রিক্রুটমেন্ট ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে অনলাইনে ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেছিল তারা। সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার জামাল উদ্দিন রফিক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের কাজ করত। সেখান থেকে অর্জিত আয়ে ছোট সেল গঠন করে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের রসদ সংগ্রহে ব্যয় করে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তক্কা মোড়ে রফিকের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান, বোমাসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য, লিকুইড জব্দ করা হয়েছিল। এসব কিনতে অর্থের সংস্থান মূলত রফিকের। ফরিদ উদ্দিন রুমি রফিকের ভাই। রফিক কুয়েটে পড়াশোনার সময় প্রথমে আনসার আল ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করে। পরে প্রকৃত জেহাদি মনে করে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। এরপর সে তার ভাই রুমিকেও প্রভাবিত করে জঙ্গিবাদে জড়ায়। এর আগে যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে তারাও রফিকের সার্কেলের ইঞ্জিনিয়ার। সংঘবদ্ধভাবে এ কাজ করে আসছিল তারা।

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ , ৭ মাঘ ১৪২৬, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১

৫ স্থানে পুলিশের ওপর হামলা দুই জঙ্গি গ্রেফতার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

গত বছর রাজধানীর গুলিস্তান, সাইন্সল্যাব, মালিবাগ, পল্টন ও খামারবাড়িতে পুলিশের ওপর চালানো হামলার সঙ্গে জড়িত আরও দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা হলো- জামাল উদ্দিন রফিক ও আনোয়ার হোসেন। গত রোববার রাতে রাজধানীর শনির আখড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, যেহেতু জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে পুলিশের তৎপরতা বেশি, তাই আতঙ্ক তৈরি করতে ও প্রচার পেতে পুলিশের ওপর টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করেছে জঙ্গিরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি’র প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। গত বছর বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথক এই হামলায় জড়িত থাকায় এর আগে চারজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। তারা হলো- ফরিদ উদ্দিন রুমি, আবদুল্লাহ আজমীর, মেহেদি হাসান তামিম ও মিশুক খান।

মো. মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছরে পুলিশের ওপর আচমকা যে হামলাগুলো হয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ ছিল আতঙ্ক তৈরি করা ও প্রচার পাওয়া। যদিও হামলাগুলো ছিল প্রতীকী। পুলিশের ওপর হামলা করলে প্রচারটা বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলা করলে জনমনে ভয়-ভীতিটা বেশি সৃষ্টি হবে। কারণ পুলিশ জনগণকে নিরাপত্তা দেবে। সেখানে পুলিশেই যদি অরক্ষিত হয় তাহলে জনগণকে কীভাবে নিরাপত্তা দেবে। এই জায়গায় তারা পুলিশের ওপর হামলার টার্গেট করেছিল। তাছাড়া গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পরে পুলিশের যে সক্ষমতা বেড়েছে, জঙ্গিদের যে নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠেছিল তা বিপর্যস্ত-দুর্বল করে দেয়ার কাজটি পুলিশই করেছিল।

সেজন্য তারা পুলিশকেই টার্গেট করেছে। আর প্রত্যেকটি হামলার মূলপরিকল্পনাকারী ছিল গ্রেফতারকৃত রফিক। সে নিজে চারটি হামলায় সরাসরি অংশ নেয়। আর আনোয়ার সবগুলোতে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করে এবং একটিতে সরাসরি অংশ নেয়। এসব ঘটনায় এর আগে দুই দফায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে এবং তদন্তে হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে রফিকের নাম উঠে আসে। আর সহযোগী হিসেবে আনোয়ারের নাম আসে। রফিক ও আনোয়ার কালো পোশাক পরে খেলনা অস্ত্র, সুইসাইডাল ভেস্ট পরে বিভিন্ন উগ্রবাদী কথাবার্তা সম্বলিত একটি ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে প্রচার করেছিল।

ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চারজনের মধ্যে ফরিদ উদ্দিন রুমি, আবদুল্লাহ আজমীরের সঙ্গে গ্রেফতার রফিক ও আনোয়ার অংশ নিয়েছিল। ওই ভিডিও ক্লিপে অংশ নেয়া এই দু’জনসহ সবাই গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়াসহ তাদের উগ্রবাদী সংগঠনের সক্ষমতা ও রিক্রুটমেন্ট ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে অনলাইনে ভিডিও ক্লিপ প্রচার করেছিল তারা। সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতার জামাল উদ্দিন রফিক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। চাকরির পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের কাজ করত। সেখান থেকে অর্জিত আয়ে ছোট সেল গঠন করে জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের রসদ সংগ্রহে ব্যয় করে। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তক্কা মোড়ে রফিকের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান, বোমাসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য, লিকুইড জব্দ করা হয়েছিল। এসব কিনতে অর্থের সংস্থান মূলত রফিকের। ফরিদ উদ্দিন রুমি রফিকের ভাই। রফিক কুয়েটে পড়াশোনার সময় প্রথমে আনসার আল ইসলামের পক্ষে লেখালেখি করে। পরে প্রকৃত জেহাদি মনে করে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। এরপর সে তার ভাই রুমিকেও প্রভাবিত করে জঙ্গিবাদে জড়ায়। এর আগে যে দুজন গ্রেফতার হয়েছে তারাও রফিকের সার্কেলের ইঞ্জিনিয়ার। সংঘবদ্ধভাবে এ কাজ করে আসছিল তারা।