নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে : আইসিডিডিআরবি

কোভিড-১৯ বৈশি্বক মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর জন্য দেয়া ঘরে থাকার নির্দেশের (লকডাউনের) কারণে দেশের নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত মহিলারা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি’র গবেষক দল এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট-অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলা ও তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ বৈশি^ক মহামারী এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ দিক থেকে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাসের ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে দেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে এবং মহিলাদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল দুই হাজার ৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোন এক বেলা আহার না করে ছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। মহিলাদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গেছে। মহিলাদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন, তাদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে।

গবেষণা দলের প্রধান ও আইসিডিডিআরবির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ইমিরেটাস বিজ্ঞানী ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব নিরুপণ করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারী-বান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে, খাদ্য সংস্থানের জন্য তারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই গবেষণা মহামারীর ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।’

গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে ‘অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল’ এবং এটি ‘দোহার্টি ইনস্টিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

কোভিড-১৯ এর কারণে

নিম্নআয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন কমেছে : আইসিডিডিআরবি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

কোভিড-১৯ বৈশি্বক মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে দরিদ্র পরিবারগুলো আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর জন্য দেয়া ঘরে থাকার নির্দেশের (লকডাউনের) কারণে দেশের নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো বিশেষত মহিলারা অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

আইসিডিডিআরবি’র গবেষক দল এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট-অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলা ও তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ বৈশি^ক মহামারী এবং এর কারণে আরোপিত ঘরে থাকার নির্দেশের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চের শেষ দিক থেকে মে পর্যন্ত প্রায় দুই মাসের ঘরে থাকার নির্দেশের কারণে দেশের নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থায় থাকা পরিবারগুলোতে অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়েছে এবং মহিলাদের ওপর স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপগঞ্জ, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে চলমান গবেষণা নেটওয়ার্কের আওতায় গবেষক দল দুই হাজার ৪২৪ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক নির্যাতনের ওপর লকডাউনের প্রভাব দেখেছেন।

গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় মাসিক উপার্জন হ্রাস পেয়েছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, ৪৭ শতাংশ পরিবারের আয় আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিচে (১৬০ টাকা অথবা ১.৯০ ইউএস ডলার/প্রতিজন/ প্রতিদিন) চলে গিয়েছিল। অধিকন্তু, পরিবারগুলোর ৭০ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং ১৫ শতাংশ খাদ্য সংকট, অভুক্ত অবস্থায় অথবা কোন এক বেলা আহার না করে ছিলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর লকডাউনের বিশেষ প্রভাব দেখা গেছে। মহিলাদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে এবং ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন তাদের দুশ্চিন্তার প্রবণতা বেড়ে গেছে। মহিলাদের মধ্যে যারা স্বামী ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতেন, তাদের অর্ধেকের বেশি লকডাউনের সময় থেকে তা বেড়েছে।

গবেষণা দলের প্রধান ও আইসিডিডিআরবির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ইমিরেটাস বিজ্ঞানী ডা. জেনা দেরাকসানী হামাদানি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ মহিলাদের এবং তাদের পরিবারের ওপর কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকার নির্দেশাবলীর প্রভাব নিরুপণ করা। এই গবেষণার ফলাফল বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গরিব ও নারী-বান্ধব লকডাউন বা ঘরে থাকার নির্দেশ বাস্তবায়ন করার উপযোগী কার্যক্রম প্রণয়নে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বৃদ্ধি নির্দেশ করে যে, খাদ্য সংস্থানের জন্য তারা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই গবেষণা মহামারীর ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টির বিপর্যয় নির্ণয়ে একটি মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে।’

গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে ‘অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল’ এবং এটি ‘দোহার্টি ইনস্টিটিউট ও মোনাস ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়েছে।