করোনা ও নদীভাঙনের কারণে

পিছিয়ে গেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ

২০২২ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব

করোনাভাইরাস ও নদীভাঙনের কারণে পিছিয়ে গেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালে জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ কোটি টাকা। ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে সেতু বিভাগের সূত্র জানায়।

গতকাল সচিবালয় জুম অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভাশেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে-এমনটাই ঠিক করা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা মহামারী ও অতিরিক্ত বন্যা সেতু কাজে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই আগামী জুনে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় বেশি লাগার জন্য পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসন কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা। তদারকির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

প্রকল্প সূত্র জানায়, নকশায় ত্রুটির কারণে এক দফা জটিলতায় পড়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। সে সময় সেতুটির ২২টি পিলারের নকশা সংশোধন করতে হয়। করোনাভাইরাস ও নদী ভাঙনের কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়েছে। গত ৩১ জুলাই মাওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভেঙে সেতুটির সংরক্ষিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী ডুবে গেছে পদ্মা নদীতে। নদী ভাঙনে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ৬০০ কোটি টাকার মালামাল নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর মাওয়া এলাকায় ১ নাম্বার কনস্ট্রোকশন ইয়ার্ডে থাকা সেতুর রেলওয়ে-রোড গার্ডার ও স্লাব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯২ টি রেলওয়ে স্টিনজার এবং ১২৬টি রোডওয়ে ডেক (স্লাব) ছিল বলে প্রকল্প সূত্র জানায়। যদিও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকায় আগের দিনও জরিপে ভাঙনের কোন পূর্বাভাস মেলেনি। নদীতে তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী লুক্সেমবার্গ থেকে পুনরায় আমদানি করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এতে সেতু নির্মাণে জটিলতা বাড়বে। কংক্রিটের ডেক স্ল্যাব আর ব্যবহার করা যাবে না। তাই নতুন করে ডেক স্ল্যাব নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। আর লোহার যেসব নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ডুবেছে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোন কিছু উদ্ধার করা গেলে তা ব্যবহারোপযোগী আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে। ব্যবহারোপযোগী না হলে সেগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, পদ্মার আকস্মিক এ ভাঙনের জন্য কোন ধরনের প্রস্তুতি না থাকায় ঠিকাদারের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও নির্মাণসামগ্রীর বিমা করা ছিল। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষকেও চুক্তির আলোকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগতে পারে। পদ্মা নদী ভাঙনের পরেও প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যান বসানো যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০ , ৭ মহররম ১৪৪২, ২৭ আগস্ট ২০২০

করোনা ও নদীভাঙনের কারণে

পিছিয়ে গেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ

২০২২ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

করোনাভাইরাস ও নদীভাঙনের কারণে পিছিয়ে গেছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময় শেষ হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালে জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। বর্তমান ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৭৬ কোটি টাকা। ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। নদী শাসনের কাজ ৭৪ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে সেতু বিভাগের সূত্র জানায়।

গতকাল সচিবালয় জুম অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভাশেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ২০২২ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে-এমনটাই ঠিক করা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক করোনা মহামারী ও অতিরিক্ত বন্যা সেতু কাজে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাই আগামী জুনে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় বেশি লাগার জন্য পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসন কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা। তদারকির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।

প্রকল্প সূত্র জানায়, নকশায় ত্রুটির কারণে এক দফা জটিলতায় পড়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। সে সময় সেতুটির ২২টি পিলারের নকশা সংশোধন করতে হয়। করোনাভাইরাস ও নদী ভাঙনের কারণে সেতুটির নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়েছে। গত ৩১ জুলাই মাওয়ায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ভেঙে সেতুটির সংরক্ষিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী ডুবে গেছে পদ্মা নদীতে। নদী ভাঙনে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ৬০০ কোটি টাকার মালামাল নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর মাওয়া এলাকায় ১ নাম্বার কনস্ট্রোকশন ইয়ার্ডে থাকা সেতুর রেলওয়ে-রোড গার্ডার ও স্লাব নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯২ টি রেলওয়ে স্টিনজার এবং ১২৬টি রোডওয়ে ডেক (স্লাব) ছিল বলে প্রকল্প সূত্র জানায়। যদিও কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড এলাকায় আগের দিনও জরিপে ভাঙনের কোন পূর্বাভাস মেলেনি। নদীতে তলিয়ে যাওয়া বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও নির্মাণসামগ্রী লুক্সেমবার্গ থেকে পুনরায় আমদানি করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এতে সেতু নির্মাণে জটিলতা বাড়বে। কংক্রিটের ডেক স্ল্যাব আর ব্যবহার করা যাবে না। তাই নতুন করে ডেক স্ল্যাব নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। আর লোহার যেসব নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ডুবেছে সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোন কিছু উদ্ধার করা গেলে তা ব্যবহারোপযোগী আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে। ব্যবহারোপযোগী না হলে সেগুলো নতুন করে আমদানি করতে হবে। এ বিষয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, পদ্মার আকস্মিক এ ভাঙনের জন্য কোন ধরনের প্রস্তুতি না থাকায় ঠিকাদারের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও নির্মাণসামগ্রীর বিমা করা ছিল। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিমা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া সেতু কর্তৃপক্ষকেও চুক্তির আলোকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগতে পারে। পদ্মা নদী ভাঙনের পরেও প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে স্প্যান বসানো যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে।