বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ

দেশের এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন

বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। আর অর্ধেকের বেশি প্রবীণ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। প্রবীণদের অপুষ্টির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিষন্নতা, মুখ ও দাঁতের খারাপ অবস্থা, খাদ্য পরিহারের অভ্যাস ও অসংক্রমণ রোগের উপস্থিতিসহ নানা কারণে তারা অপুষ্টিতে ভুগছেন।

আজ ১ অক্টোবর। বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এ দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ পরিচালিত বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণসমূহ, গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাত-ব্যথার ব্যাপকতা এবং নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা এই তিনটি গবেষণার ফলাফল গতকাল প্রকাশ করেছে।

প্রধান গবেষক ডা. কে এম তৌহিদুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের গবেষণায় বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণসমূহ উল্লেখ করে বলা হয়, সারা বিশ্বেই অনান্যের তুলনায় প্রবীণদের বয়স মধ্যে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা আনুমানিক ১ দশমিক ৫ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে সংখ্যাটি ৩ দশমিক ৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ১২৫ জন প্রবীণকে নিয়ে এই গবেষণা সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং অর্ধেকেরও বেশি পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরুষের ২২ শতাংশ তুলনায় নারীদের ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি।

জীবনসঙ্গীবিহীন (বিধবা, বিপতœীক, অবিবাহিত) প্রবীণদের মাঝে অপুষ্টির হার ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও পুষ্টিহীনতার ঝুঁকির হার ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রবীণদের অপুষ্টির জন্য চিহ্নিত প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে- বিষন্নতা, মুখ ও দাঁতের খারাপ স্বাস্থ্য, বিশেষ খাদ্য পরিহারের অভ্যাস এবং অসংক্রামক রোগের উপস্থিতি। বিষন্নতায় ভোগা প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় বিষন্নতায় ভোগা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা ১৫ দশমিক ছয়গুণ বেশি। যেসব প্রবীণদের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ, তাদের প্রায় এক তৃতীংাংশ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

মুখ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য থাকা প্রবীণদের তুলনায় মুখ ও দাঁতের খারাপ স্বাস্থ্যযুক্ত প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভবনা ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, এবং ডিম জাতীয় খাবার পরিহার করা প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি এবং পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি, দুটোই বেশি। স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতপ্রস্ত প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। গবেষণায় সুপারিশসমূহ হলো প্রবীণদের অপুষ্টি দূর করতে পুষ্টিবিষয়ক সুনিদিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা, যেখানে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রবীণদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে তাদের মানসিক ও মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জোর দিতে হবে। প্রবীণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে তাদের সঠিক খাদ্যাভাস নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান গবেষক ডা. মঈনুল হাসান বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাত-ব্যথার ব্যাপকতা সম্পর্কে বলেছেন, প্রবীণদের জন্য বাত ব্যথা একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু প্রবীণদের বেলায় এর ব্যাপকতা বিষয় তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাত-ব্যথার ব্যাপকতা নির্ণয়ের পাশাপাশি যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা ৩৮০ জন প্রবীণকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ৫২ শতাংশ প্রবীণ বাতÑব্যথায় ভুগছেন, যাদের অর্ধেকেরও বেশি মাঝারি মাত্রায় শারীরিকভাবে অক্ষম। পুরুষদের (৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ) মধ্যে সমস্যাটি বেশি পাওয়া গেছে। বাত-ব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে কোমর ব্যথা (৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং হাঁটুতে ব্যথা (৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ) সমস্যা বেশি দেখা গেছে। বাত-ব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং ফ্রোজেন শোল্ডারে ভোগার হার হলো যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিনের গবেষক টিম পরিচালিত নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবন সীমিত ও নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিক সেবা দেয়ার একটি সার্বিক প্রচেষ্টা ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ বা প্রশমন সেবা। এটি গুরুতর বা নিরাময় অযোগ্য অসুস্থ রোগীদের জন্যে এক ধরনের বিশেষ সেবা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ নিরাময় অযোগ্য বা দীর্ঘ মেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার দরকার।

২০০৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, হোমকেয়ার এবং কমিউনিটিভিত্তিক তিন ধরনের প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে আসছে।

২০০৮ থেকে হোম সেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার দল ডাক্তার এবং নার্সদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নিরাময় অযোগ্য রোগীদের বাড়িতে গিয়ে হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে থাকে। এই গবেষণাটি মিক্সড মেথড পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়েছে। ১০৪ জন রোগীর মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা করে এবং ২৪ জন প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমের সদস্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সেবা পরিচর্যাকারীদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এটা সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, রোগীদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। ৮৭ শতাংশ রোগী মহিলা। ৮৩ শতাংশ রোগী বিবাহিত। ৬৬ শতাংশ রোগী গৃহিনী/গৃহকর্তা। ৫২ শতাংশ রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ নিজের এবং বন্ধুদের ও পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে অর্থায়ন করা হয়।

রোগীদের রোগের ধরন এবং আনুসঙ্গিক বিষয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ এরও বেশি ক্যান্সার রোগী। ৬২ শতাংশ রোগী ডাক্তার বা হাসপাতাল দ্বারা রেফার হয়ে হোম কেয়ারের জন্যে এসেছেন। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে লিম্ফিডিমা কেয়ার প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ রোগীরই প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা। রোগীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তার লক্ষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

১৮ শতাংশ রোগী মনোসামাজিক এবং আধ্যাত্মিক সেবা পেয়েছেন। সেবার মান ও সেবা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব সেবাদানকারী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক যতেœর পাশাপাশি শারীরিক বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কর্মীরা সবাই নিজ নিজ কাজের প্রতি খুবই অনুপ্রাণিত।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার, ০১ অক্টোবর ২০২১ , ১৬ আশ্বিন ১৪২৮ ২২ সফর ১৪৪৩

বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ

দেশের এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন

বাকী বিল্লাহ

image

বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। আর অর্ধেকের বেশি প্রবীণ পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। প্রবীণদের অপুষ্টির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিষন্নতা, মুখ ও দাঁতের খারাপ অবস্থা, খাদ্য পরিহারের অভ্যাস ও অসংক্রমণ রোগের উপস্থিতিসহ নানা কারণে তারা অপুষ্টিতে ভুগছেন।

আজ ১ অক্টোবর। বিশ্ব প্রবীণ দিবস। এ দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ পরিচালিত বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণসমূহ, গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাত-ব্যথার ব্যাপকতা এবং নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা এই তিনটি গবেষণার ফলাফল গতকাল প্রকাশ করেছে।

প্রধান গবেষক ডা. কে এম তৌহিদুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামানের গবেষণায় বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণসমূহ উল্লেখ করে বলা হয়, সারা বিশ্বেই অনান্যের তুলনায় প্রবীণদের বয়স মধ্যে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা আনুমানিক ১ দশমিক ৫ কোটি। ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালে সংখ্যাটি ৩ দশমিক ৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ১২৫ জন প্রবীণকে নিয়ে এই গবেষণা সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা যায়, বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং অর্ধেকেরও বেশি পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরুষের ২২ শতাংশ তুলনায় নারীদের ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি।

জীবনসঙ্গীবিহীন (বিধবা, বিপতœীক, অবিবাহিত) প্রবীণদের মাঝে অপুষ্টির হার ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও পুষ্টিহীনতার ঝুঁকির হার ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রবীণদের অপুষ্টির জন্য চিহ্নিত প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে- বিষন্নতা, মুখ ও দাঁতের খারাপ স্বাস্থ্য, বিশেষ খাদ্য পরিহারের অভ্যাস এবং অসংক্রামক রোগের উপস্থিতি। বিষন্নতায় ভোগা প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় বিষন্নতায় ভোগা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা ১৫ দশমিক ছয়গুণ বেশি। যেসব প্রবীণদের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ, তাদের প্রায় এক তৃতীংাংশ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

মুখ ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য থাকা প্রবীণদের তুলনায় মুখ ও দাঁতের খারাপ স্বাস্থ্যযুক্ত প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভবনা ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, এবং ডিম জাতীয় খাবার পরিহার করা প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি এবং পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি, দুটোই বেশি। স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতপ্রস্ত প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। গবেষণায় সুপারিশসমূহ হলো প্রবীণদের অপুষ্টি দূর করতে পুষ্টিবিষয়ক সুনিদিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা, যেখানে নারীদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রবীণদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে তাদের মানসিক ও মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জোর দিতে হবে। প্রবীণদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে তাদের সঠিক খাদ্যাভাস নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধান গবেষক ডা. মঈনুল হাসান বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাত-ব্যথার ব্যাপকতা সম্পর্কে বলেছেন, প্রবীণদের জন্য বাত ব্যথা একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু প্রবীণদের বেলায় এর ব্যাপকতা বিষয় তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। প্রবীণদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বাত-ব্যথার ব্যাপকতা নির্ণয়ের পাশাপাশি যথোপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা ৩৮০ জন প্রবীণকে নিয়ে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ৫২ শতাংশ প্রবীণ বাতÑব্যথায় ভুগছেন, যাদের অর্ধেকেরও বেশি মাঝারি মাত্রায় শারীরিকভাবে অক্ষম। পুরুষদের (৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ) মধ্যে সমস্যাটি বেশি পাওয়া গেছে। বাত-ব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে কোমর ব্যথা (৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ) এবং হাঁটুতে ব্যথা (৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ) সমস্যা বেশি দেখা গেছে। বাত-ব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং ফ্রোজেন শোল্ডারে ভোগার হার হলো যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিনের গবেষক টিম পরিচালিত নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবন সীমিত ও নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিক সেবা দেয়ার একটি সার্বিক প্রচেষ্টা ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ বা প্রশমন সেবা। এটি গুরুতর বা নিরাময় অযোগ্য অসুস্থ রোগীদের জন্যে এক ধরনের বিশেষ সেবা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ নিরাময় অযোগ্য বা দীর্ঘ মেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার দরকার।

২০০৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, হোমকেয়ার এবং কমিউনিটিভিত্তিক তিন ধরনের প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে আসছে।

২০০৮ থেকে হোম সেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা প্রদান করা হয়। প্যালিয়েটিভ কেয়ার দল ডাক্তার এবং নার্সদের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নিরাময় অযোগ্য রোগীদের বাড়িতে গিয়ে হোম বেইসড প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে থাকে। এই গবেষণাটি মিক্সড মেথড পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয়েছে। ১০৪ জন রোগীর মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা করে এবং ২৪ জন প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমের সদস্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, চিকিৎসক, নার্স ও রোগীদের সেবা পরিচর্যাকারীদের কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এটা সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, রোগীদের অর্ধেকেরও বেশির বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিল। ৮৭ শতাংশ রোগী মহিলা। ৮৩ শতাংশ রোগী বিবাহিত। ৬৬ শতাংশ রোগী গৃহিনী/গৃহকর্তা। ৫২ শতাংশ রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচ নিজের এবং বন্ধুদের ও পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে অর্থায়ন করা হয়।

রোগীদের রোগের ধরন এবং আনুসঙ্গিক বিষয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৬০ শতাংশ এরও বেশি ক্যান্সার রোগী। ৬২ শতাংশ রোগী ডাক্তার বা হাসপাতাল দ্বারা রেফার হয়ে হোম কেয়ারের জন্যে এসেছেন। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে লিম্ফিডিমা কেয়ার প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ রোগীরই প্রধান লক্ষণ ছিল ব্যথা। রোগীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তার লক্ষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

১৮ শতাংশ রোগী মনোসামাজিক এবং আধ্যাত্মিক সেবা পেয়েছেন। সেবার মান ও সেবা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব সেবাদানকারী প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক, মানসিক বা আধ্যাত্মিক যতেœর পাশাপাশি শারীরিক বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কর্মীরা সবাই নিজ নিজ কাজের প্রতি খুবই অনুপ্রাণিত।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।