সৌর হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে মনপুরায়

ভোলা জেলার প্রত্যন্ত চর মনপুরায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রাষ্ট্রায়ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) তিন মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সৌর হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মনপুরা সোলার পাওয়ার লিমিটেড (ডব্লিউএমএসপিএল) আইপিপিভিত্তিক এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। ওজোপাডিকো এই বিদ্যুৎ কিনে ভর্তুকি দিয়ে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করবে।

কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এতে ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (আইএ) জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্মসচিব নিরোদ চন্দ্র ম-ল সই করেন। এছাড়া বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে সই করেন ওজোপাডিকোর সচিব মো. আলমগীর কবির এবং ডব্লিউএমএসপিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ জ্বালানি হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। মনপুরার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অন্য কেন্দ্রের তুলনায় ছোট হলেও বিভিন্ন দিক দিয়ে এটি ব্যতিক্রমী। এখানে সোলার প্যানেলের সঙ্গে ব্যাটারি এবং ডিজেল জেনারেটর থাকবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায়, ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে তা ১০ শতাংশের বেশি হবে না।

বিদ্যুৎ সচিব আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আরও বিদ্যুৎ পেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহজ হতো। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে ওই এলাকার জনগণ গ্রিডের মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ পাবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মতিউর রোহমান বলেন, মনপুরা থেকে জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। বর্তমানে, ওজোপাডিকো এই দ্বীপে তিনটি সোলার মিনি গ্রিডের মাধ্যমে ২৩০৩ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এছাড়া একটি ১.৬৬ এমভিএ ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে ৮৫৩ জন এবং সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে কিছু গ্রাহক সেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সেখানকার মানুষ সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহকরা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী অন্য সব ব্যবহারকারীর মতো একই দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

‘প্রকল্পের আওতায় ১০ মেগাওয়াট পিক সোলার প্যানেল, ২০ মেগাওয়াট আওয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি স্থাপন করা হবে, যা দেশের কোন আইপিপি প্রকল্পে প্রথম ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যাকআপ হিসেবে দুটি ১.২৫ ডিজেল জেনারেটর থাকবে, যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয় ২০ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। মনপুরা দ্বীপের ২০,৪৮৩ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। ফলে ওই দ্বীপে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান সেলিম আবেদ, স্রেডার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জি. আজহারুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই ২০২২ , ১১ শ্রাবণ ১৪২৯ ২৭ জিলহজ ১৪৪৩

সৌর হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে মনপুরায়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ভোলা জেলার প্রত্যন্ত চর মনপুরায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রাষ্ট্রায়ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) তিন মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সৌর হাইব্রিড বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মনপুরা সোলার পাওয়ার লিমিটেড (ডব্লিউএমএসপিএল) আইপিপিভিত্তিক এই কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। ওজোপাডিকো এই বিদ্যুৎ কিনে ভর্তুকি দিয়ে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করবে।

কেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এতে ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (আইএ) জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে যুগ্মসচিব নিরোদ চন্দ্র ম-ল সই করেন। এছাড়া বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে সই করেন ওজোপাডিকোর সচিব মো. আলমগীর কবির এবং ডব্লিউএমএসপিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বশির আহমেদ।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভবিষ্যৎ জ্বালানি হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। মনপুরার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অন্য কেন্দ্রের তুলনায় ছোট হলেও বিভিন্ন দিক দিয়ে এটি ব্যতিক্রমী। এখানে সোলার প্যানেলের সঙ্গে ব্যাটারি এবং ডিজেল জেনারেটর থাকবে। প্রতিকূল আবহাওয়ায়, ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে তা ১০ শতাংশের বেশি হবে না।

বিদ্যুৎ সচিব আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আরও বিদ্যুৎ পেলে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সহজ হতো। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে ওই এলাকার জনগণ গ্রিডের মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ পাবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মতিউর রোহমান বলেন, মনপুরা থেকে জাতীয় গ্রিডের দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার। বর্তমানে, ওজোপাডিকো এই দ্বীপে তিনটি সোলার মিনি গ্রিডের মাধ্যমে ২৩০৩ জন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এছাড়া একটি ১.৬৬ এমভিএ ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে ৮৫৩ জন এবং সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে কিছু গ্রাহক সেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। তবে এটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সেখানকার মানুষ সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রাহকরা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী অন্য সব ব্যবহারকারীর মতো একই দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন। ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।

‘প্রকল্পের আওতায় ১০ মেগাওয়াট পিক সোলার প্যানেল, ২০ মেগাওয়াট আওয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি স্থাপন করা হবে, যা দেশের কোন আইপিপি প্রকল্পে প্রথম ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যাকআপ হিসেবে দুটি ১.২৫ ডিজেল জেনারেটর থাকবে, যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয় ২০ বছর মেয়াদি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। মনপুরা দ্বীপের ২০,৪৮৩ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। ফলে ওই দ্বীপে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্যদের মাঝে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, ওজোপাডিকোর চেয়ারম্যান সেলিম আবেদ, স্রেডার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জি. আজহারুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।