নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নোটিশ
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় দীপিকা-দীপালি সিনেমা হল ভেঙ্গে নির্মাণাধীন রূপায়ণ-দেলোয়ার টাওয়ারের একটি বহুতল ভবনের ছাদ ধসে একজন শ্রমিক নিহত ও অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় তিন দিনেও মামলা হয়নি। এদিকে নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ ইমারত নির্মাণ কাজ করায় গতকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে ওই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ স্বাক্ষরিত নোটিশটি বিকালে দেলোয়ার থিয়েটার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জেরিন দেলোয়ার হোসেনের বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকার কুমিল্লা টাউন হল মাঠের পশ্চিম পাশে ৬৩ শতাংশ ভূমি এলএ কেস নং- ২৯/১৯৬২-৬৩ মূলে সরকার অধিগ্রহণ করে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওই ভূমিতে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য ১৯৬৩ সালের ১৫ মার্চ মেসার্স দেলোয়ার থিয়েটার অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীকে লিজ দেয়া হয়। লিজের শর্তানুযায়ী সেখানে ১৯৬৭ সালে ‘দীপিকা’ ও ১৯৯৬ সালে ২য় ভবনের ৩য় তলায় চালু করা হয় ‘দিপালী’ নামের আরও একটি সিনেমা হল। কিন্তু ২০১২ সালের ১৫ জুন বন্দোবস্তকৃত সরকারি ওই ভূমিতে ১৮ তলা বিশিষ্ট বহুতল বাণিজ্যিক, আবাসিক ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের জন্য অনুমতি চেয়ে মেসার্স দেলোয়ার থিয়েটার অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার অহিদুর রহমান কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর আদর্শ সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান একই বছরের ১১ জুলাই দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ‘যেহেতু ওই ভূমি সরকার থেকে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তাই বন্দোবস্ত শর্ত মোতাবেক সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক ভবন তৈরির কোন সুযোগ নেই।’ এরপর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বন্দোবস্ত গ্রহীতার পক্ষে রূপায়ন হাউজিং কোম্পানি দীপিকা সিনেমা হল ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। এতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসানের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবন ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দেয়। ওই জেলা প্রশাসকের বদলির পর থেমে থেমে দিনে ও রাতের আঁধারে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ সম্পন্ন করা হয়। রূপায়ন ডেভেলপার কোম্পানিটি পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিকে জমির প্রথম লিজ গ্রহীতা সাবেক পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন মারা গেলে তার ছেলে জাহিদ হোসেন বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে ভবনের দোকান কোঠা অস্থায়ীভাবে বিক্রি শুরু করেন। ভবনটির অনেক দোকান কোঠা অস্থায়ী বিক্রি করা হয় এবং বিভিন্ন মহলকে বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩য় তলার ছাদের একাংশ ধসে পড়লে ছাদের উপরে ও নিচে থাকা কমপক্ষে ২০ শ্রমিক আহত হয়। এদের মধ্যে রেজা আহমেদ নামের এক শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় মামলা হয়নি। অপরদিকে ঘটনার পর গতকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে দেলোয়ার থিয়েটার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে নোটিশ প্রেরণ করা হয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ চলছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ জানান, ওই টাওয়ারের নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ ইমারতের যাবতীয় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ভবনের নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে জানানোসহ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিল্লাল হোসেন জানান, ওই টাওয়ারের ছাদ ধসে হতাহতের ঘটনায় এখনও কেউ মামলা দায়ের করেনি।
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ , ১৫ পৌষ ১৪২৬, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪১
নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নোটিশ
প্রতিনিধি, কুমিল্লা
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় দীপিকা-দীপালি সিনেমা হল ভেঙ্গে নির্মাণাধীন রূপায়ণ-দেলোয়ার টাওয়ারের একটি বহুতল ভবনের ছাদ ধসে একজন শ্রমিক নিহত ও অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় তিন দিনেও মামলা হয়নি। এদিকে নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ ইমারত নির্মাণ কাজ করায় গতকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে ওই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ স্বাক্ষরিত নোটিশটি বিকালে দেলোয়ার থিয়েটার এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জেরিন দেলোয়ার হোসেনের বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকার কুমিল্লা টাউন হল মাঠের পশ্চিম পাশে ৬৩ শতাংশ ভূমি এলএ কেস নং- ২৯/১৯৬২-৬৩ মূলে সরকার অধিগ্রহণ করে। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওই ভূমিতে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য ১৯৬৩ সালের ১৫ মার্চ মেসার্স দেলোয়ার থিয়েটার অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীকে লিজ দেয়া হয়। লিজের শর্তানুযায়ী সেখানে ১৯৬৭ সালে ‘দীপিকা’ ও ১৯৯৬ সালে ২য় ভবনের ৩য় তলায় চালু করা হয় ‘দিপালী’ নামের আরও একটি সিনেমা হল। কিন্তু ২০১২ সালের ১৫ জুন বন্দোবস্তকৃত সরকারি ওই ভূমিতে ১৮ তলা বিশিষ্ট বহুতল বাণিজ্যিক, আবাসিক ও নতুন সিনেমা হল নির্মাণের জন্য অনুমতি চেয়ে মেসার্স দেলোয়ার থিয়েটার অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার অহিদুর রহমান কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর আদর্শ সদর উপজেলার তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান একই বছরের ১১ জুলাই দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ‘যেহেতু ওই ভূমি সরকার থেকে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তাই বন্দোবস্ত শর্ত মোতাবেক সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক ভবন তৈরির কোন সুযোগ নেই।’ এরপর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বন্দোবস্ত গ্রহীতার পক্ষে রূপায়ন হাউজিং কোম্পানি দীপিকা সিনেমা হল ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। এতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল আহসানের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভবন ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দেয়। ওই জেলা প্রশাসকের বদলির পর থেমে থেমে দিনে ও রাতের আঁধারে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙ্গার কাজ সম্পন্ন করা হয়। রূপায়ন ডেভেলপার কোম্পানিটি পরবর্তীতে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে ওই স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিকে জমির প্রথম লিজ গ্রহীতা সাবেক পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন মারা গেলে তার ছেলে জাহিদ হোসেন বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে ভবনের দোকান কোঠা অস্থায়ীভাবে বিক্রি শুরু করেন। ভবনটির অনেক দোকান কোঠা অস্থায়ী বিক্রি করা হয় এবং বিভিন্ন মহলকে বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৩য় তলার ছাদের একাংশ ধসে পড়লে ছাদের উপরে ও নিচে থাকা কমপক্ষে ২০ শ্রমিক আহত হয়। এদের মধ্যে রেজা আহমেদ নামের এক শ্রমিক নিহত হয়। এ ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও থানায় মামলা হয়নি। অপরদিকে ঘটনার পর গতকাল কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে দেলোয়ার থিয়েটার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে নোটিশ প্রেরণ করা হয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই টাওয়ারের নির্মাণ কাজ চলছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শেখ মো. নুরুল্লাহ জানান, ওই টাওয়ারের নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ ইমারতের যাবতীয় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ভবনের নকশা বহির্ভূত ও ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশনকে জানানোসহ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিল্লাল হোসেন জানান, ওই টাওয়ারের ছাদ ধসে হতাহতের ঘটনায় এখনও কেউ মামলা দায়ের করেনি।