জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার অভিনব কৌশলে গাড়ি ছিনতাই

সংঘবদ্ধ গাড়ি ছিনতাই ও চুরি চক্রের সদস্যরা কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার চুরি ও ছিনতাই করছে। তারা অভিনব কৌশলে গাড়ি ছিনতাই করে। গাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে মামলার খরচ চালানো ও জামিন পাওয়ার ব্যবস্থা করে।

এ চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিতে চুরির নানা কাহিনী বর্ণনা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা গাড়ি ছিনতাই ও চোর চক্রের সদস্য। তাদের স্বীকারোক্তি মতে, চুরি করা গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, গত ৪ জুন রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে একটি নিশান...... প্রাইভেটকার চুরি হয়। এ ঘটনায় গাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে হয়ে গত ১৩ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।

টানা ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পিবিআইয়ের টিম গাড়িটি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে দুই চোরকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ মামুনুর রশিদ ও মোজাম্মেল হোসেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোজাম্মেল একাধিক মামলার আসামি। সে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গাড়ি চুরি ও ছিনতাই করাই তার নেশা ও পেশা। চুরির টাকায় সংসার চালানো থেকে মামলার খরচ উঠানো ও আদালত থেকে জামিন নেয়ার টাকায় গাড়ি চুরি করে উদ্ধার করা হয়। এসব কাজের জন্য তাদের একটি সিন্ডিকেট আছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে গাড়ি চুরি ও ছিনতাই করে।

যে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। তা তারা ঘটনার তিন দিন আগেই ভাড়া নিয়েছিল। ভাড়া নেয়ার পর কৌশলে গাড়িটির চাবি নিয়ে তারা পৃথক ডুপ্লিকেট আরেকটি চাবি বানিয়ে নিজেদের কাছে রাখে। এরপর তারা গাড়িটির গতিবিধি খোঁজ-খবর নিতে থাকে। গত ৪ জুন রাতে মালিক বাসার সামনে গাড়িটি রেখে দেয়। এরপর চোরদল তাদের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে গাড়িটি চালু করে চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে এ চক্র আরও একাধিক গাড়ি চুরি করেছে।

এ চক্র এর আগেও একাধিক গাড়ি চুরি করেছে। চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ জন। তারা রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় টার্গেট করে গাড়ি চুরি করে। অনেক সময় গাড়ি চুরি করতে ব্যর্থ হলে টেলিফোনের টাওয়ারের ব্যাটারিসহ অন্য যন্ত্রাংশ চুরি করে বলে স্বীকার করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিসি টিভির ফুটেজের সূত্র ধরে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার ও তাদের তথ্য মতে, কিশোরগঞ্জ থানার মারিয়া ইপিজেড এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তারা আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সংবাদকে গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা গাড়ি চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। সারাদেশে তাদের একাধিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। চক্রের অনেক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের সাপেক্ষে আপাতত নাম বলা যাচ্ছে না। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ চক্র এক জেলা থেকে গাড়ি চুরি করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করে। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে গাড়ি চুরি করে। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রের সদস্যরা গাড়ি চুরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। তাদের মূল উৎপাটনে পিবিআইয়ের টিম কাজ করছেন।

উল্লেখ্য এর আগে সম্প্রতি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা (সিএনজি) চোর দলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে অটোরিকশা ছিনতাই ও চুরি করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করত। এ ঘটনায় ড্রাইভার থেকে অনেকেই জড়িত। তারা পেশার আড়ালে চুরি করত বলে স্বীকার করেছে। তারা ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় চক্রের সদস্যরা নানা বেশে অবস্থান করছে।

শনিবার, ০৯ জুলাই ২০২২ , ২৫ আষাড় ১৪২৮ ২৯ জিলহজ ১৪৪৩

জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার অভিনব কৌশলে গাড়ি ছিনতাই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সংঘবদ্ধ গাড়ি ছিনতাই ও চুরি চক্রের সদস্যরা কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার চুরি ও ছিনতাই করছে। তারা অভিনব কৌশলে গাড়ি ছিনতাই করে। গাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে মামলার খরচ চালানো ও জামিন পাওয়ার ব্যবস্থা করে।

এ চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিতে চুরির নানা কাহিনী বর্ণনা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা গাড়ি ছিনতাই ও চোর চক্রের সদস্য। তাদের স্বীকারোক্তি মতে, চুরি করা গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, গত ৪ জুন রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে একটি নিশান...... প্রাইভেটকার চুরি হয়। এ ঘটনায় গাড়ির মালিক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে হয়ে গত ১৩ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।

টানা ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পিবিআইয়ের টিম গাড়িটি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে দুই চোরকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলোÑ মামুনুর রশিদ ও মোজাম্মেল হোসেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোজাম্মেল একাধিক মামলার আসামি। সে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গাড়ি চুরি ও ছিনতাই করাই তার নেশা ও পেশা। চুরির টাকায় সংসার চালানো থেকে মামলার খরচ উঠানো ও আদালত থেকে জামিন নেয়ার টাকায় গাড়ি চুরি করে উদ্ধার করা হয়। এসব কাজের জন্য তাদের একটি সিন্ডিকেট আছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে গাড়ি চুরি ও ছিনতাই করে।

যে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। তা তারা ঘটনার তিন দিন আগেই ভাড়া নিয়েছিল। ভাড়া নেয়ার পর কৌশলে গাড়িটির চাবি নিয়ে তারা পৃথক ডুপ্লিকেট আরেকটি চাবি বানিয়ে নিজেদের কাছে রাখে। এরপর তারা গাড়িটির গতিবিধি খোঁজ-খবর নিতে থাকে। গত ৪ জুন রাতে মালিক বাসার সামনে গাড়িটি রেখে দেয়। এরপর চোরদল তাদের কাছে থাকা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে গাড়িটি চালু করে চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে এ চক্র আরও একাধিক গাড়ি চুরি করেছে।

এ চক্র এর আগেও একাধিক গাড়ি চুরি করেছে। চক্রের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ জন। তারা রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় টার্গেট করে গাড়ি চুরি করে। অনেক সময় গাড়ি চুরি করতে ব্যর্থ হলে টেলিফোনের টাওয়ারের ব্যাটারিসহ অন্য যন্ত্রাংশ চুরি করে বলে স্বীকার করেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার মতে, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিসি টিভির ফুটেজের সূত্র ধরে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার ও তাদের তথ্য মতে, কিশোরগঞ্জ থানার মারিয়া ইপিজেড এলাকা থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তারা আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সংবাদকে গ্রেপ্তারকৃতরা আন্তঃজেলা গাড়ি চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। সারাদেশে তাদের একাধিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। চক্রের অনেক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের সাপেক্ষে আপাতত নাম বলা যাচ্ছে না। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ চক্র এক জেলা থেকে গাড়ি চুরি করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করে। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে গাড়ি চুরি করে। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রের সদস্যরা গাড়ি চুরিকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। তাদের মূল উৎপাটনে পিবিআইয়ের টিম কাজ করছেন।

উল্লেখ্য এর আগে সম্প্রতি সংঘবদ্ধ অটোরিকশা (সিএনজি) চোর দলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে অটোরিকশা ছিনতাই ও চুরি করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করত। এ ঘটনায় ড্রাইভার থেকে অনেকেই জড়িত। তারা পেশার আড়ালে চুরি করত বলে স্বীকার করেছে। তারা ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় চক্রের সদস্যরা নানা বেশে অবস্থান করছে।